দেশের রাজনীতিতে আদর্শিক বিভাজন থাকছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, কোনো একটি মতবাদের প্রতি পুরোপুরি সমর্পণ—সেটা আর নেই। কে ডান আর কে বাম, তার মধ্যে বিভেদ দেখা যাচ্ছে না।

রাজনীতির সঙ্গে অনেক মাত্রা যুক্ত হয়েছে, যেমন ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক। ফলে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে তার সঙ্গে খাপ খাওয়াবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘দেশের যে পরিস্থিতি তাতে মানুষ এখন টেকসই, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক সমাজে উত্তরণ ঘটাতে চায়। আপাতত সেটা হলেই আমরা সন্তুষ্ট। ওই ধরনের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে আমরা নানা চিন্তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতে পারব।’ সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ এমন সমাজ চায়, যেখানে বৈষম্য কমে যাবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বাজারব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে গেছে। ফলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে বাজারব্যবস্থার মধ্যে কীভাবে ন্যায্য সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায়, সেটা দেখার বিষয়।

‘অ্যাপোসলস অব ডেভেলপমেন্ট: সিক্স ইকোনমিস্টস অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড দে মেইড’ শীর্ষক বই নিয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে বিআইডিএস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহামান সোবহান। বক্তব্য দেন বইটির লেখক ডেভিড সি এঙ্গারম্যান।

দক্ষিণ এশিয়ার ছয়জন অর্থনীতিবিদ—বাংলাদেশের রেহমান সোবহান, পাকিস্তানের মাহবুব উল হক, শ্রীলঙ্কার লাল জয়বর্ধনে, ভারতের অমর্ত্য সেন, জগদীশ ভাগবতী ও মনমোহন সিং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে উন্নয়নশীল বিশ্বের উন্নয়ন তত্ত্বে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছেন। এই বিষয়ে অ্যাপোসলস অব ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক বই লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইতিহাসের অধ্যাপক ডেভিড সি এঙ্গারম্যান।

যে ছয়জন অর্থনীতিবিদকে নিয়ে বইটি রচিত, তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন বাংলাদেশের অধ্যাপক রেহমান সোবহান নিজের বন্ধুদের নিয়ে আলোকপাত করেন। কার চিন্তাধারা কেমন ছিল, তাঁদের মধ্যে কী নিয়ে বিতর্ক হতো, এসব নিয়ে কথা বলেন তিনি।

বরাবরের মতো ন্যায্যতা ও বৈষম্য নিয়ে কথা বলেন রেহমান সোবহান। বলেন, ‘এমন এক সময় ছিল, যখন অনেকেই মনে করতেন, উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রয়োজন। কিন্তু পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্য বাজারব্যবস্থার কারণে ছিল না, ছিল রাষ্ট্রীয় কারণে। পাকিস্তান রাষ্ট্রই এই বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। সে কারণে স্বাধীনতার পর জাতীয়করণের প্রয়োজন হয়েছিল। কেননা তখন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পুঁজি বা পুঁজিপতি ছিল না।’

কিন্তু এত দিন ধরে এত কিছু করার পরও সমাজে বৈষম্য থেকে যাচ্ছে। এর কোনো সংশোধন ঘটছে না বলে আক্ষেপ করেন রেহমান সোবহান। এই বৈষম্য দূর না হলে সমাজে ন্যায্যতা আসবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও আলোচনা করেন বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও মোস্তাফিজুর রহমান এবং নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র জন ত যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

‘প্রথম আলো সব সময় নিপীড়িত মানুষের পাশে রয়েছে’

‘প্রথম আলো সব সময় নিপীড়িত মানুষের পাশে রয়েছে। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আদিবাসীদের বিপদে-আপদে প্রথম আলো পাশে থেকেছে। তারা সবাই হয়তো প্রথম আলো পড়তে পারে না; কিন্তু সবাই ধারণ করে যে প্রথম আলো তাদের পাশে আছে। এটাই তাদের শক্তি ও সাহস।’

প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আয়োজিত সুধী সমাবেশে এ কথা বলেন উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি হিংগু মুরমু। আজ রোববার বিকেলে নবাবগঞ্জ ক্লাব (টাউন ক্লাব) মিলনায়তনে আয়োজিত এ সমাবেশে শিক্ষক, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নিয়ে প্রথম আলো সম্পর্কে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।

বিকেল চারটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন।

অনুষ্ঠানে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুলতানা রাজিয়া বলেন, প্রতিবছর প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চার দিনব্যাপী ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। এত সমৃদ্ধ লেখা এত বেশি পরিমাণে থাকে, যা এক দিনে পড়ে শেষ করা যায় না। পরদিন আবার নতুন লেখা আসে। সম্পাদক মহোদয়ের কাছে অনুরোধ, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ক্রোড়পত্রগুলো যেন নভেম্বর মাসজুড়ে একটি একটি করে ছাপা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুলতানা রাজিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