মামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক
Published: 7th, November 2025 GMT
জোহরান মামদানি এই সপ্তাহে নিউইয়র্ক নগরের প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বিজয় ভাষণের বক্তৃতায় তিনি আধুনিক ভারতের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জওহরলাল নেহেরুকে উদ্ধৃত করেছেন। এমনকি বলিউডের জমজমাট একটি গানের তালে তালে মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসীর এই মুসলিম ছেলের বিজয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি শক্তিশালী এক জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। নাইন–ইলেভেনের পর ইসলামভীতির গভীর ক্ষত বহনকারী এই নগরে জোহরানের জয়ের বৃহত্তর এক তাৎপর্য রয়েছে।
জোহরানের সাফল্যের ঢেউ আট হাজার মাইলেরও বেশি দূরে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতের শহরে শহরে অনুভূত হচ্ছে। সেখানে তাঁর উত্থান একই সঙ্গে উদ্যাপিত এবং সমালোচিত হচ্ছে।
ভারতের মুম্বাই শহরের ৪৮ বছর বয়সী গুলফাম খান হুসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে খ্যাতির কেন্দ্র থেকে বঞ্চিত ছিলাম।’
শিল্পী তানিয়া লালওয়ানি বলেন, ‘দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত কেউ এত দূর এসেছেন দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।’
জোহরান মামদানির বিজয় তাঁকে আন্তর্জাতিক স্তরের এমন একদল প্রবাসী নেতার কাতারে দাঁড় করিয়েছে, যাঁরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনীতির বাধা ডিঙিয়েছেন। কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে পৌঁছেছেন; আটলান্টিকের ওপারে ঋষি সুনাক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন আর সাদিক খান লন্ডনের মেয়র হয়েছেন।
অন্যদিকে লিও ভারাদকার আয়ারল্যান্ডের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং হামজা ইউসুফ স্কটল্যান্ডের সরকারের প্রধান হয়েছেন।
তবে জোহরানের নির্বাচন তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের একটি কেন্দ্রীয় নীতিকে আরও জোরালো করেছে। সেটি হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার এবং তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার কট্টর সমালোচনা।
‘উগান্ডা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের মিশ্রণ’
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইনসভার টানা তিনবারের নির্বাচিত সদস্য জোহরান মামদানি যে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছেন (কুইন্সের অংশবিশেষ, যা নিউইয়র্ক নগরের জাতিগত ও ভাষাগতভাবে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় অঞ্চলগুলোর একটি), তিনি নিজেই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিমূর্তি।
জোহরান উগান্ডার একজন অভিবাসী। তাঁর ভারতীয় বাবা-মা ভারতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ-পরবর্তী কেপটাউনে তাঁর শৈশব কাটে, এরপর তাঁর পরিবার নিউইয়র্ক নগরে বসতি স্থাপন করে।
জোহরান কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত পোস্ট-কলোনিয়াল স্টাডিজের অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি ও বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের ছেলে। মীরা নায়ারের ‘মিসিসিপি মাসালা’, ‘দ্য নেমসেক’ এবং ‘মনসুন ওয়েডিং’-এর মতো কাজে প্রবাস, স্থানচ্যুতি এবং পরিচয়ের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার তাঁর বিজয় ভাষণে জোহরান তাঁর এই পরিচয়ের কথা উল্লেখ করেন।
নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এক সমাবেশ মঞ্চে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি এবং তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ব্রুকলিন, নিউইয়র্ক, ৪ নভেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উইয র ক নগর য ক তর
এছাড়াও পড়ুন:
ধনকুবেরদের ৪ কোটি ডলার ব্যয়েও জিততে পারেননি কুমো
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ধনকুবের বিল অ্যাকম্যান এবং নিউইয়র্ক শহরের তিনবারের মেয়র ও ধনকুবের মাইকেল আর. ব্লুমবার্গসহ আরও কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী অ্যান্ড্রু কুমোর পেছনে লাখ লাখ ডলার ব্যয় করেছেন। তবে এরপরও তাঁরা কুমোকে জেতাতে পারেননি; পারেননি জোহরান মামদানিকে হারাতে।
মামদানির বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে বিশাল বিশাল ডিজিটাল বিলবোর্ড ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিজ্ঞাপনে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছিলেন কুমোর তহবিলের জোগানদাতারা। এসব বিজ্ঞাপনের মূল বার্তা ছিল—মামদানি একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী, তিনি ফিলিস্তিনের সমর্থক এবং তুলনামূলকভাবে কম অভিজ্ঞ।
প্রচারের শেষ দিকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনগুলোর ভাষাকে ‘খোলামেলা ঘৃণা’ অভিহিত করেছিলেন মামদানি। কোনো কোনো বিজ্ঞাপনের ভাষা ইসলাম বিষয়ে ঘৃণা (ইসলামোফোবিয়া) ছড়াচ্ছিল। কুমোর পক্ষে তহবিল সংগ্রহকারী ‘ফর আওয়ার সিটি’ নামের প্ল্যাটফর্মের একটি বিজ্ঞাপনে বিধ্বস্ত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে হাস্যোজ্জ্বল মামদানির ছবি ব্যবহার করেছিল।
কুমোর পক্ষের রাজনৈতিক তহবিল কমিটিগুলো (প্যাক) ৪ কোটি ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছিল। অন্যদিকে মামদানির পক্ষের প্যাকগুলো সংগ্রহ করতে পেরেছিল মাত্র ১ কোটি ডলারের মতো অর্থ।
আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে সর্বশেষ হিসাবে কোন প্রার্থী কত ভোট পেলেন২ ঘণ্টা আগেকুমোর পক্ষে যেসব বড় বা সুপার প্যাক অর্থ সংগ্রহ ও প্রচারণা চালিয়েছে ‘ফিক্স দ্য সিটি’ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। মামদানিসহ কুমোর আরেক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে প্ল্যাটফর্মটি ২ কোটি ৯০ লাখের বেশি ডলার ব্যয় করেছে। কিন্তু তাদের এত অর্থ সফলতার মুখ দেখেনি।
নির্বাচনী প্রচারকে কেন্দ্র করে কুমোর দিক থেকে আসা আক্রমণগুলোর জুতসই জবাব দিয়েছেন মামদানি। তিনি ভোটারদের বারবার বলেছেন, এবারের মেয়র নির্বাচন ‘অলিগার্ক বা ধনী শ্রেণি বনাম গণতন্ত্রের’ মধ্যে প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি তিনি ধনীদের ওপর কর বসানোর পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছেন।
আরও পড়ুননিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র কে এই জোহরান মামদানি১১ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক জনসংখ্যার শহরের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি বলেছেন, ধনীরা নিউইয়র্কবাসীর উন্নত জীবনযাত্রার পথে বাধা। ক্ষমতায় এতে তিনি নিউইয়র্কবাসীর সার্বিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।