শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ–২০২৫–এর খসড়া। গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, এটি কেবল সরকারি সাতটি কলেজের প্রশাসনিক কাঠামোর পরিবর্তন নয়, দেশের উচ্চশিক্ষা নীতি ও বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য, ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উচ্চশিক্ষার অধিকারকে সরাসরি প্রভাবিত করার সম্ভাবনা রাখে।

সাতটি ঐতিহ্যবাহী সরকারি কলেজের চার ধরনের অংশীজন রয়েছেন—স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও শিক্ষক। কিন্তু খসড়া অধ্যাদেশে শিক্ষার্থীদের কেবল একটি খণ্ডিত অংশের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে। কেননা, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যাদেশের আগে প্রস্তাবিত কাঠামোর নানা বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে আন্দোলন করেছেন এবং খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর সম্মেলন করে সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মোটাদাগে তিনটি অংশে বিভক্ত—একাংশ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে, আরেকটি অংশ বিপক্ষে। আবার অপর একটি অংশের দাবি, স্বতন্ত্র তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়। যে পাঁচটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক চালু রয়েছে, সে পাঁচটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে। তাহলে কার ইচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে কি ব্যক্তি বা ব্যক্তিবিশেষের খেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে গিনিপিগে পরিণত করার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুনসাত কলেজ ঘিরে নতুন সংকট২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

খসড়া অধ্যাদেশের ৫২ (খ) অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ ও ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্ররা ঢাকেবির অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু একই অধ্যাদেশের ২ (ফ) অনুযায়ী, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা ঢাকেবির শিক্ষক নন, তাই ওই শিক্ষাবর্ষের ক্লাস–পরীক্ষা নেওয়ার এখতিয়ার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের নেই। এদিকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব জনবল নিয়োগ দেয়নি, ফলে প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছেঁটে ফেলা ও ফিল্ম স্টাডিজ অন্তর্ভুক্ত করা। সেই সঙ্গে রক্ষণশীল পরিবারের নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পুরুষ শিক্ষার্থীদের কম্বাইন্ড শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্তটি নেটিজেনদের কাছে স্পষ্টভাবে ইসলামবিদ্বেষী শিক্ষানীতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তারা এটিকে উন্মুক্ত চিন্তা হিসেবে মেনে নিতে নারাজ। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, উভয় বিষয়কেই অন্তর্ভুক্ত করলে সেটি উন্মুক্ত চিন্তা হিসেবে বিবেচিত হতো। যেহেতু একটিকে ছেঁটে ফেলে অন্যটিকে স্থান দেওয়া হয়েছে, তাই এটি উন্মুক্ত চিন্তা নয়; বরং ইসলাম বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ।

আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেকের বেশি শিক্ষকের নেই উচ্চতর ডিগ্রি২১ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নের প্রয়োজন আজ আর কারও অজানা নয়, অথচ প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগ সরকারি কলেজগুলোর সক্ষমতা সংকোচনের ঝুঁকি তৈরি করেছে। এটি শুধু কলেজের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নয়, সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক সমতার ক্ষেত্রেও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারি কলেজে আসনসংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হ্রাস পেলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন, যেখানে উচ্চ ফি প্রদানের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে হবে। অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। ফলে এই উদ্যোগকে স্বার্থসংশ্লিষ্টদের উসকানি হিসেবেই দেখছেন।

জাতীয় শিক্ষা নীতি–২০১০ উচ্চশিক্ষার প্রসার, অবকাঠামো উন্নয়ন ও পাস কোর্সকে অনার্সে রূপান্তরের কথা বলা হয়েছে। ফলে উচ্চশিক্ষার সংকোচন শিক্ষানীতির পরিপন্থী। শিক্ষার্থীদের প্রতি রাষ্ট্রের মাথাপিছু ব্যয়ের ক্ষেত্রে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। এমনকি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পেছনেও তাঁদের তুলনায় অধিক ব্যয় করা হয়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফল প্রকাশ ও পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, কোনো নিয়মতান্ত্রিক পরিকল্পনা নেই, সমাবর্তন, ক্লাস রুটিন, সিলেবাস, মানোন্নয়ন, পরীক্ষা, সিজিপিএসহ সব ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার তাঁরা। মানোন্নয়নের নামে ঢাবি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ফি দিতে হচ্ছে।

