বিদেশে পলাতক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নামে ইস্যু করা ১১টি চেক ব্যবহার করে চারটি ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আটক ব্যক্তির নাম জাহাঙ্গীর আলম। আটক ব্যক্তি সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরামিট পিএলসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম)। আজ বুধবার চট্টগ্রামে তাঁকে আটক করা হয়।

দুদকের আইনজীবী মোকাররম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সই করা চেকগুলোর আসল কপিসহ (মুড়ি) জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের মালিকের অনুপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া টাকা উত্তোলনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি শাখা থেকে ১ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ, সোনালী ব্যাংক থেকে ৩৬ লাখ এবং মেঘনা ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তোলা হয়। এর আগে অর্থ পাচার মামলায় দুদকের হাতে গ্রেপ্তার ব্যাংকের দুই কর্মকর্তার আইনি লড়াইয়ের খরচ বহনের জন্য এ টাকা তোলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই দুই কর্মকর্তা হলেন আরামিট পিএলসির দুই এজিএম মো.

আবদুল আজিজ ও উৎপল পাল। ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থ পাচারের মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে দুদক মনে করছে, নতুন করে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা উত্তোলনের সঙ্গেও আত্মসাৎ বা পাচারের যোগসূত্র রয়েছে।

গত ২৪ জুলাই সাইফুজ্জামান, তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে এই মামলা করেন। মামলায় জাবেদ, তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামান, ভাই-বোন এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৩১ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার আবদুল আজিজ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তদন্তে অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার পর কর্মকর্তা উৎপল পালের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১৭ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া সাইফুজ্জামানের প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ এবং উৎপল পাল দুদকের কাছে অর্থ পাচারের বিষয়টি স্বীকার করেন। তাঁরা জানান, সাইফুজ্জামানের নির্দেশে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে ২৫ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।

তদন্তে জানা গেছে, সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পর সেই টাকা একই ব্যাংকের চারটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করা হয়। পরে এসব টাকা বিদেশে পাচার করা হয়। দুদক বলছে, জালিয়াতি ও আত্মসাতের এই ঘটনা ঘটে ২০১৯-২০ সালে। তখন জাবেদ ভূমিমন্ত্রী ছিলেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর আদালত জাবেদ ও তাঁর স্ত্রীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এরপরও তাঁরা বিদেশে পালিয়ে যান। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, জাবেদের নয়টি দেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, দুবাইতে ২২৮টি, আমেরিকায় ১০টি বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় একাধিক সম্পদ রয়েছে।

দুদকের কর্মকর্তাদের মতে, দেশের ভেতর থেকে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন জাবেদ ও তাঁর পরিবার। এভাবে বহু দেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তাঁরা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা

বরিশাল সিটি করপোরেশনের হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ায় তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার রুলসহ আদেশ দেন।

‘উচ্ছেদ–আতঙ্কে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা’ শিরোনামে ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উৎপল বিশ্বাস, সৌমিত্র সরদার, বিপ্লব কুমার পোদ্দার ও হিন্দোল নন্দী সোমবার রিটটি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিভাস চন্দ্র বিশ্বাস, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী অনুপ কুমার সাহা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জামিলা মমতাজ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

অন্যতম রিট আবেদনকারী উৎপল বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের কলোনি থেকে উচ্ছেদ করা থেকে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চার আইনজীবী রিটটি করেন। ১৭০ বছর ধরে তাঁরা ওখানে আছে। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দিয়ে উচ্ছেদপ্রক্রিয়ায় তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছেন। ফলে যে যেভাবে আছে, সেভাবে থাকবে, অর্থাৎ আপাতত তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না। হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ঘোষণা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।’

 প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্ছেদ-আতঙ্কে আছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের হরিজন সম্প্রদায়ের (সুইপার) একটি কলোনির বাসিন্দারা। নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাঠপট্টি এলাকার ওই কলোনিতে ৩৯টি সংখ্যালঘু হরিজন পরিবার বসবাস করে। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে, আগামী দুর্গাপূজার পর তাদের এই কলোনি ছেড়ে দিতে হবে। এতে উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন এই কলোনির বাসিন্দারা।

এই উচ্ছেদপ্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে নগর ভবনে গিয়ে কলোনির বাসিন্দারা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাসিন্দাদের দাবি শতাধিক বছর ধরে তাঁরা নগরের কাঠপট্টি এলাকার এই কলোনিতে বসবাস করে নগরের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের দায়িত্ব পালন করছেন। এত বছরেও তাঁদের উচ্ছেদের চেষ্টা হয়নি। কিন্তু হঠাৎ তাঁদের নতুন জায়গায় যেতে বলা হয়েছে, যা তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বরিশালে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা
  • সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের অর্থপাচার: ২ সহযোগীর আদালতে জবানবন্দি