রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ দিন ক্লাস–পরীক্ষাসহ সব দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর পুরোদমে সব ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ রোববার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই সঙ্গে থেমে নেই রাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরাও। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সকাল থেকে তাঁরা প্রচারণায় নেমেছেন। অচলাবস্থার পর আবার উৎসবমুখর ক্যাম্পাস।

সরেজমিনে দেখা যায়, আজ সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন ও একাডেমিক ভবনসহ বিভিন্ন দপ্তরের তালা খোলা। কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কাজ করছেন। যথাসময়ে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের আনাগোনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্লাসের ফাঁকে দল বেঁধে তাঁরা আড্ডা দিচ্ছেন। ক্যাম্পাসের সব ভ্রাম্যমাণ দোকান খোলা হয়েছে। রাকসু নির্বাচনের বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

আরও পড়ুনরাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণার নতুন সময়সূচি নির্ধারণ২১ ঘণ্টা আগে

সিয়াম আহম্মেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আজ ক্লাস শুরু হয়েছে। প্রার্থীরা ভোট চাচ্ছেন। আমাদের চাওয়া, ক্যাম্পাসের পরিবেশটা যেন ভালো থাকে। রাকসু নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁরা যেন আমাদের অধিকারগুলো নিয়ে কাজ করেন। আমাদের সমস্যায় সব সময় পাশে থাকেন।’

সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেল ছাত্রদল–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী নাফিউল ইসলামকে (জীবন)। প্রচারণার এক ফাঁকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠেয় রাকসু নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন অচলাবস্থার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছেন। ক্লাস–পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা অন্য রকম আনন্দ ও উচ্ছ্বাস দেখতে পেয়েছি। আশা করি, ১৬ অক্টোবর একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেবে নির্বাচন কমিশন।’

সকাল ১০টা থেকে প্রচারণায় নেমেছেন ‘রাকসু ফর র‌্যাডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের প্রার্থীরা। এই প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী মারুফ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট ও টুকিটাকি চত্বরসহ ক্যাম্পাস এলাকায় প্রচারণা চালান। প্রচারণা শেষে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি শেষে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরেছেন। ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা দিচ্ছেন। ক্যাম্পাস আবার উৎসবমুখর হচ্ছে। সকাল থেকে প্রচারণা চালাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন। তবে যথাসময়ে রাকসু নির্বাচন নিয়ে এখনো অনেক শিক্ষার্থীর মনে সংশয় থেকে গেছে।’

‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের মহিলাবিষয়ক প্রার্থী সামসাদ জাহান বলেন, ‘নতুন করে প্রচারণা শুরু হচ্ছে। প্রার্থীরা সকাল থেকে লিফলেট বিতরণ করছেন। আমরা চাচ্ছি, যেন আগের নির্বাচনী আমেজ ফিরিয়ে আনা যায়। আমরা চাই, সবাইকে নিয়েই নির্বাচনটা হোক। তবে সেটা যেন অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হয়।’
প্রচারণার নতুন সময় নির্ধারণ

রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণার নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সকাল ৮টা থেকে ১৪ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। গতকাল শনিবার রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এ বিষয়ে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা সেতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আগে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারণা চালানো যেত। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারণার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু শেষ দিন অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। আগের মতোই আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৮ সেপ্টেম্বর প্রশাসন ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। ২০ সেপ্টেম্বর জুবেরী ভবনে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে যান। এতে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় ২২ সেপ্টেম্বর জরুরি সভা করে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৪ সেপ্টেম্বর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা সাত দিনের সময়সীমা দিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন এবং জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম ও ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসে কর্মবিরতি স্থগিত করে।

২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শারদীয় দুর্গোৎসবের ছুটি থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যান। ২ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজার ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসে ফিরছেন। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি শেষে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প ট ম বর কর মকর ত পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

না’গঞ্জ জেলা প্রশাসকের আন্তরিকতায় মুগ্ধ সনাতন ধর্মাবলম্বী

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা নারায়ণগঞ্জে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

এ বছর প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে পূজা শুরু হওয়ার আগেই নিরাপত্তাসহ সার্বিক প্রস্তুতি দেখতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার একাধিক পূজামন্ডপ পরিদর্শন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নজর কাড়েন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। 

হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা জেলা প্রশাসকের এই কার্যক্রমকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের দাবি, পূজার প্রস্তুতি সরেজমিন দেখতে কোন জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগ তাঁরা আগে দেখেননি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর দিন থেকেই ডিসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞাকে দেখা গেছে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পূজামন্ডপে।

পুজো শুরুর প্রথম দিনেই জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুর বাজার মহাশ্মশান কালীবাড়ি পূজামন্ডপে তাঁর উপস্থিতিতে উচ্ছ্বসিত হন ভক্তবৃন্দ। জেলার সীমান্তবর্তী এই মন্ডপের এক পাশে গাজীপুরের কালীগঞ্জ, অন্য পাশে নরসিংদীর পলাশ উপজেলা এ কারণে নারায়ণগঞ্জ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সচরাচর সেখানে যান না।

পরদিন সপ্তমীতে তিনি উপস্থিত হন বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের চর শ্রীরামপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদীর ধারে অবস্থিত শ্রীশ্রী ব্রহ্মা

মন্দিরে। পাকিস্তান আমলে নির্মিত হলেও এই মন্দিরে এর আগে কোনো জেলা প্রশাসক যাননি। এলাকাটি চরাঞ্চল এবং তুলনামূলকভাবে কম জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এর গুরুত্ব সাধারণত কম ধরা হয়। কখনো কখনো তাঁর সাথে ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনও।

শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব শেষ হওয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলার নিতাইগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শংকর সাহা বলেন, উৎসবমুখরভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা পালনে জেলা প্রশাসকের প্রচেষ্টা ছিল নজিরবিহীন। উনার মতো জেলা প্রশাসক যারা পেয়েছেন, তারা আসলেই ভাগ্যবান। উনি মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।”

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে দুর্গাপূজায় যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছিল, আমার মনে হয় আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলাতেই সেটা সবচেয়ে বেশি বাস্তবায়িত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর করা এবং আন্তঃধর্ম সহাবস্থান নিশ্চিত করতে উনি খুবই আন্তরিক। সর্বশেষ বিসর্জনের আগ পর্যন্ত প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিসর্জনস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করেছেন।”

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি শংকর দে বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা সুন্দরভাবে আয়োজনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এবং পুলিশ সুপার  মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের ভূমিকা অত্যন্ত চমৎকার ছিল।

জেলা প্রশাসক আমাদের অনুরোধে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য এবার নতুন করে ৫ নম্বর ঘাটে ব্যবস্থা করেছেন। আগে তিন নম্বর ঘাটে বিসর্জনের জন্য জেটি ছিল ১০০ ফুট। এবার আড়াইশো ফুট লম্বা করা হয়েছিল এই জেটি। এখানে মোট ৪৩টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। বিসর্জন স্থলে জেলা প্রশাসন একটি বিশাল মঞ্চও তৈরি করেছিল। 

প্রতিমা বিসর্জনের সময়ও পুলিশ, সেনাবাহিনী, আনসার, বিজিবি, র‌্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা,  কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস এবং বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেন। ফলে প্রতিমা বিসর্জনও পরিণত হয় এক মিলনমেলার আবহে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পূজা উৎসবমুখর হওয়ায় ডিসি-এসপিকে মহানগর পূজা ফ্রন্টের শুভেচ্ছা
  • পূজা উৎসমুখর হওয়ায় ডিসি-এসপিকে মহানগর পূজা ফ্রন্টের শুভেচ্ছা
  • উৎসবমুখর পরিবেশে দেশব্যাপী ‘সোনালিকা ডে’ আয়োজন
  • রাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণার নতুন সময়সূচি নির্ধারণ
  • না’গঞ্জ জেলা প্রশাসকের আন্তরিকতায় মুগ্ধ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা
  • না’গঞ্জ জেলা প্রশাসকের আন্তরিকতায় মুগ্ধ সনাতন ধর্মাবলম্বী
  • ইলিশের আহরণ কমায় জেলেদের হতাশা, ক্রেতার অতৃপ্তি
  • অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্বমহলকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা