সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের চেক দিয়ে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা উত্তোলন, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আটক
Published: 24th, September 2025 GMT
বিদেশে পলাতক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নামে ইস্যু করা ১১টি চেক ব্যবহার করে চারটি ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আটক ব্যক্তির নাম জাহাঙ্গীর আলম। আটক ব্যক্তি সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরামিট পিএলসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম)। আজ বুধবার চট্টগ্রামে তাঁকে আটক করা হয়।
দুদকের আইনজীবী মোকাররম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সই করা চেকগুলোর আসল কপিসহ (মুড়ি) জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের মালিকের অনুপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া টাকা উত্তোলনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি শাখা থেকে ১ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ, সোনালী ব্যাংক থেকে ৩৬ লাখ এবং মেঘনা ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তোলা হয়। এর আগে অর্থ পাচার মামলায় দুদকের হাতে গ্রেপ্তার ব্যাংকের দুই কর্মকর্তার আইনি লড়াইয়ের খরচ বহনের জন্য এ টাকা তোলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই দুই কর্মকর্তা হলেন আরামিট পিএলসির দুই এজিএম মো.
গত ২৪ জুলাই সাইফুজ্জামান, তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে এই মামলা করেন। মামলায় জাবেদ, তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামান, ভাই-বোন এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৩১ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার আবদুল আজিজ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তদন্তে অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার পর কর্মকর্তা উৎপল পালের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৭ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া সাইফুজ্জামানের প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ এবং উৎপল পাল দুদকের কাছে অর্থ পাচারের বিষয়টি স্বীকার করেন। তাঁরা জানান, সাইফুজ্জামানের নির্দেশে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে ২৫ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।
তদন্তে জানা গেছে, সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পর সেই টাকা একই ব্যাংকের চারটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করা হয়। পরে এসব টাকা বিদেশে পাচার করা হয়। দুদক বলছে, জালিয়াতি ও আত্মসাতের এই ঘটনা ঘটে ২০১৯-২০ সালে। তখন জাবেদ ভূমিমন্ত্রী ছিলেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর আদালত জাবেদ ও তাঁর স্ত্রীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এরপরও তাঁরা বিদেশে পালিয়ে যান। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, জাবেদের নয়টি দেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, দুবাইতে ২২৮টি, আমেরিকায় ১০টি বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় একাধিক সম্পদ রয়েছে।
দুদকের কর্মকর্তাদের মতে, দেশের ভেতর থেকে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন জাবেদ ও তাঁর পরিবার। এভাবে বহু দেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তাঁরা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
শান্তি আলোচনায় অচলাবস্থার জন্য পাকিস্তানের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আচরণকে দায়ী করল তালেবান সরকার
কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় অচলাবস্থার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে আফগানিস্তানের শাসকগোষ্ঠী তালেবান। তবে তারা জোর দিয়ে বলেছে, সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাত সত্ত্বেও কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া অস্ত্রবিরতি চুক্তি বহাল থাকবে।
সীমান্ত সংঘাত নিয়ে ইস্তাম্বুলে দফায় দফায় শান্তি আলোচনা করছিল পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। গতকাল শুক্রবারও আলোচনা চলছিল। কিন্তু কোনো সমাধান ছাড়াই আলোচনা শেষ হয়। এর কিছুক্ষণ পর তালেবান জানায়, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তে নতুন করে সংঘাত হয়েছে। এতে কয়েকজন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন।
দুই দিনের আলোচনা আন্তরিকতার সঙ্গে হয়েছে দাবি করে আজ শনিবার সকালে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেন, কাবুলের প্রত্যাশা ছিল ‘সমাধানে পৌঁছানোর জন্য বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব উপস্থাপন করবে ইসলামাবাদ।’
মুজাহিদ আরও বলেন, ‘আলোচনার সময় পাকিস্তানি পক্ষ নিজেদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত সব দায়দায়িত্ব আফগান সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অথচ একই সঙ্গে তারা আফগানিস্তান কিংবা নিজেদের নিরাপত্তা, কোনোটিরই দায়দায়িত্ব নিতে আগ্রহ দেখায়নি।’
মুজাহিদ অভিযোগ করেন, পাকিস্তান আলোচনায় ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অসহযোগিতামূলক মনোভাব’ দেখিয়েছে। এর ফলে আলোচনায় ‘কোনো ফলাফল আসেনি।’
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেন, তালেবান অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করেনি এবং তা আগের মতোই বহাল থাকবে।
পাকিস্তান সরকার মুজাহিদের এই বক্তব্য নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
তবে আলোচনায় স্থবিরতার কথা গতকালই নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ জানায়, শান্তি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি না হলেও কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া অস্ত্রবিরতি চুক্তি বহাল থাকবে।
গতকাল পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তান আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপকে সমর্থন করবে না, যা আফগান জনগণ বা প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে।
পাকিস্তানের দাবি, আফগান তালেবান ২০২১ সালের দোহা শান্তিচুক্তি অনুযায়ী ‘সন্ত্রাসবাদ’ রোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ অক্টোবর শুরু হওয়া সংঘর্ষে আফগানিস্তান সীমান্তে এ পর্যন্ত ৫০ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কাবুলে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন। ওই বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে আফগানিস্তান।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বলেছে, সংঘর্ষে তাদের ২৩ সেনা নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন। তবে বেসামরিক লোকজনের হতাহত হওয়ার কোনো তথ্য তারা উল্লেখ করেনি।
আরও পড়ুননতুন সংঘাতের পর পাকিস্তান–আফগানিস্তানের মধ্যে আলোচনায় আবারও অচলাবস্থা৮ ঘণ্টা আগে