‘৩ দিন খাবার খাইনি, শুধু শৌচাগারের পানি পান করেছি’
Published: 6th, October 2025 GMT
গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মিশনে অংশ নিয়েছিলেন মালয়েশিয়ান গায়িকা-অভিনেত্রী দুই বোন হেলিজা হেলমি ও হাজওয়ানি হেলমি। গত শনিবার (৪ অক্টোবর) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তাদের ফেরত পাঠায় ইসরায়েল। তারা ইসরায়েলি বাহিনীর আচরণকে ‘নৃশংস’ ও ‘নির্মম’ বলে বর্ণনা করেছেন।
আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি হামলা ও আটকের শিকার হওয়া মানবিক সহায়তা ফ্লোটিলার কর্মীদের বহনকারী একটি বিমান গত শনিবার ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এই ফ্লাইটে ৩৬ জন তুর্কি এবং ২৩ জন মালয়েশিয়ান নাগরিকসহ মোট ১৩৭ জন যাত্রী ছিলেন। ইসরায়েল থেকে ইস্তাম্বুলে পাঠানোর পর, এই কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ইস্তাম্বুল ফরেনসিক মেডিসিন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। পরে তারা সাক্ষী হিসেবে কৌঁসুলিদের কাছে জবানবন্দি দেন।
আরো পড়ুন:
প্রাক্তন প্রেমিকা দীপিকায় বুঁদ রণবীর কাপুর (ভিডিও)
‘বিবর’ সিনেমায় মিষ্টি জান্নাত
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন গায়িকা-অভিনেত্রী দুই বোন হেলিজা হেলমি ও হাজওয়ানি হেলমি। এ আলাপচারিতায় হাজওয়ানি হেলমি বলেন, “মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের সাহায্য করা। আমাদের অবরোধ থামাতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের খাদ্য ও ত্রাণ পৌঁছে দিতে হবে।”
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক অবস্থার ঘটনা বর্ণনা করে হাজওয়ানি বলেন, “আপনি কি কল্পনা করতে পারেন, আমরা শৌচাগারের পানি পান করেছি? অনেকে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তারা (ইসরায়েলিরা) বলেছিল, ‘তারা কি মারা গেছে? যদি না যায়, তাহলে এটা আমার সমস্যা না।’ তারা খুবই, খুবই নির্মম মানুষ। আমি মনে করি, বিশ্বকে বলা উচিত ইসরায়েলিরা খুবই নির্মম।”
ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে আটক থাকা অবস্থায় কয়েকদিন না খেয়ে ছিলেন। তা জানিয়ে হেলিজা হেলমি বলেন, “আমি ১ অক্টোবর খেয়েছিলাম। তারপর আজ (৪ অক্টোবর) প্রথম খাবার খেলাম। তিন দিন কোনো খাবার খাইনি, শুধু শৌচাগারের পানি পান করেছি।”
এই কষ্টের পরও তারা মুক্তি পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। হাজওয়ানি হেলমি বলেন, “আমরা তুর্কি জনগণের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। আমরা খুবই আবেগাপ্লুত। আপনাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ তুরস্ক।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র ইসর য় ল হ জওয় ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম বিশ্বকাপের নায়ক বার্নার্ড জুলিয়েন আর নেই
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট আবার হারালো তার এক সোনালি সন্তানকে। ১৯৭৫ সালের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম নায়ক, ক্যারিবীয় ক্রিকেটের সেই স্টাইলিশ অলরাউন্ডার বার্নার্ড জুলিয়েন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ট্রিনিদাদের ভ্যালসাইনে ৭৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার প্রস্থান যেন এক যুগের অবসান; সেই এক সময়ের, যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুধু ক্রিকেট খেলত না, ক্রিকেট অধিকার করত। আর সেই দাপুটে সূচনার গল্পে জুলিয়েন ছিলেন এক অবিচ্ছেদ্য নাম।
আরো পড়ুন:
ভোট দেননি তামিম
