দেবীদ্বারে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ২ যুবক গ্রেপ্তার
Published: 7th, October 2025 GMT
কুমিল্লার দেবীদ্বারে এক গৃহবধূকে (২১) দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চান্দিনা পৌর এলাকার বেলাশর গ্রামের আবুল কালাম (৩০) ও দেবীদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের সানারপাড় পশ্চিমপাড়া এলাকার মো. আমির হোসেন (২৯)। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করেন পুলিশ ও সেনাসদস্যরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ধর্ষণের ঘটনায় গতকাল রাতেই ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, প্রায় তিন মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়। অভিযুক্ত আমির হোসেন তাঁর (বাদী) পূর্বপরিচিত। একসময় একটি মামলা থেকে জামিন করতে তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন। পরে আমির তাঁদের উপজেলার সানানগর এলাকায় বাসা ভাড়া করে দেন। প্রায়ই ওই বাসায় তিনি যাতায়াত করতেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১ অক্টোবর রাতে স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাঁদের পূর্বপরিচিত আবুল কালাম প্রথমে গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। পরদিন রাতে আমির হোসেন ও কালাম আবার ওই বাসায় যান। একপর্যায়ে স্বামীকে দিয়ে কৌশলে খাবার আনতে দূরের একটি দোকানে পাঠান। এ সুযোগে তাঁরা গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। লজ্জা ও ভয় থেকে ভুক্তভোগী প্রথমে বিষয়টি গোপন করলেও পরে তাঁর এক বান্ধবীকে খুলে বলেন। এরপর ৪ অক্টোবর তাঁরা চান্দিনা সেনাক্যাম্পে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর ওপর পরিকল্পিতভাবে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। সোমবার রাতে তাঁদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি।’
দেবীদ্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সহিংসতার পেছনে ইউপিডিএফের উসকানি দায়ী: জেএসএস
খাগড়াছড়ি জেলা সদর এবং গুইমারা উপজেলায় সংঘটিত সহিংসতার ঘটনার জন্য ইউপিডিএফের উসকানিকে দায়ী করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। পাহাড়ি ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ইউপিডিএফ ছাত্রদের আন্দোলনে উসকানি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। এ ঘটনায় জেএসএসের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে।
‘খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করা হয়। আজ রোববার প্রকাশিত এই প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে জেএসএসের তথ্য ও প্রচার বিভাগ। জেএসএসের রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা প্রতিবেদন প্রকাশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এর প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে অবরোধ ডাকা হয়। অবরোধের মধ্যেই গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে গুইমারার রামেসু বাজার। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিতে তিন পাহাড়ি তরুণ নিহত হন। আর আগুন দেওয়া হয় বাজারে। এতে ৪০টি দোকান ও ৫০টি বসতঘর পুড়ে যায়। এদিকে গত মঙ্গলবার খাগড়াছড়ির ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দেয় মেডিকেল বোর্ড।
রোববার প্রকাশিত জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া পাহাড়ি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদকারী জুম্ম ছাত্র-জনতার সঙ্গে ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বাঙালিদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন পাহাড়ি ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারার রামেসু বাজারে পাহাড়ি বসতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বাঙালি ও বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা একসঙ্গে হামলা চালায়। এতে ৩ পাহাড়ি নিহত হন। আহত হয়েছেন ২০ জনের বেশি। রামেসু বাজারে আগুনে ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাহাড়ি ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং পাহাড়ে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি সদরে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই সমাবেশে ইউপিডিএফের কতিপয় লোক প্রবেশ করে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে এবং উসকানি দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। একইভাবে গুইমারা ঘটনাও ইউপিডিএফের উসকানিতে সহিংস রূপ লাভ করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।
জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের প্রতিবাদকারী বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উক্যেনু মারমাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক জোরপূর্বক তুলে নেওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাঁর নেতৃত্বে ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছিল। তবে ২৭ ও ২৮ অক্টোবর অবরোধ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল সাংগঠনিকভাবে যুক্ত নয় বলে বিবৃতি দেয়। এ থেকে বোঝা যায় আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ইউপিডিএফ ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে নানাভাবে উসকানি দিয়েছিল। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে অবস্থানকারী ইউপিডিএফের সমর্থক, পরামর্শক ও সহযোগী হিসেবে পরিচিত দু-একজন ব্লগার ও ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভেদ, উসকানিমূলক এবং হঠকারী বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
পাহাড়ে নারী ও শিশুদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত ২৯ জন পাহাড়ি নারী ও শিশু মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। দশকের পর দশক ধরে নারী ও শিশুরা সহিংসতার শিকার হলেও সুষ্ঠু বিচার পেয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত নেই। এমনকি সঠিক তদন্তও হয় না।
প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
তবে জেএসএসের অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, এটি একটি ছাত্র-জনতার আন্দোলন। জেএসএসের বিবৃতি বা প্রতিবেদন দেখলে বোঝা যায়, জুম্ম ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে বিতর্কিত করে প্রত্যক্ষভাবে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে তারা।