অচলাবস্থার পর পুরোদমে ক্লাস–পরীক্ষা শুরু, প্রচারমুখী রাকসুর প্রার্থীরা
Published: 5th, October 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ দিন ক্লাস–পরীক্ষাসহ সব দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর পুরোদমে সব ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ রোববার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই সঙ্গে থেমে নেই রাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরাও। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সকাল থেকে তাঁরা প্রচারণায় নেমেছেন। অচলাবস্থার পর আবার উৎসবমুখর ক্যাম্পাস।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন ও একাডেমিক ভবনসহ বিভিন্ন দপ্তরের তালা খোলা। কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কাজ করছেন। যথাসময়ে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের আনাগোনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্লাসের ফাঁকে দল বেঁধে তাঁরা আড্ডা দিচ্ছেন। ক্যাম্পাসের সব ভ্রাম্যমাণ দোকান খোলা হয়েছে। রাকসু নির্বাচনের বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।
আরও পড়ুনরাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণার নতুন সময়সূচি নির্ধারণ২১ ঘণ্টা আগেসিয়াম আহম্মেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আজ ক্লাস শুরু হয়েছে। প্রার্থীরা ভোট চাচ্ছেন। আমাদের চাওয়া, ক্যাম্পাসের পরিবেশটা যেন ভালো থাকে। রাকসু নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁরা যেন আমাদের অধিকারগুলো নিয়ে কাজ করেন। আমাদের সমস্যায় সব সময় পাশে থাকেন।’
সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেল ছাত্রদল–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী নাফিউল ইসলামকে (জীবন)। প্রচারণার এক ফাঁকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠেয় রাকসু নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন অচলাবস্থার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছেন। ক্লাস–পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা অন্য রকম আনন্দ ও উচ্ছ্বাস দেখতে পেয়েছি। আশা করি, ১৬ অক্টোবর একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেবে নির্বাচন কমিশন।’
সকাল ১০টা থেকে প্রচারণায় নেমেছেন ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের প্রার্থীরা। এই প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী মারুফ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট ও টুকিটাকি চত্বরসহ ক্যাম্পাস এলাকায় প্রচারণা চালান। প্রচারণা শেষে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি শেষে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরেছেন। ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা দিচ্ছেন। ক্যাম্পাস আবার উৎসবমুখর হচ্ছে। সকাল থেকে প্রচারণা চালাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন। তবে যথাসময়ে রাকসু নির্বাচন নিয়ে এখনো অনেক শিক্ষার্থীর মনে সংশয় থেকে গেছে।’
‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের মহিলাবিষয়ক প্রার্থী সামসাদ জাহান বলেন, ‘নতুন করে প্রচারণা শুরু হচ্ছে। প্রার্থীরা সকাল থেকে লিফলেট বিতরণ করছেন। আমরা চাচ্ছি, যেন আগের নির্বাচনী আমেজ ফিরিয়ে আনা যায়। আমরা চাই, সবাইকে নিয়েই নির্বাচনটা হোক। তবে সেটা যেন অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হয়।’
প্রচারণার নতুন সময় নির্ধারণ
রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণার নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সকাল ৮টা থেকে ১৪ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। গতকাল শনিবার রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এ বিষয়ে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা সেতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আগে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারণা চালানো যেত। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারণার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু শেষ দিন অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। আগের মতোই আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৮ সেপ্টেম্বর প্রশাসন ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। ২০ সেপ্টেম্বর জুবেরী ভবনে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে যান। এতে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় ২২ সেপ্টেম্বর জরুরি সভা করে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৪ সেপ্টেম্বর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা সাত দিনের সময়সীমা দিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন এবং জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম ও ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসে কর্মবিরতি স্থগিত করে।
২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শারদীয় দুর্গোৎসবের ছুটি থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যান। ২ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজার ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসে ফিরছেন। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি শেষে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর কর মকর ত পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: কোটায় আবেদন ও ভর্তির শর্ত প্রকাশ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় কোটায় আবেদন ও ভর্তির শর্তাবলি প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী প্রার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর (৪০) পেলে তাদের জাতিভিত্তিক প্রত্যয়নপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি ও অন্যান্য অ্যাকাডেমিক কাগজপত্রসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নির্বাচন কমিটির সভায় অবশ্যই সাক্ষাৎকারের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উপস্থিত হতে হবে।
আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস ফেলোশিপ, ৬ খাতে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের সুযোগ১৭ নভেম্বর ২০২৫মুক্তিযোদ্ধার পুত্র বা কন্যা ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর (৪০) পেলে পিতা বা মাতার মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি ও অন্যান্য অ্যাকাডেমিক কাগজপত্রসহ মুক্তিযোদ্ধার পুত্র বা কন্যা নির্বাচন কমিটির সভায় অবশ্যই সাক্ষাৎকারের জন্য (রাবি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত) নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উপস্থিত হতে হবেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর (৪০) পেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে প্রত্যয়নপত্র ও অন্য অ্যাকাডেমিক কাগজপত্রসহ শারীরিক প্রতিবন্ধী নির্বাচন কমিটির সভায় অবশ্যই সাক্ষাৎকারের জন্য (রাবি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত) নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উপস্থিত হতে হবে।
খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি-ইচ্ছুক প্রার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর (৪০) পেলে খেলোয়াড় নির্বাচন কমিটির সভায় (রাবি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত) নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিগত দুই বছরের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ের কোনো খেলায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়ের সমর্থনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করতে হবে।
সব প্রকার কোটার ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর (৪০) কোনোক্রমেই শিথিলযোগ্য হবে না।
সব প্রকার কোটার অন্তর্ভুক্ত প্রার্থীকে আবেদনের সময় অবশ্যই অনলাইনে প্রদত্ত নিয়মাবলি ও নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রার্থিত কোটায় আবেদন করতে হবে। অন্যথায় তাদের কোটা ভুক্তির আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
আরও পড়ুনমেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা: বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ, বেশি ভারতের১৭ নভেম্বর ২০২৫ভর্তিতে আবেদন শুরু কবে—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিতে আবেদন ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা আগামী ৭ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। ভর্তি পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষায় ৮০টি প্রশ্ন থাকবে। ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটা যাবে।
এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন আহ্বান করা যাচ্ছে। আবেদনকারীকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট -এ প্রকাশিত নিয়মাবলি অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট ইউনিটে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। রাজশাহীসহ মোট ছয়টি বিভাগীয় শহরে এবারের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুননিউজিল্যান্ড আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যে নতুন সুযোগ দিল ১৬ নভেম্বর ২০২৫কোন ইউনিটের পরীক্ষা কবেআবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। আগামী ১৬ জানুয়ারি ‘সি’ ইউনিট (বিজ্ঞান), ১৭ জানুয়ারি ‘এ’ ইউনিট (মানবিক) ও ২৪ জানুয়ারি ‘বি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষার সময়সীমা হবে ১ (এক) ঘণ্টা। ভর্তি পরীক্ষা দুই শিফটে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা ও বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর ও বরিশাল অঞ্চলে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।