ইন্দোনেশিয়ায় গত সপ্তাহে একটি আবাসিক স্কুল ধসের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে। এ ঘটনাকে চলতি বছরে দেশটির সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে অভিহিত করা হয়েছে। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) পূর্ব জাভা প্রদেশের সিদোয়ারজো শহরে আল খোজিনি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল ধসে পড়ার পর শতাধিক শিক্ষার্থী আটকা পড়ে, ধ্বংস্তুপের নিচে চাপা পড়ে এবং পরে অনেকের মৃত্যু হয়।

আরো পড়ুন:

ইন্দোনেশিয়ায় স্কুল ধস: ধ্বংসস্তুপের নিচে এখনও আটকা ৯১ জন

ইন্দোনেশিয়ায় স্কুল ভবন ধসে নিহত ৩, নিখোঁজ ৩৮

দেশটির দুর্যোগ প্রশমন সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রবিবার গভীর রাতে উদ্ধারকারীরা ভারী যন্ত্র ব্যবহার করে ধ্বংসস্তুপের ৮০ শতাংশ পরিষ্কার করেছে এবং বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর মরদেহ ও শরীরের অংশ খুঁজে পেয়েছে।

দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার একজন ডেপুটি বুদি ইরাওয়ান বলেন, উদ্ধারকৃত মরদেহের ভিত্তিতে মোট ৫০ জন মারা গেছেন। ১০৪ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন ১৩ জন। আজ সোমবারের শেষ নাগাদ তাদেরকে উদ্ধার করার মাধ্যমে উদ্ধারকারীরা তাদের অনুসন্ধান শেষ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, “একটি ভবন থেকে এই বছর সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ২০২৫ সালে প্রাকৃতিক বা অন্যান্য সব ধরনের দুর্যোগের মধ্যে সিদোয়ারজোর মতো এত বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।”

একই সংবাদ সম্মেলনে অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার কর্মকর্তা ইউধি ব্রামান্ত্যো বলেন, আরো পাঁচটি দেহের অংশ পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ৫৪ জন।

ইউধি আরো বলেন, “আমরা আশা করছি আজই উদ্ধার কাজ শেষ করতে পারব এবং মরদেহগুলো (পরিবারের কাছে) ফিরিয়ে দেব।”

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধসের কারণ ছিল স্কুলটির শ্রেণীকক্ষের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য নতুন তলা নির্মাণের কাজ, যা ভবনের ভিত্তি ধরে রাখতে পারেনি।

দেশটির ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ইন্দোনেশিয়া জুড়ে প্রায় ৪২ হাজার ইসলামিক স্কুল রয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে পেসানট্রেন নামে পরিচিত।

রবিবার স্থানীয় গণমাধ্যমে দেশটির গণপূর্তমন্ত্রী ডোডি হ্যাংগোডোর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, মাত্র ৫০টি পেসানট্রেনের ভবন নির্মাণের অনুমতি রয়েছে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, আল খোজিনির ভবন নির্মাণের অনুমতি ছিল কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়। মন্তব্যের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়নি।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভবন ধস স ক ল ধস ইন দ ন শ উদ ধ র স মব র দ শট র

এছাড়াও পড়ুন:

মারমা ও রাখাইনদের রথটানা উৎসব আজ, প্রবারণা পূর্ণিমায় এটি কীভাবে এল

আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হয় প্রবারণা পূর্ণিমা। প্রবারণায় মাঙ্গলিক রথটানা উৎসবে মেতে ওঠেন মারমা ও রাখাইন তরুণ-তরুণীরা। মারমা ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় ‘রাথাঃ পোয়ে’। অনেকে আবার বলেন ‘সাংফোওয়া হ্নাং’। বাংলায় একে বলা যায় ‘শারদীয় উৎসব’।

প্রবারণায় হাজারো তরুণ-তরুণী নেচে–গেয়ে ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপন করে এই রথটানা উৎসব। ‘ছংরাসি ওয়াগ্যোয়াই হ্লা, রাথাঃ পোয়ে লাগাইত মে’ (শরৎ ঋতু এসেছে, আশ্বিনে চলো রথটানা উৎসবে) গান গেয়ে রথ টানেন তরুণ-তরুণীরা।

বান্দরবানে এবার প্রবারণা ও রথটানা উৎসব শুরু হবে আজ রোববার। তিন দিনের উৎসবের জন্য পক্ষকালব্যাপী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা শহরের উজানিপাড়া মাঠে রাজহংসীর আদলে দৃষ্টিনন্দন রথ তৈরি করছেন কারুশিল্পীরা। গাছ, বাঁশ, বেত ও নানা উপকরণে বিশাল রথ তৈরি শুরু হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে।