বিসিবি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ
১৯৭৫, যে বছর ইতিহাস লিখেছিলেন জুলিয়েন:
বিশ্বকাপের প্রথম আসর, ১৯৭৫ সাল। কেউ জানত না এই নতুন ফরম্যাটের ক্রিকেট ভবিষ্যতে এমন ইতিহাস রচনা করবে। কিন্তু বার্নার্ড জুলিয়েন জানতেন, এটি তার নিজের পরিচয় তুলে ধরার মঞ্চ। বাঁহাতি এই সিমার বলকে নাচাতে পারতেন দু’দিকেই, হাতে ছিল দারুণ ব্যাটিং সেন্স আর ফিল্ডিংয়ে ছিলেন একদম চঞ্চল।
গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার পরিসংখ্যান- ৪ উইকেট ২০ রানে। এরপর সেমিফাইনালে নিউ জিল্যান্ডকে ভস্ম করে শিকার করেন ৪ উইকেট ২৭ রানে। দুটি ম্যাচই ছিল ক্লাইভ লয়েডের দলের ফাইনালে ওঠার ভিত্তি।
আর লর্ডসে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, জুলিয়েনের ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ২৬ রান, যা দলের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে বড় ভূমিকা রাখে। সেদিনের জয় দিয়েই শুরু হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাম্রাজ্যের উত্থান। যে সাম্রাজ্যের প্রথম সৈনিকদের একজন ছিলেন বার্নার্ড জুলিয়েন।
ক্লাইভ লয়েডের আবেগঘন স্মৃতিচারণ:
সহযোদ্ধা ও অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড তাকে স্মরণ করলেন গভীর ভালোবাসায়, “ও সবসময় শতভাগ দিতো, দায়িত্ব থেকে কখনো পিছু হটেনি। ব্যাট হাতে বা বল হাতে আমি সবসময় তার ওপর নির্ভর করতে পারতাম। সে ছিল প্রকৃত অর্থেই এক সম্পূর্ণ ক্রিকেটার।”
লয়েড আরও বলেন, “ওর মধ্যে ছিল আনন্দ, ছিল বিনয়। লর্ডসে একবার টেস্ট জেতার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দর্শকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম, অটোগ্রাফ দিয়েছিলাম। সেই আনন্দে সবার আগে ছিল জুলিয়েন। মানুষ তাকে ভালোবাসতো, সম্মান করতো, যেখানেই গেছি।”
ক্ষণজীবী কিন্তু উজ্জ্বল এক ক্যারিয়ার:
জুলিয়েনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ছিল মাত্র চার বছরের, ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত। এই সময়ে তিনি খেলেছেন ২৪ টেস্ট ও ১২ ওয়ানডে। টেস্টে ৮৬৬ রান ও ৫০ উইকেট, ওয়ানডেতে ৮৬ রান ও ১৮ উইকেট; সংখ্যায় হয়তো বিশাল নয়, কিন্তু প্রভাব ছিল বিশুদ্ধ স্বর্ণের মতো।
তিনি ছিলেন সেই যুগের অংশ, যখন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে ছন্দ, সাহস আর গর্ব এক হয়ে উঠেছিল। যে সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের অপ্রতিরোধ্য প্রতীক।
শ্রদ্ধা জানাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড:
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সভাপতি কিশোর শ্যালো বলেন, “বার্নার্ড জুলিয়েনকে সম্মান জানাতে গিয়ে আমরা শুধু একজন ক্রিকেটার নয়, এক অধ্যায়ের প্রতিফলনকেও স্মরণ করছি। তার জীবন প্রমাণ করে, উদ্দেশ্যনিষ্ঠ জীবন কখনো শেষ হয় না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। জুলিয়েন আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবেন, যে উত্তরাধিকার কখনো ম্লান হবে না।”
এক উত্তরাধিকারের নাম- বার্নার্ড জুলিয়েন:
বার্নার্ড জুলিয়েনের গল্প কেবল একজন ক্রিকেটারের নয়, এটি এক জাতির জেগে ওঠার গল্প। তিনি খেলেছিলেন এমন এক সময়, যখন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট শিখছিল নিজের ছন্দে নাচতে। আর সেই সুরে তিনি ছিলেন প্রথম তালবাদক।
আজ তিনি নেই, কিন্তু তার বলের সুইং, ব্যাটের দৃঢ়তা, মাঠে ছুটে যাওয়া সেই প্রাণচঞ্চল হাসি; সবই রয়ে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের স্মৃতির পাতায়।
ঢাকা/আমিনুল