সিদ্ধান্তের আগে পুনর্মূল্যায়ন জরুরি
Published: 8th, October 2025 GMT
তীব্র গ্যাস–সংকটের কারণে সার কারখানাগুলো যখন সক্ষমতার ৬০ শতাংশ অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে, তখন এ খাতে গ্যাসের দাম এক ধাপে ১৬ টাকা থেকে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করার সুপারিশ কোনো বিবেচনাতেই যৌক্তিক হতে পারে না। কারণ, এর প্রভাব শুধু গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এতে নিশ্চিত করেই সারের দাম বাড়বে এবং কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। টানা মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে এবং জীবনযাত্রায় নানা সংকট তৈরি হচ্ছে, সে সময়ে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সেটা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’–এর মতোই হবে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, সোমবার সার কারখানায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে শুনানি করে বিইআরসি। পেট্রোবাংলা ও ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি ৪০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়। শুনানিতে বেশির ভাগ আমন্ত্রিত সংগঠন অনুপস্থিত ছিল না। সারের দাম বাড়লে পুরো কৃষি ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়বে, এমন দাবি করে শুনানি বর্জন করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব। এরপরও বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন দল সার কারখানার জন্য ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম ৩০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়। জনমত গ্রহণের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হলো দাম বাড়ালেই যে সার কারখানাগুলো চাহিদামতো গ্যাসের জোগান পাবে, তার নিশ্চয়তা কী আছে। এর আগে ২০২২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিল্পে এক লাফে ১৭৯ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছিল। তাতে সার কারখানায় ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১৬ টাকা হয়েছিল গ্যাসের মূল্য। তাতে আমদানিনির্ভরতা কোনো অংশেই কমেনি, বরং বেড়েছে। একদিকে সার উৎপাদন না হওয়া সত্ত্বেও কারখানার কর্মকর্তা-কর্মীদের বেতন–ভাতা ও রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে সরকারি অর্থ ব্যয় হচ্ছে, অন্যদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার খরচ করে উচ্চমূল্যে গ্যাস আমদানিও চলছে। এই বাস্তবতা এটাই প্রমাণ করে যে সার উৎপাদনের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারও আগের সরকারের ভুল নীতির মধ্যেই আটকে আছে।
ধানসহ কৃষিপণ্য উৎপাদনে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান ইউরিয়া সার। দেশে প্রতিবছর ৩০-৩২ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে। কৃষি উৎপাদন স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে প্রতিবছর চাহিদার অর্ধেকের বেশি ইউরিয়া বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। অথচ দেশে ইউরিয়ার উৎপাদন খরচ আমদানির তুলনায় অর্ধেকের কাছাকাছি। গত অর্থবছরে একমাত্র ঘোড়াশাল-পলাশ সার কারখানা ছাড়া বাকি সব কটি কারখানা সক্ষমতার চেয়ে অনেক কম উৎপাদন করেছে। এমনকি জামালপুরে যমুনা সার কারখানার উৎপাদনসক্ষমতা যেখানে ৫ দশমিক ৬ লাখ টন, সেখানে উৎপাদিত হয়েছে মাত্র ৪ হাজার টন।
কৃষি উৎপাদন ও খাদ্যনিরাপত্তার মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল প্রশ্নটি যেখানে জড়িত, সেই সারের ক্ষেত্রে অতি আমদানিনির্ভরতা সরকারের নীতিগত গলদ বলেই আমরা মনে করি। বর্তমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিযোগিতার বিশ্বে অতি আমদানিনির্ভরতা যে কতটা সংকট তৈরি করতে পারে, কোভিড মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তার কাছের দৃষ্টান্ত। আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে সরকারকে অবশ্যই সার উৎপাদন বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সার কারখানাগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণ করতে গিয়েই কৃষি খাত থেকে ধাপে ধাপে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার পথ বেছে নিচ্ছে সরকার। দারিদ্র্য বাড়ছে, মানুষের প্রকৃত আয় কমছে, একের পর এক ফসল উৎপাদনে কৃষককে লোকসানের দুষ্টচক্রে আটকে থাকতে হচ্ছে—এমন রূঢ় বাস্তবতায় সার কারখানায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সুপারিশ এককথায় বাস্তবতাবিবর্জিত চিন্তা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে সরকারকে অবশ্যই পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আমদ ন ন র ভরত ইউর য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় রাউজানে উত্তেজনা
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গাড়িতে অবস্থানরত বিএনপি কর্মী ও হামিম অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক আবদুল হাকিমকে (৫২) গুলি করে হত্যার ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে রাউজানে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক ও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে স্থানীরা। তিনটি মোটরসাইকেলে ছয় জন মুখোশধারী এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী মো. তারেক আজিজ।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ তালুকদার জানান, আবদুল হাকিম একজন সৎ ব্যবসায়ী। বিএনপির দলীয় কোন পদ-পদবি তার ছিল না, তবে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। প্রতিটি মিছিল-মিটিংয়ে তিনি অংশ নিতেন। রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে থেকে তিনি রাজনীতি করতেন। কী কারণে এবং কারা তাকে হত্যা করেছে এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমরা তার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে আবদুল হাকিমকে হত্যাকাণ্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজ হাতে পেয়েছে পুলিশ। তাতে দেখা গেছে, আবদুল হাকিমকে হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল তিনটি মোটরসাইকেলে থাকা মোট ছয় জন মুখোশধারী। তারা সাদা জিপে চালকের আসনের পাশে বসা আবদুল হাকিমকে লক্ষ্য করে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। আবদুল হাকিম তখন রাউজানের নিজের খামার থেকে শহরের বাসায় ফিরছিলেন।
তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাউজান উপজেলায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক ও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকা/রেজাউল/এস