রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও দলটির সমর্থক ভোটাররা এ দেশের নাগরিক। তাদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কী ভাবছে, তা স্পষ্ট করে জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে এ প্রশ্ন উঠেছে।

সংলাপে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেটা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আছে সেটার ব্যাপারে আপনাদের (ইসির) বক্তব্য আমরা জানতে চাই। না হলে তো এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। আওয়ামী লীগের ভোটারদের তো আপনি বাদ দিতে পারবেন না। তারা তো দেশের নাগরিক। তারা যদিও অনুশোচনা করেনি, এখনো পর্যন্ত প্রায়শ্চিত্ত করেনি, অনুতপ্ত হয়নি। কিন্তু এরপরও তাদের বাদ দিয়ে তো নির্বাচনটা হতে পারে না।’

তবে একটি দল নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে না এমনটি নয় বলে মনে করছেন দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মারুফ কামাল খান। সংলাপে তিনি বলেন, অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিযোগিতামূলক বলে দুটি শব্দ আছে। একটি দল তাদের অতীত অপকর্মের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এটা চ্যালেঞ্জ যে তাদের সমর্থকেরা ভোটকেন্দ্রে আসবেন কি না। তবে নির্বাচনকে যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা যায় এবং মানুষকে উৎসাহিত করা গেলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে।

মারুফ কামাল খানের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছে দৈনিক খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামাল। আগামী নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক না হলে সমাজ আরও বিভাজনের দিকে যাবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

সংলাপে মোস্তফা কামাল বলেন, সবাই ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারলে সংঘাতের আশঙ্কা কমবে। ইসিকে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে এবং সমাজের কোনো অংশ বাদ থাকবে না।

দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ এখন নির্বাচনের বাইরে থেকে যাচ্ছে উল্লেখ করে মোস্তফা কামাল বলেন, সাধারণ মানুষের তো কোনো দোষ নেই। তারা তো ফ্যাসিবাদ না। উৎসবমুখর নির্বাচনের উৎসব অর্ধেক মানুষকে বাইরে রেখে হতে পারে না। তাদেরকে কীভাবে আনা যাবে, বিচারপ্রক্রিয়া কত দ্রুত করা যায়, সেটি নিয়ে ভাবতে হবে।

সংলাপে সাংবাদিক ও সম্পাদকেরা যেসব বিষয় তুলেছেন, সেগুলো নিয়ে শেষে কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তবে আওয়ামী লীগের ভোটারদের নিয়ে প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তিনি।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্বমহলকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থার প্রতি অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি স্বাধীন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বমহলকে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ জনগণ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের লালিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় প্রস্তুত।

শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা লিখেছেন।

প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সফরের সাফল্যগুলো তুলে ধরে দেওয়া ওই পোস্টে প্রেস সচিব আরও লিখেছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের দায়িত্বশীল বৈশ্বিক ভূমিকাকে আরও সুদৃঢ় করেছে। এতে গণতান্ত্রিক শাসন, মানবিক সংহতি ও গঠনমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি নতুনভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, অধ্যাপক ইউনূস গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দেন। সেখানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বিশ্বনেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন এবং গণতন্ত্র, মানবিক নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন।

শফিকুল আলম আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সফরে তিন রাজনৈতিক দলের ছয় প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘এটাই প্রথমবার এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিনিধিদল একসঙ্গে সফরে যোগ দিল। তারা কূটনীতিক, প্রবাসী নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব যোগাযোগ বিশ্বের কাছে শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে গোটা বাংলাদেশই গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে একসঙ্গে এগোচ্ছে।’

বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কৌশলগত বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, অধ্যাপক ইউনূস উচ্চপর্যায়ের একাধিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন, যা বাংলাদেশের বৈশ্বিক অংশীদারত্ব জোরদার ও যৌথ অগ্রাধিকারের প্রসারে ভূমিকা রাখে।

শফিকুল আলম জানান, ইতালি, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, আলবেনিয়া, কসোভো ও ভুটানের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে গণতান্ত্রিক শাসন, বাণিজ্য, জলবায়ু সহনশীলতা ও মানব উন্নয়নের বিষয় গুরুত্ব পায়।

প্রেস সচিব আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপো গ্র্যান্ডি, ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা এবং আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠক করেন।

এ ছাড়া অধ্যাপক ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নিয়ে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূতের সঙ্গেও তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়, যেখানে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বহুপক্ষীয় কূটনীতিতে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ভূমিকা উঠে আসে।

শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সফরে তিন রাজনৈতিক দলের ছয় প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘এটাই প্রথমবার এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিনিধিদল একসঙ্গে সফরে যোগ দিল। তারা কূটনীতিক, প্রবাসী নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব যোগাযোগ বিশ্বের কাছে শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে গোটা বাংলাদেশই গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে একসঙ্গে এগোচ্ছে।’

রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক নেতৃত্ব প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সফরের মূল বিষয় ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। সেখানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এক মিলিয়নের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রতি অব্যাহত মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। জাতিসংঘ সংস্থা ও দাতা দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সংকট যেন বৈশ্বিক মনোযোগ থেকে হারিয়ে না যায় সে আহ্বান জানান। প্রেস সচিব জানান, এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি আনতে সক্ষম হন।

শফিকুল আলম আরও বলেন, জবাবদিহি ও উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের অগ্রগতির একটি স্বাধীন মূল্যায়ন পরিচালনা করতে। এ অনুরোধ ঢাকার অর্থনৈতিক যাত্রাপথে আস্থা ও গঠনমূলক আন্তর্জাতিক মূল্যায়নের প্রতি উন্মুক্ততা প্রকাশ করে।

প্রেস সচিব জানান, জাতিসংঘ সফরে বিদেশে কর্মসংস্থান ও শ্রমশক্তি রপ্তানির নতুন সুযোগও উন্মোচিত হয়। কসোভো, আলবেনিয়া ও ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য শ্রমবাজার সম্প্রসারণের বিষয়ে সম্ভাবনা খোঁজা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব সুযোগ প্রবাসী আয় বাড়াতে এবং নতুন অংশীদার দেশের সঙ্গে জনগণের পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে সহায়ক হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইইউ প্রতিনিধি দলের স‌ঙ্গে বৈঠক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় জাতীয়
  • অচলাবস্থার পর পুরোদমে ক্লাস–পরীক্ষা শুরু, প্রচারমুখী রাকসুর প্রার্থীরা
  • অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্বমহলকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা