চওড়া তুলি আর গাঢ় রঙে লেখা ‘আল্লাহ ভরসা’, ‘মায়ের দোয়া’ অথবা ‘মনে রেখো’। আশপাশে লতাপাতায় ছাওয়া। চলমান রঙিন ছবিটা যেতে যেতে একসময় মিলিয়ে গেল গলির মোড়ে। তবু মনের অজান্তে লেগে রইল সে রং।
গদিতে কখনো খাইবার মেল–এর নায়িকা নীলো, কখনো বেদের মেয়ে জোছনার চেহারা। ডালনায় আঁকা হলুদ বাঘ আর বিড়ালের পার্থক্য ছিল সামান্যই। চেসিসের গায়ে আঁকা কল্পনার বোরাক উড়তে চাইছে আকাশে। নায়িকার মতো একই গোলাপি রঙের আভা নায়কের মুখেও। এসব শুধু ছবি নয়! সময় ও সমাজের প্রত্যাশা-পছন্দের প্রতীক হয়ে উঠে এসেছিল এই ভ্রাম্যমাণ আর্ট গ্যালারিতে। এই মাধ্যমে ধাপে ধাপে কখনো ঐতিহাসিক স্থাপনা, কখনো ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতীক, কখনোবা গুরুত্ব পেয়েছে জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের দৃশ্য।
অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে ওঠা এ লোকশিল্পই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ২০২৩ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকোর বৈশ্বিক বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় ‘রিকশা ও রিকশাচিত্র’। কিন্তু সেই শিল্প এখন টিকে আছে অন্য মাধ্যম নির্ভর হয়ে। রিকশায় নেই রিকশাচিত্র, বরং পাওয়া যাবে শৌখিন বস্তুতে। ঢাকা শহরেও এখন হাতে আঁকা রিকশা আর্টের চল নেই। শিল্পীরা খুঁজে নিয়েছেন বিকল্প পেশা। পাঁচ দশকের পুরোনো রিকশাচিত্রশিল্পীরা বলছেন, ডিজিটাল আর্ট, রিকশার জন্য ব্যয় হ্রাস, প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না পাওয়াতেই স্বমাধ্যমে স্থান হারিয়েছে এ শিল্প। গবেষকেরা বলছেন, এ বিষয়ে সরকারেরও সুনির্দিষ্ট কোনো ভাবনা না থাকাই বড় কারণ।
ছবি আঁকা যে হয় না, তা জানা গেল গত শতকের সত্তর ও আশির দশকের তুমুল ব্যস্ত রিকশাচিত্রশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে। এই মাধ্যমে সবচেয়ে প্রবীণ শিল্পীরা এখন ছবি আঁকেন ঘরের শৌখিন বস্তু টেবিল, চেয়ার, হারিকেন, কেটলি বা ট্রে, আয়না থেকে শুরু করে শাড়ি বা সানগ্লাসের জন্য।ছিল না প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিএ দেশে পঞ্চাশের দশক থেকে রিকশাচিত্রশিল্পের এই অপ্রাতিষ্ঠানিক ধারার নেতৃত্ব দিয়েছেন আর কে দাস, আলাউদ্দিন, আলীনুর, দাউদ উস্তাদের মতো রিকশাচিত্রশিল্পীরা। এই অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পীদের মাধ্যমেই বিকশিত হয়েছে এ দেশের রিকশাচিত্র, সিনেমা ব্যানার পেইন্টিং ও ট্রাক আর্ট। লন্ডন, জাপান, নেপালে বাংলাদেশের রিকশা আর্ট নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছে। বাংলাদেশের আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে সবচেয়ে বড় প্রদর্শনীটি হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। যেখানে রিকশা ও বেবিট্যাক্সি–চিত্রশিল্পীদের ৫০০ শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছিল। কিন্তু এ শিল্পটি কখনো মূলধারার শিল্পীদের কাজের সঙ্গে মর্যাদা পায়নি।
১৯৬৭ সাল থেকে চলচ্চিত্রের ব্যানার ও পরবর্তী রিকশাচিত্রের কাজ করা শিল্পী হানিফ পাপ্পুও এখন প্রবীণ হয়েছেন। রাজধানীর হোসেনি দালান এলাকার বাসিন্দা এই শিল্পী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পর আরও ক্ষতি হয়েছে। এটা এখন বড়লোকের শিল্প। একসময় সবাই মনে করত এটা হলো গরিব মানুষের আর্ট। স্বীকৃতির পর যখন রিকশা আর্টকে এত সম্মান দেওয়া হচ্ছে, তত দিনে রিকশা আর্ট চলে গেছে শখের জিনিসের গায়ে। ঢাকা শহরে এখন আর রিকশার জন্য ছবি আঁকা হয় না বললেই চলে।’
