রাজনীতিতে ডান ও বামের বিভাজন মুছে যাচ্ছে: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
Published: 7th, October 2025 GMT
দেশের রাজনীতিতে আদর্শিক বিভাজন থাকছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, কোনো একটি মতবাদের প্রতি পুরোপুরি সমর্পণ—সেটা আর নেই। কে ডান আর কে বাম, তার মধ্যে বিভেদ দেখা যাচ্ছে না।
রাজনীতির সঙ্গে অনেক মাত্রা যুক্ত হয়েছে, যেমন ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক। ফলে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে তার সঙ্গে খাপ খাওয়াবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘দেশের যে পরিস্থিতি তাতে মানুষ এখন টেকসই, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক সমাজে উত্তরণ ঘটাতে চায়। আপাতত সেটা হলেই আমরা সন্তুষ্ট। ওই ধরনের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে আমরা নানা চিন্তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতে পারব।’ সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ এমন সমাজ চায়, যেখানে বৈষম্য কমে যাবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বাজারব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে গেছে। ফলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে বাজারব্যবস্থার মধ্যে কীভাবে ন্যায্য সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায়, সেটা দেখার বিষয়।
‘অ্যাপোসলস অব ডেভেলপমেন্ট: সিক্স ইকোনমিস্টস অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড দে মেইড’ শীর্ষক বই নিয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে বিআইডিএস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহামান সোবহান। বক্তব্য দেন বইটির লেখক ডেভিড সি এঙ্গারম্যান।
দক্ষিণ এশিয়ার ছয়জন অর্থনীতিবিদ—বাংলাদেশের রেহমান সোবহান, পাকিস্তানের মাহবুব উল হক, শ্রীলঙ্কার লাল জয়বর্ধনে, ভারতের অমর্ত্য সেন, জগদীশ ভাগবতী ও মনমোহন সিং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে উন্নয়নশীল বিশ্বের উন্নয়ন তত্ত্বে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছেন। এই বিষয়ে অ্যাপোসলস অব ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক বই লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইতিহাসের অধ্যাপক ডেভিড সি এঙ্গারম্যান।
যে ছয়জন অর্থনীতিবিদকে নিয়ে বইটি রচিত, তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন বাংলাদেশের অধ্যাপক রেহমান সোবহান নিজের বন্ধুদের নিয়ে আলোকপাত করেন। কার চিন্তাধারা কেমন ছিল, তাঁদের মধ্যে কী নিয়ে বিতর্ক হতো, এসব নিয়ে কথা বলেন তিনি।
বরাবরের মতো ন্যায্যতা ও বৈষম্য নিয়ে কথা বলেন রেহমান সোবহান। বলেন, ‘এমন এক সময় ছিল, যখন অনেকেই মনে করতেন, উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রয়োজন। কিন্তু পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্য বাজারব্যবস্থার কারণে ছিল না, ছিল রাষ্ট্রীয় কারণে। পাকিস্তান রাষ্ট্রই এই বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। সে কারণে স্বাধীনতার পর জাতীয়করণের প্রয়োজন হয়েছিল। কেননা তখন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পুঁজি বা পুঁজিপতি ছিল না।’
কিন্তু এত দিন ধরে এত কিছু করার পরও সমাজে বৈষম্য থেকে যাচ্ছে। এর কোনো সংশোধন ঘটছে না বলে আক্ষেপ করেন রেহমান সোবহান। এই বৈষম্য দূর না হলে সমাজে ন্যায্যতা আসবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও আলোচনা করেন বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও মোস্তাফিজুর রহমান এবং নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র জন ত যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে হিমাগারে নারী ও কিশোরীকে পিন ফুটিয়ে নির্যাতন
রাজশাহীর একটি হিমাগারে এক তরুণ, নারী ও কিশোরীকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা ওই হিমাগারের অফিসকক্ষে ভাঙচুর চালিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকায় সরকার কোল্ডস্টোরেজের অফিসকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ওই হিমাগারের মালিক রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার ওরফে জিকো (৪৫), মেয়ে আঁখি (৩৫) ও হাবিবাকে (৪০) অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এয়ারপোর্ট থানা-পুলিশ তাঁদের আটক করে নিয়ে যায়। এর আগে পুলিশ আহত তিনজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায়।
ভুক্তভোগীদের বাড়ি পবা উপজেলার কুঠিপাড়া গ্রামে। নির্যাতনের শিকার তরুণ (২৭) রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। আর নারী (৩০) ও কিশোরী (১৩) ওই তরুণের খালাতো বোন। তাঁদের নির্যাতনের ঘটনায় ওই তরুণের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হিমাগারের অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে তিনজনকে লাঠি, বাঁশ, হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে শরীরে সেফটি পিন ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়।
দুপুরে হিমাগারে বসে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার ওই নারীর কোলে শিশুসন্তান দেখা যায়। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। তাঁর কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। আহত মেডিকেল শিক্ষার্থীর দুই হাতে জখম দেখা যায়। পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। আর ওই কিশোরীর ঠোঁটে রক্ত দেখা যায়।
নির্যাতনের শিকার নারী জানান, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। বিষয়টি তাঁর ছেলেমেয়েরা ভালোভাবে নিতেন না। তাঁদের সন্দেহ, মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তাঁর (ওই নারী) অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ওই নারী বলেন, মঙ্গলবার সকালে তাঁকে ফোন করে হিমাগারে ডাকা হয়। তখন তিনি তাঁর খালাতো ভাই ও ছোট বোনকে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও মেয়েরা তাঁদের ধাক্কা দিতে দিতে অফিসকক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর কর্মচারীদের সহায়তায় নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনতে পেয়ে এগিয়ে আসেন। তাঁরা অফিসের দরজা খুলতে বললেও খোলা হচ্ছিল না। একপর্যায়ে দরজা খোলা হয়। ওই কিশোরীর দাবি, তাঁকে ও তাঁর খালাতো বোনকে মোহাম্মদ আলী সরকারের দুই মেয়ে সারা শরীরে সেফটি পিন দিয়ে ফুটিয়ে নির্যাতন করেছেন।
এ ঘটনা জানাজানি হলে বেলা ১১টা থেকে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন হিমাগারের ভেতর মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলেমেয়েদের অবরুদ্ধ করে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। বের করলেই হামলার শঙ্কায় পুলিশ তাঁদের নিয়ে যাচ্ছিল না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুর দুইটার দিকে স্থানীয়রা অফিসকক্ষের সিসিটিভি ক্যামেরা ও কাচের জানালাগুলো ভেঙে ফেলেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হয়। তারা আসার পর তিনজনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ বিষয়ে এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান, তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।