সাতজন শিল্পী রাজহংসীর আদলে রথটি তৈরি করেছেন। দলের প্রধান ক্য অং সিং মারমা জানান, রথে কাগজের বিহার বসানো হয়, কারুকাজ করতে হয় বুদ্ধমূর্তির আসনটিতে। এমনভাবে রথ তৈরি করা হয়, যাতে এর সামনে এলেই উপাসকদের ধর্মীয় শ্রদ্ধা ও ভক্তি বোধ জাগ্রত হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন ও মঙ্গল কামনায় মোমবাতি প্রজ্বালনের বাতিঘরও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে স্থাপন করার প্রয়োজন পড়ে। তারপর রথে চাকা ও রশি সংযোজন এবং নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য বাঁশের ভেলা তৈরি করতে হয়। মঙ্গল রথের পাশাপাশি কুশপুত্তলিকার মতো ফুকসুমা নামে অশুভ দেবতার প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়ে থাকে। ফুকসুমা আনার কারণ হচ্ছে, মাঙ্গলিক কাজ অশুভ বা মারেরা (শত্রু) ভন্ডুল করার চেষ্টা করে, যদিও শেষ পর্যন্ত শুভ কাজেরই জয় হয়।

প্রবারণার এই রথটানা উৎসব কখন থেকে, কীভাবে এল জানতে চাওয়া হয় লেখক ও গবেষক মংক্য শোয়েনু নেভী মারমার কাছে। তিনি জানান, বোমাং রাজপরিবার ও তাঁদের অনুসারীরা ১৮০৪ সালে বান্দরবান শহরের গোড়াপত্তন করেন। বোমাং রাজা সাকহ্না ঞো চৌধুরীর আমলে ১৮৯৪ সালে বান্দরবানে স্থায়ীভাবে রাজবিহার স্থাপিত হয়েছে। তখন থেকে প্রবারণায় রথটানা উৎসব হয়ে আসছে। অর্থাৎ প্রায় ১৩১ বছর ধরে রথটানা উৎসব হয়ে আসছে বান্দরবানে।

প্রবারণার এই রথটানা উৎসব কখন থেকে, কীভাবে এল জানতে চাওয়া হয় লেখক ও গবেষক মংক্য শোয়েনু নেভী মারমার কাছে। তিনি জানান, বোমাং রাজপরিবার ও তাদের অনুসারীরা ১৮০৪ সালে বান্দরবান শহরের গোড়াপত্তন করে। বোমাং রাজা সাকহ্না ঞো চৌধুরীর আমলে ১৮৯৪ সালে বান্দরবানে স্থায়ীভাবে রাজবিহার স্থাপিত হয়েছে। তখন থেকে প্রবারণায় রথটানা উৎসব হয়ে আসছে। অর্থাৎ প্রায় ১৩১ বছর ধরে রথটানা উৎসব হয়ে আসছে বান্দরবানে।

আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে অশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস ভিক্ষুরা ‘বর্ষাবাস’ পালন করেন। এ সময় ভিক্ষুরা জরুরি কোনো কাজ ছাড়া বৌদ্ধবিহারের বাইরে যান না। বর্ষাবাসের সমাপনী অনুষ্ঠানকে বলা হয় প্রবারণা উৎসব। মারমা ভাষায় একে বলে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে।

মংক্য শোয়েনু নেভী মারমা বলেন, প্রবারণা বা ওয়াগ্যোয়াই উৎসবের একটি ঐতিহ্য হলো রথপূজার উৎসব। তবে এই রথপূজা উৎসব শুধু প্রবারণায় করতে হবে, এমন নয়। এটি মূলত বৃষ্টির দেবতা ও জলবুদ্ধ হিসেবে পরিচিত অর্হৎ (নির্বাণপ্রাপ্ত ধ্যানী) উপগুপ্তের উদ্দেশে বর্ষা শেষে শরৎকালে করা হয়। মারমা লোকসমাজের বিশ্বাস, উপগুপ্ত অর্হৎ ঝড়, বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমন করেন।

মারমা লোকসমাজের উপাখ্যান অনুযায়ী, হাইসাওয়াদি (হংসবতী রাজ্য, বর্তমান মিয়ানমার) রাজ্যে কোনো এককালে পাহাড় কেটে, বনজঙ্গল উজাড় করে চৈত্য বা জাদি নির্মাণ করা হয়েছিল। এ কারণে দেবতা রুষ্ট হওয়ায় ঝড়–বৃষ্টি–বন্যায় বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। হাইসাওয়াদিরাজ তখন স্বপ্নে দেখেন একমাত্র জলবুদ্ধ উপগুপ্ত এটির প্রশমন করতে পারবেন। কারণ, তিনি মৎস্যকন্যার সন্তান এবং জলে তাঁর অধিষ্ঠান। রথ টেনে অর্হৎ উপগুপ্তকে পূজা করে হাইসাওয়াদি রাজ্যে আবার সুখ ও শান্তি ফিরে আসে। তখন থেকে অর্হৎ উপগুপ্তের উদ্দেশে ঝড়, বৃষ্টি ও খরা-বন্যার বিপর্যয় প্রশমনের কামনায় রথটানা উৎসব ও জলে রথকে উৎসর্গ করে ভাসিয়ে দেওয়া ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। হংসবতী রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে রাজহংসীর আদলে রথ তৈরি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মারমা ও রাখাইনদের রথটানা উৎসব আজ, প্রবারণা পূর্ণিমায় এটি কীভাবে এল