ছবি আঁকা যে হয় না, তা জানা গেল গত শতকের সত্তর ও আশির দশকের তুমুল ব্যস্ত রিকশাচিত্রশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে। এই মাধ্যমে সবচেয়ে প্রবীণ শিল্পীরা এখন ছবি আঁকেন ঘরের শৌখিন বস্তু টেবিল, চেয়ার, হারিকেন, কেটলি বা ট্রে, আয়না থেকে শুরু করে শাড়ি বা সানগ্লাসের জন্য। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাঁদের দিয়ে ছবি আঁকিয়ে বাজারজাত করে। এই রিকশাচিত্রশিল্পীরা বলছেন, ২০০০ সালের প্রথম দিক থেকে কম দামে ডিজিটাল প্রিন্টে রিকশাচিত্র শুরু হতেই গুরুত্ব হারিয়েছে হাতে আঁকা শিল্পটি।
বাংলাদেশের রিকশা আর্ট একটি মৌলিক শিল্প। এই আর্ট আর পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সন্দেহ নেই, ডিজিটাল প্রিন্টের সময় থেকেই শিল্পের মূল্য কমতে শুরু করে।প্রবীণ শিল্পী এস এম সামসুল হক সুলভে ডিজিটাল প্রিন্টস্বাধীনতা-উত্তরকালের রিকশাচিত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন শিল্পী মো.
প্রবীণ শিল্পী এস এম সামসুল হক এ কাজ শুরু করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পরপরই। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের রিকশা আর্ট একটি মৌলিক শিল্প। এই আর্ট আর পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সন্দেহ নেই, ডিজিটাল প্রিন্টের সময় থেকেই শিল্পের মূল্য কমতে শুরু করে।’
শিল্পী সৈয়দ আহমেদ হোসেনের আঁকা কিছু রিকশাচিত্রউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রব ণ শ ল প প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
২৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি, শিয়ালের মাংস কি আসলেই বাত সারায়
দুলাল মাংস বিতান নামে একটি দোকানে শিয়ালের মাংস বিক্রি হচ্ছে—এমন খবর পেয়ে ৩ অক্টোবর অভিযান চালায় বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন বিভাগ। উদ্ধার করা হয় ১৫ কেজি শিয়ালের মাংস।
দুলাল মাংস বিতান নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানি পূর্ব বাজারে অবস্থিত। অভিযানকারীরা জানিয়েছেন, দুর্বৃত্তরা ছয়টি শিয়াল ধরেছিল। এর মধ্যে চারটিকে হত্যা করেছে। বাকি দুটি শিয়াল জীবিত উদ্ধার করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালীভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অ্যানিমেল রাইট বিডি-৬৪’-এর প্রতিষ্ঠাতা রাইমন চৌধুরী রনিম প্রথম আলোকে বলেন, শিয়ালের মাংস ও তেল বাতব্যথা দূর করে বলে একটা বিশ্বাস কারও কারও মধ্যে আছে। নোয়াখালীতেও অনেকে এটা বিশ্বাস করেন। এ কারণে শিকারিরা গোপনে শিয়াল শিকার করে মাংস বিক্রি করেন। প্রতি কেজি মাংসের দাম আড়াই হাজার টাকার আশপাশে।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী, শিয়াল তফসিল-২-ভুক্ত প্রাণী। মানে হলো, শিয়াল রক্ষিত বন্য প্রাণী হিসেবে স্বীকৃত।
শিয়াল নিধন থামছে না। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ১২টি অভিযানে ৬০ কেজি শিয়ালের মাংস উদ্ধার করা হয়েছে।আইনে রক্ষিত বন্য প্রাণী নিধনের শাস্তির বিষয়ে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স গ্রহণ না করে কোনো বন্য প্রাণী বা বন্য প্রাণীর কোনো অংশ বা মাংস সংরক্ষণ করলে দণ্ড হিসেবে এক বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কিন্তু শিয়াল নিধন থামছে না। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ১২টি অভিযানে ৬০ কেজি শিয়ালের মাংস উদ্ধার করা হয়েছে।
বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক আবদুল্লাহ আস সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, শিয়ালের মাংস খেলে হাঁটুর ব্যথা, বাতব্যথা ও হাঁপানি রোগ সেরে ওঠে—এই বিশ্বাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তারপরও শিয়াল মেরে মাংস কেনাবেচা হয়।
