শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ নিরসন করুন
Published: 26th, September 2025 GMT
পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ছাড়াই ব্যক্তিবিশেষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে গেলে কত ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে, ঢাকার বড় সাতটি কলেজ তার ধ্রুপদি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলন ও অসহনীয় নাগরিক ভোগান্তির পর কলেজগুলো একীভূত করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয় করতে অধ্যাদেশের খসড়াও বুধবার প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নেওয়ায় নতুন সংকট তৈরি হয়েছে।
প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল অব সায়েন্স, স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ এবং স্কুল অব বিজনেসের আওতায় বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। পড়ানো হবে হাইব্রিড পদ্ধতিতে। সাত কলেজের ক্যাম্পাস ও অবকাঠামো স্থায়ীভাবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত) ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে মানববন্ধন করেন সাত কলেজের শিক্ষকেরা। তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ কমবে, শিক্ষকদের পদ–পদবি নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হবে। উচ্চমাধ্যমিক ও নারীশিক্ষার সংকোচন হবে এবং কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হবে। অধ্যাদেশ জারির পরও তাঁরা নিজ নিজ কলেজে মানববন্ধন করেছেন।
অন্যদিকে কলেজগুলোর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আগে থেকেই আন্দোলন করে আসছেন। সাতটির মধ্যে যে পাঁচটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়ানো হয়, সেই শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চমাধ্যমিক স্তর অস্তিত্ব–সংকটে পড়বে।
‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’–এর মতো শিক্ষক, স্নাতক শিক্ষার্থী ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী—এই তিন পক্ষের ভিন্ন অবস্থানের কারণে সাত কলেজ নিয়ে যে নতুন অচলাবস্থা সৃষ্টির শঙ্কা দেখা যাচ্ছে, সেটা বলাই বাহুল্য। এমনিতেই অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা বাসযোগ্যতার দিক থেকে বিশ্বে তলানিতে থাকা একটি নগর। ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার পর থেকে নানা সময়ে এক লাখের বেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে নগরবাসীও সীমাহীন দুর্ভোগ ভোগ করে এসেছেন। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে নতুন করে জনদুর্ভোগ তৈরি হোক, সেটা কেউই প্রত্যাশা করেন না।
সাত কলেজকে একীভূত করে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু প্রস্তাবিত কাঠামোয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে চাহিদার বিপরীতে উচ্চশিক্ষায় পড়াশোনার সুযোগ এমনিতেই কম, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত হবে, তা নিয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা থাকতে হবে। আবার বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ধারণা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটাও বিবেচনা করা জরুরি।
প্রস্তাবিত খসড়ায় পাঁচ কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়ানো হয়, সেটা অক্ষুণ্ন রাখা হবে জানানো হয়েছে। এতে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের শঙ্কা দূর হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোর সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কীভাবে চলবে, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। বিদ্যমান শিক্ষকদের বিষয়ে অধ্যাদেশে পরিষ্কার করে কিছু না বলায় নতুন জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে করি। কেননা এর আগে জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় করার সময় জটিলতা তৈরি হয়েছিল।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ ও শঙ্কাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত স ত কল জ
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রির ঘটনায় ঝাড়ু-জুতা মিছিল
সোনারগাঁয়ে পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মালামাল রাতের আধাঁরে গোপনে বিক্রির ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবীতে ঝাড়ু ও জুতা মিছিল করেছেন বিদ্যালয়ের বর্তমান–সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট স্কুলের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। অভিযুক্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া, সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান ভূইয়া মাসুম এবং একাধিক অভিযোগের মুখে থাকা প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, “এ ইউনিয়নকে যেন ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে মাসুম ও মনিরুজ্জামান নিজেদের ইচ্ছেমতো সব কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
তাদের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের মালামাল রাতের আধাঁরে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়। পরে এলাকাবাসী মালামাল ভর্তি গাড়ি আটক করে। কিন্তু এখন উল্টো ভালো মানুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”
সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান মাসুদ মোল্লা বলেন, “একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল চুরি করে বিক্রি করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমাদের ইউনিয়নের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
স্কুলের মতো পবিত্র জায়গায় দুর্নীতি ও অনিয়ম কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এলাকাবাসী রাতেই মালামাল আটকে দিয়ে প্রমাণ করেছে—এ এলাকার মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় ঐক্যবদ্ধ। আমরা চাই প্রশাসন যেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে।”
এলাকাবাসীরা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ও পরিচালনা কমিটিতে সৎ-নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি।
মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসী ঝাড়ু ও জুতা প্রদর্শন করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান ভূইয়া মাসুম জানান, একটি কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যপ্রণীত ভাবে আমাদের বিতর্কিত করতে বিক্রি করা মালামাল চুরির ঘটনা সাজিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে গতকাল মিটিং করেছি৷
অভিযুক্ত বর্তমান কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া জানান, আমরা স্কুলের একটি কমিটি করে বিক্রি করেছি। তবেমাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে কোনো অনুমতি নেই নি। বিক্রি করার পর গাড়িতে উঠাতে রাত হয়ে যায়। এখানে কোনো চুরির ঘটনা ঘটে নি।
উল্লেখ্য, গত (৯ সেপ্টেম্বর) শনিবার স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককের নির্দেশে রাতের আধাঁরে নিয়মবহির্ভূতভাবে পঞ্চমীঘাট স্কুলের মালামাল বিক্রি করা হয়। যা স্থানীয় এক ভাঙ্গারীর পিক-আপ ভ্যানে নেয়ার সময় স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।