আরও পড়ুনসরকারীকরণ কলেজের শিক্ষক–কর্মচারীরাও এ দেশের নাগরিক ০৪ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংগতির কারণে সেই সংকট ঘনীভূত হয়েছে। ফলে তাঁরা সমান সুযোগ ও মানসম্মত শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ সংকট নিরসনকল্পে ২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর ও ২৯ ডিসেম্বর সাত কলেজের প্রশাসনিক ও একাডেমিক সংকট সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। সেখানে কার্যপরিধির–০২–এ স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে, সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় রূপান্তরের প্রক্রিয়া নির্ধারণ ও বিকল্পগুলো বিবেচনা করা। কিন্তু কমিটি কার্যপরিধির বাইরে গিয়ে ‘হাইব্রিড বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রস্তাব করেছে, যা সরাসরি সাত কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও পরিচয় বিলুপ্ত করবে। কার্যপরিধিতে ছাত্র, শিক্ষক ও অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথা থাকলেও, তা হয়নি। কেবল নির্বাচিত কিছু শিক্ষার্থীকে প্রতিনিধি দেখানো হয়েছে; সাধারণ শিক্ষক, ছাত্রসংগঠন, অভিভাবক ও সিভিল সোসাইটিকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে এ প্রস্তাব পরিপত্রবহির্ভূত, অযাচিত ও নতুন সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা জাগিয়েছে। সাত কলেজকে সাতটি ক্যাম্পাস হিসেবে ঘোষণা করলে প্রতিটি কলেজের স্বাতন্ত্র্য বিলীন হবে। অধ্যাদেশের ৬ (১) (খ) অনুযায়ী, ইডেন ও বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে সহশিক্ষা চালু হলে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হারাবে। নিরাপত্তা ও পরিবারের কারণে অনেক ছাত্রী নারী কলেজই বেছে নেন। তাঁদের স্বাভাবিক চয়েস কেড়ে নেওয়া কতটা ন্যায়সংগত হবে?

আরও পড়ুনহাঙ্গেরিতে স্কলারশিপ, পড়াশোনা ইংরেজিতে হলে আইইএলটিএস বা টোয়েফলের প্রয়োজন নেই ০৪ অক্টোবর ২০২৫

ইডেন ও বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ সংকুচিত হলে, বিশেষ করে রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েদের উচ্চশিক্ষা ব্যাহত হবে। এটি সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদ, জাতীয় শিক্ষানীতি ও জাতিসংঘের এসডিজি ৪–এর পরিপন্থী। অংশীজনদের যথাযথ সম্পৃক্ততা ছাড়া আন্দোলন ও অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। সংবিধানের ২৩ অনুচ্ছেদে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষার কথা বলা হয়েছে। শতবর্ষব্যাপী সরকারি নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার পরিপন্থী হবে।

খসড়ার ৬ (১) (ক) ও ৬ (১) (খ)–তে আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ও রসায়নের মতো বিদ্যমান মৌলিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে স্পষ্টভাবে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। প্রশ্ন থেকে যায়, এ বিষয়ে পড়াশোনা করা ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ডিসিইউর অন্তর্ভুক্ত হবেন, না ঢাবির অন্তর্ভুক্ত হবেন? তাঁদের সনদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ কে হবে? ঠিক কী কারণে নির্দিষ্ট কিছু মৌলিক বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে আর কিছু মৌলিক বিষয়কে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। রসায়নকে বাদ দিয়ে পদার্থবিজ্ঞানকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করায় ছাত্রদের অনেকে মনে করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উৎসাহ প্রদানকারী অধ্যাপক কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বা প্রো–ভিসির মতো প্রশাসনিক পদে নিয়োগ লাভের পথ খোলা রাখার জন্যই এটি করা হয়েছে। অন্যান্য মৌলিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার অনুরূপ কারণ থাকতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। যাঁরা এই সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেই ২০১৯–২০, ২০২০–২১ ও ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারপরনাই হতাশা ব্যক্ত করে লিখেছেন, ‘ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাগডাশে’।

আরও পড়ুনএডিবি বৃত্তি: টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ অর্থায়নে মাস্টার্সের সুযোগ০২ অক্টোবর ২০২৫

২০১৯–২০, ২০২০–২১ ও ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভবিষৎ কী? তাঁদের কি আবার ঢাবির অধীনে সনদ নিতে হবে?

এখানেই সংকটের শেষ নয়। ৬.

২ (খ) অনুসারে কলেজের ভৌত অবকাঠামোর যৌথ ব্যবহারে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ভবিষ্যতে ত্রিমুখী সংকট তৈরি করতে পারে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ অবকাঠামো ব্যবহার ও চুক্তি আলোচিত হলেও বাস্তবে যদি কোনো পক্ষ কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে ওঠে এবং অপর পক্ষ মানতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে নিয়মিত টানাপোড়েন সৃষ্টি হবে। সিন্ডিকেট ও আচার্যের সিদ্ধান্ত কলেজের জন্য কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।

খসড়ার ৭ (৩)–এ হাইব্রিড পদ্ধতিতে পাঠদান ও ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনে পরিচালিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে অথচ ক্লাসরুমের নানা সংকট চিহ্নিত করে সমাধানের রূপরেখা প্রণয়নের জন্যই কমিটি করা হয়েছিল। সমস্যা সমাধান না করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হাইব্রিড ও স্কুলিং পদ্ধতিসংবলিত অনলাইন–নির্ভর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ২.০ (BOU 2. 0) মডেল চাপিয়ে দিলে তা শিক্ষার মান নিশ্চিত করবে কি না, সেটি নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। অধ্যাদেশের ৬.২ (খ) অনুসারে, ২০২৩–২৪ ও ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোয় পড়লেও ডিসিইউ থেকে সার্টিফিকেট পাবেন। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে পড়াশোনা শেষে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট, এটি ভবিষ্যতে আইনি ও পেশাগত জটিলতা তৈরি করতে পারে কি না, সে বিষয়েও দৃষ্টি দিতে হবে। এদিকে সাত কলেজে কর্মরত শিক্ষকেরা একই দিনে একই সময়ে আট দফা দাবি নিয়ে মানববন্ধন করেন। প্রশাসন থেকে পাঠদান—সব স্তরে কেবল বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। চূড়ান্ত অধ্যাদেশে শিক্ষকদের প্রত্যাশার প্রতিফলন না ঘটলে দ্বিতীয় বর্ষ থেকে শুরু করে মাস্টার্স পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। সাত কলেজের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ খসড়া অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ঢাকা কলেজসহ পাঁচটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের দাবি, কলেজের সম্পত্তি কোনোভাবেই হস্তান্তর করা যাবে না। যদিও খসড়ার ৩ (৩)–এ স্থাবর ও অস্থাবর সব ধরনের সম্পত্তি অর্জন করার, অধিকারে রাখার ও হস্তান্তর করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকবে বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। ৩ (৭)–এ বলা হয়েছে, মহানগরের সরকারি সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পাসের পরীক্ষাগারসহ অন্যান্য সমজাতীয় সুযোগ–সুবিধা প্রয়োজনে শর্ত সাপেক্ষে ব্যবহার করতে পারবেন অর্থাৎ বর্তমান শিক্ষার্থীরা নিজভূমে পরবাসী। খসড়ার ৩ (৩) অনুযায়ী, উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের অবস্থা হবে ছিটমহলবাসীর মতো। ২ (ব) অনুসারে, আন্দোলনরত বর্তমান শিক্ষার্থীরা সেখানে ব্রাত্য। ২ (ফ) ও (ভ) অনুসারে, কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীরা সেখানে অচ্ছুত। ৫২ (খ) অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের শর্ত সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, ‘অধ্যাদেশ তুমি কার’? ইউজিসির সম্মানিত চেয়ারম্যান বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি। প্রশ্ন থেকে যায়, কোন শিক্ষার্থীদের কথা তিনি বলেছেন?

ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজ নিয়ে বহু বছর ধরে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে, এগুলোকে আবারও অপ্রচলিত মডেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষা ক্ষেত্রে অস্থিরতা বাড়বে। সরকার উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে ফেডারেল, কলেজিয়েট অথবা আলাদা জায়গায় ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য অক্ষুণ্ন রাখতে পারে। যদিও জাতীয় দৈনিকে প্রচারিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র অনুযায়ী, ৫৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি এবং ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলছে ভাড়া বাড়িতে বা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে। এর মধ্যে আবার ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুলের সুবিধাও নেই।

শিক্ষা নিয়ে আমরা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে পারি না। কারণ, এর প্রভাব পড়ে পুরো জাতির ভবিষ্যতের ওপর।

লেখক: অরিয়ন তালুকদার, শিক্ষক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষ বর ষ র শ ক ষ র থ কল জ র শ ক ষ র থ র স ত কল জ র ম ন ন নয়ন কল জ র স র প ন তর উন ম ক ত প রস ত ব অন য য় উল ল খ পর ক ষ অন স র প রক শ সরক র ইসল ম খসড় র

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্ঘটনায় মা হারানো শিশুটির কান্না থামছে না

‘রাতে হঠাৎ ঘুমঘুম চোখে কান্না শুরু করে। একবার কান্না শুরু হলে তা আর থামতেই চায় না। তখন মাঝরাতে তাকে বাইরে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না ঘুমায়, ততক্ষণ নিজের সঙ্গে রাখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে কোনোরকমে মাকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করি। তবে কান্না থামাতে পারছি না।’

কথাগুলো বলছিলেন এক বছরের শিশু সাফওয়ান ইসলামের বাবা মো. ইমন ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের মৌলভীপাড়া এলাকায় রেললাইনে বিকল হয়ে পড়া একটি সিএনজি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয় একটি ট্রেন। এ সময় শিশু সাফওয়ানের মা সানজিদা সুলতানা (২৫) ও নানি মাহমুদা বেগমের (৪৫) মৃত্যু হয়। এর পর থেকে সাফওয়ানকে সারাক্ষণ নিজের কাছে রাখছেন তার বাবা ইমন।

ইমনের বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ঘাটগড় এলাকায়। তিনি একটি রড তৈরির কারখানায় ট্রান্সপোর্ট সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত। যে জায়গাটিতে দুর্ঘটনা হয়েছিল তা ইমনের শ্বশুরবাড়ি থেকে মাত্র চার শ গজ দূরে। পুলিশ জানায়, রেলক্রসিংটি অবৈধ। ঘটনার দিন সেখানে কোনো গেটম্যানও ছিল না।

আমরা কত আনন্দ করে ছেলের জন্মদিন পালন করেছি।  অথচ এক মাস না যেতেই আমার ছেলেটি তার মাকে হারাল। গোছানো সংসারটা যেন তছনছ হয়ে গেল।শিশু মো. ইমন ইসলামের বাবা।

গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ইমনের বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। এক পাশে ছেলে সাফওয়ানকে কোলে নিয়ে বসে আছেন তিনি। অনেকেই ছেলের এ অবস্থা দেখে ইমনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন। সাফওয়ান চোখ মেলে আশপাশে তাকিয়ে দেখছে। আর কিছুক্ষণ পরপরই কান্না করছে।

ইমন প্রথম আলোকে বলেন, মা মারা যাওয়ার দিন বাড়িতে অনেক লোকের ভিড় থাকায় সাফওয়ান তেমন কান্না করেনি। তবে রাত হতেই মাকে না পেয়ে কান্না শুরু করে। এর পর থেকে প্রতি রাতেই কান্না করে। দিনের বেলায় বাড়িতে মানুষের ভিড় থাকায় তেমন কান্না করে না। তবে যখন বুকের দুধ খাওয়ার সময় হয়, তখন আর কান্না থামিয়ে রাখা যায় না।

ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌর সদরের মৌলভী পাড়া এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