সঞ্চয়পত্র নাকি শেয়ার, কোথায় বিনিয়োগ করবেন
Published: 6th, October 2025 GMT
একটু স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এ দেশের মানুষ জমানো টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু অনেকেই বুঝতে পারেন না কোথায় বিনিয়োগ করবেন। এ জন্য লোকসানেও পড়তে হয়।
এ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে দ্বিধাও। যেমন শেয়ারবাজারে যাবেন নাকি নিরাপদ পথ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন? দুই ক্ষেত্রের ঝুঁকি ও মুনাফা আলাদা রকম।
আপনি কোনটা বেছে নেবেন, তা নির্ভর করে আপনার লক্ষ্য, ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা এবং বিনিয়োগের সময়সীমার ওপর।
নিচে সঞ্চয়পত্র নাকি শেয়ার কিনবেন—এই দুই ধরনের বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে প্রধান পাঁচটি কারণ তুলে ধরা হলো।
১.
নিরাপত্তা বনাম ঝুঁকি
সঞ্চয়পত্র সরকারনির্ভর বিনিয়োগ, তাই ঝুঁকি খুব কম। সরকার নিজেই গ্যারান্টি দেয়। তাই মূল টাকা হারানোর আশঙ্কা নেই।
অন্যদিকে শেয়ারবাজারে লাভের সুযোগ বেশি। বিনিয়োগে ঝুঁকিও বেশি। বাজারের ওঠানামায় মূলধন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন বিনিয়োগকারী।
২. মুনাফার হার
সঞ্চয়পত্রে মুনাফা নির্দিষ্ট ও স্থির থাকে। এখন যেমন, মেয়াদ পূর্ণ হলে ১১-১২ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। এদিক থেকে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। প্রতি মাসে মুনাফা তোলার সুযোগও আছে। এতে মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার খরচ চালানোর কিছু অংশ আসে এই মুনাফার টাকায়।
অন্যদিকে শেয়ারবাজারে নির্দিষ্ট হারে মুনাফা নেই। কখনো দ্বিগুণ, তিন গুণ, চার গুণ লাভ হতে পারে। আবার আপনি লোকসানের মুখেও পড়তে পারেন। দীর্ঘ মেয়াদে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে রিটার্ন সঞ্চয়পত্রের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। তাই আপনি কোন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন, ওই কোম্পানি কতটা ভালো, তার ওপর নির্ভর করছে আপনার বিনিয়োগের টাকার কী হবে।
৩. যখন-তখন ভাঙানো বনাম মেয়াদ পূর্তির আগে নয়
এখানে সঞ্চয়পত্রে পিছিয়ে আছে। কারণ, শেয়ার আপনি যেকোনো সময় বিক্রি করে নগদ টাকায় পরিণত করতে পারেন। ফলে টাকার দরকার হলে শেয়ার বিক্রি করা যাবে। তবে কেনা দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি করলে লোকসান হবে।
অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে টাকা তুললে জরিমানা বা মুনাফা কমার ঝুঁকি থাকে।
৪. কর ও নিয়মনীতি
সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর কাটা হয় এবং বিনিয়োগসীমা নির্দিষ্ট থাকে। যেমন পরিবার সঞ্চয়পত্র ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত একক নামে কেনা যায়।
অন্যদিকে শেয়ারবাজারে ডিভিডেন্ডে কর কম, আবার দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে মূলধনি লাভের ওপর কর তুলনামূলকভাবে কম। ফলে কর-সাশ্রয়ের দিক থেকেও শেয়ার কিছুটা এগিয়ে আছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। আপনি যত ইচ্ছে বিনিয়োগ করতে পারেন।
তবে সঞ্চয়পত্র ও শেয়ারবাজার—উভয় ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে কর রেয়াত পাওয়ার সুযোগ আছে।
৫. বিনিয়োগের লক্ষ্য
যদি আপনি স্থিতিশীল, ঝুঁকিমুক্ত আয় চান, তাহলে সঞ্চয়পত্র ভালো।
আর যদি দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্য থাকে—তাহলে শেয়ারবাজারে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করাই যুক্তিযুক্ত।
মনে রাখবেন
নিরাপত্তা ও স্থিতিশীল আয়ের জন্য সঞ্চয়পত্র, আর উচ্চ মুনাফা ও প্রবৃদ্ধির জন্য শেয়ারবাজার—এই দুটিকে ভারসাম্য রেখে বিনিয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ব ন য় গ কর
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রাইজবন্ডসহ সব সেবা ২০ নভেম্বর থেকে বন্ধ
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে আগামী ২০ নভেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রয়, ছেঁড়া-ফাটা নোট বিনিময় এবং এ-চালানসহ সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহকদের সংশ্লিষ্ট এসব সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরো পড়ুন:
বগুড়ায় গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন লাগানোর চেষ্টা
অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট পরিচালনা সহজ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আগামী ২০ নভেম্বর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রয়, ছেঁড়া-ফাটা নোট বিনিময় এবং এ-চালানসহ সংশ্লিষ্ট সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহকদের সংশ্লিষ্ট এসব সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন নির্বিঘ্নে জনসাধারণকে এসব সেবা দেয় তা নিশ্চিত করতে তদারকি বাড়াবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো জানায়, বিশ্বের কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কাউন্টার থেকে সরাসরি সাধারণ মানুষকে এ ধরনের সেবা দেয় না। আলোচ্য সেবাগুলো তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করতে বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গত ২২ জুন মতিঝিল অফিসের ক্যাশ বিভাগ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ক্যাশ বিভাগ আধুনিকায়নে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
এরপর একটি কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিটির সুপারিশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রাহকদের সব ধরনের সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে, গত ১৮ আগস্ট ও ২২ সেপ্টেম্বর করণীয় নির্ধারণে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। বৈঠকে আগেও দুইজন গভর্নর গ্রাহক সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সেবা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে আলোচনা হয়। ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় আধুনিকায়ন, উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা-স্বয়ংক্রিয় ভল্ট স্থাপন এবং মূল ভবনের নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নতির জন্য সম্প্রতি কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে সব সেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আর সব ব্যাংক শাখায় প্রাইজবন্ড পাওয়া যায়। ব্যাংকগুলো ছেঁড়াফাটা নোট বদল ও অটোমেটেড চালান সেবাও দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের ধাতব মুদ্রা বিনিময়, স্মারক মুদ্রা বিক্রি, অপ্রচলিত নোটের বিরোধ নিষ্পত্তিসহ বেশকিছু সেবা দেওয়া হত। এসব সেবা বন্ধ করেছে মতিঝিল অফিসে। আগামীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য বিভাগীয় কার্যালয়গুলোতে এসব সেবা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা/নাজমুল/মেহেদী