আরও পড়ুনক্যাম্পাসে শিয়ালের দিনরাত্রি২০ জুন ২০২০সাদিক বলেন, ফাঁদ পেতে ধরা শিয়াল একেকটি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় কিনে নেয় কিছু লোক। এরপর কিছু কিছু মাংসের দোকানে শিয়ালের মাংস বিক্রি হয়। তাঁর তথ্য অনুযায়ী, বিগত পাঁচ বছরে শিয়াল হত্যার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে ৪৭টি। গত দুই মাসে নোয়াখালীতে শিয়াল হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৫টি। এর মধ্যে ৪টি মামলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
শিয়ালের মাংস খেলে হাঁটুর ব্যথা, বাতব্যথা ও হাঁপানি রোগ সেরে ওঠে—এই বিশ্বাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তারপরও শিয়াল মেরে মাংস কেনাবেচা হয়।বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক আবদুল্লাহ আস সাদিকশিয়ালের সংখ্যা কমছেশুধু বনাঞ্চলে নয়, শিয়াল বাস করে মানুষের বসতির কাছেই। ঝোপঝাড়, পুকুরপাড় ও ফসলের মাঠ শিয়ালের বাসস্থান। বন ও ঝোপঝাড় উজাড় হয়ে যাওয়া এবং নিধনের কারণে শিয়াল কমছে।
প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন ২০১৫ সালে শিয়ালকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। বন্য প্রাণীর ওপর হুমকির মাত্রা অনুযায়ী আইইউসিএন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, বিপন্ন, ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রায় ঝুঁকিপূর্ণ—মোট চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে থাকে।
ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্তকালে আইইউসিএন বলছে, শিয়াল একসময় সারা দেশে দেখা গেলেও এখন সেটি মূলত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। যমুনা নদীর পশ্চিমাংশে ও মৌলভীবাজার সীমান্তবর্তী এলাকায় কিছু শিয়াল দেখা যায়।
আরও পড়ুনহঠাৎ দেখা শিয়ালছানা২২ আগস্ট ২০২৪জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশে একসময় শিয়াল দেখা যেত। আমার গ্রামে একসময় শিয়াল ছিল। এখন আর দেখা যায় না।’
তিনি বলেন, গ্রামের যে ঝোপঝাড়ে শিয়াল থাকতে পছন্দ করে, সেগুলো পরিষ্কার করে ফসল চাষ করা হচ্ছে। অথবা বাড়িঘর তৈরি হয়েছে। ফলে শিয়াল অস্তিত্বসংকটে পড়েছে।
শিয়ালের সংখ্যা ঠিক কত কমেছে, সেটা নিয়ে কোনো গবেষণা নেই বলে জানান এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, গবেষণা না থাকলে বন্য প্রাণী নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অভিমত শিয়ালের সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
দুটি কারণে প্রকৃতিতে শিয়ালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো শিয়াল ইঁদুর ও এ-জাতীয় প্রাণী শিকার করে কমিয়ে রাখে। দ্বিতীয় কারণ, শিয়াল নানা রকম ফলমূল খেয়ে বীজ ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখে।
বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক আবদুল্লাহ আস সাদিক বলেন, বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট নিয়মিত স্থানীয় জনগণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা, সেমিনার, প্রচার ও কমিউনিটি মিটিং (বৈঠক) আয়োজন করে শিয়ালের পরিবেশগত উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করে আসছে।
গ্রামের যে ঝোপঝাড়ে শিয়াল থাকতে পছন্দ করে, সেগুলো পরিষ্কার করে ফসল চাষ করা হচ্ছে। অথবা বাড়িঘর তৈরি হয়েছে। ফলে শিয়াল অস্তিত্বসংকটে পড়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজকী বলছেন চিকিৎসকেরাগেঁটে বাত (গাউট) এবং পুরোনো ও দীর্ঘস্থায়ী গ্রন্থিবাতে (রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস) ভুগছেন দেশের বহু মানুষ। তবে তাঁদের সংখ্যা কত, সে বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ের কোনো পরিসংখ্যান নেই।
২০২৪ সালে জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ‘ল্যানসেটে’ প্রকাশিত দুটি নিবন্ধ থেকে জানা যায়, দেশে গেঁটে বাতের রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৬৫ হাজার।
শিয়ালের তেল ও মাংস খেয়ে বাত সারানোর চেষ্টা করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে। নিরাপদ হচ্ছে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া।বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু শাহিনজ্বালাময় বা দাহযুক্ত বাতই হচ্ছে গেঁটে বাত। এর ফলে এক বা একাধিক অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়, লালচে ভাব হয় এবং ওই সব স্থানে গরম অনুভূত হয়। নারীর চেয়ে পুরুষের এ রোগ বেশি হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ঝুঁকি বাড়ে। ঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না নিলে পরিস্থিতি জটিল হয়, মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, চলাফেরা বাধাগ্রস্ত হয়।
পুরোনো ও দীর্ঘস্থায়ী গ্রন্থিবাতে ভুগছেন ২ লাখ ১২ হাজার মানুষ।
এ রোগে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়, অস্থিসন্ধি ফুলে যায় এবং কখনো কখনো অস্থিসন্ধি শক্ত ও অনমনীয় হয়ে যায়। এ ধরনের বাতে শরীরের যেকোনো অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ সমস্যা শুরু হয় সাধারণত হাত ও পায়ের বিভিন্ন সন্ধি থেকে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু শাহিন প্রথম আলোকে বলেন, শিয়ালের মাংস খেলে বা তেল ব্যবহার করলে বাতব্যথা দূর হয়—গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের বিশ্বাস আগে অনেক বেশি ছিল। এখন কমে আসছে। কারণ, চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ছে, শিক্ষার হারও বাড়ছে।
জ্বালাময় বা দাহযুক্ত বাতই হচ্ছে গেঁটে বাত। এর ফলে এক বা একাধিক অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়, লালচে ভাব হয় এবং ওই সব স্থানে গরম অনুভূত হয়। নারীর চেয়ে পুরুষের এ রোগ বেশি হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ঝুঁকি বাড়ে। ঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না নিলে পরিস্থিতি জটিল হয়, মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, চলাফেরা বাধাগ্রস্ত হয়।অধ্যাপক আবু শাহিন বলেন, শিয়ালের তেল ও মাংস খেয়ে বাত সারানোর চেষ্টা করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে। নিরাপদ হচ্ছে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া।
বাত সারাতে কবিরাজি চিকিৎসা এ অঞ্চলের অনেক দেশেই প্রচলিত আছে। তবে এর কার্যকারিতার প্রমাণ নেই। যেমন ভারতের ওডিশায় শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর মাংস খেলে বাতব্যথা কমে কি না, তা নিয়ে একটি গবেষণা হয়েছিল। ২০২০ সালে প্রকাশিত গবেষণাটির শিরোনাম ‘ইউজ অব অ্যানিমেল অ্যান্ড অ্যানিমেল প্রোডাক্টস ফর রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ট্রিটমেন্ট: অ্যান এক্সপ্লোরেটিভ স্টাডি ইন ওডিশা, ইন্ডিয়া’।
১১৩ জন রোগীর ওপর করা ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর মাংস খেলে বাতব্যথা কমে, এমন প্রমাণ তারা পায়নি।