বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এক ভিন্ন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে। আমরা আর শুধু কৃষিনির্ভর দেশের গণ্ডিতে আটকে নেই; বরং রপ্তানিমুখী, বিনিয়োগনির্ভর ও বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এক সম্ভাবনাময় জাতিতে পরিণত হচ্ছি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটছে। কিন্তু এই আশাব্যঞ্জক চিত্রের মাঝেও একটি মৌলিক সংকট ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে—আমাদের শ্রমবাজারে কাজের সুযোগ থাকলেও দক্ষতার ঘাটতির কারণে তরুণরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না। তাই বলা যায়, আজকের বাংলাদেশে আসল সংকট বেকারত্ব নয়, বরং দক্ষতাহীনতা।

প্রতি বছর প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ নতুন কর্মশক্তি বাংলাদেশে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। সরকারি হিসেবে বেকারত্বের হার মাত্র ৪-৫ শতাংশ হলেও বাস্তবে ছবিটা ভিন্ন। অনেক তরুণ কাজ খুঁজে পেলেও তারা নিজেদের যোগ্যতার সঙ্গে মানানসই কর্মক্ষেত্র খুঁজে পান না। আবার অনেকে আংশিক কর্মসংস্থানে যুক্ত থাকে, যাকে বলা হয় ‘আন্ডারএমপ্লয়মেন্ট’। অর্থাৎ, পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ থাকলেও দক্ষতার অভাবে তারা খণ্ডকালীন বা অদক্ষ কাজেই সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে পরিসংখ্যানগতভাবে বেকার সংখ্যা কম দেখা গেলেও অর্থনীতির ভেতরে লুকিয়ে থাকে এক বিশাল অদক্ষ শ্রমশক্তি।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে বিষয়টি আরও প্রকট। সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ লক্ষ্য অর্জনে জোর দিলেও, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), রোবোটিক্স বা ডেটা অ্যানালাইসিসে দক্ষ মানবসম্পদ দরকার, তার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটি বা আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও, শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণ করতে হলে এর গতি ও ব্যাপকতা আরও বাড়াতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেবল ডিগ্রি নয়, ডিজিটাল দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধানের ব্যবহারিক জ্ঞানই অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে ‘শিক্ষিত বেকার’ কথাটা বহুল প্রচলিত। কিন্তু গভীরে গিয়ে দেখলে বোঝা যায়, শিক্ষার অভাব নয়, বরং বাজারোপযোগী দক্ষতার অভাবই মূল সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে, কিন্তু তারা শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতার যোগ্য হয়ে উঠতে পারছেন না। কারণ, তাদের শিক্ষা বইমুখী, তত্ত্বভিত্তিক, বাস্তব প্রয়োগে সীমিত।

একজন অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র হয়তো উন্নয়ন অর্থনীতি বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জটিল তত্ত্ব জানে, কিন্তু কোনো কোম্পানির জন্য অর্থনৈতিক ডেটা বিশ্লেষণ বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রেজেন্টেশন তৈরির দক্ষতা নেই। একইভাবে, কম্পিউটার সায়েন্স পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী প্রোগ্রামিংয়ের মূল ধারণা জানলেও বাজারচাহিদা অনুযায়ী অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রকল্পে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন না। ফলে ডিগ্রি থাকলেও তাদের চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যায়।

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ৮-১০ লাখ মানুষ বিদেশে কাজের জন্য যায়। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এই বিশাল শ্রমশক্তির বড় অংশই অদক্ষ বা স্বল্পদক্ষ শ্রমিক। তারা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নির্মাণকাজ, গৃহকর্ম বা স্বল্প মজুরির কাজে নিয়োজিত থাকে। ফলে তাদের আয় সীমিত হয়, আর দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

অন্যদিকে, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম বা ভারত থেকে যে শ্রমিকরা বিদেশে যায়, তাদের একটি বড় অংশ তথ্যপ্রযুক্তি, নার্সিং, প্রকৌশল বা সেবা খাতে দক্ষ কর্মী হিসেবে কাজ করে। ফলে তারা বেশি আয় করতে সক্ষম হয়। একইভাবে বাংলাদেশও যদি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারে, তাহলে শুধু রেমিট্যান্স বাড়বে না, বরং প্রবাসী শ্রমিকরা সম্মানজনক কাজেও যুক্ত হতে পারবে।

​দক্ষতার অভাবের কারণে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে কয়েকটি বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে— ​প্রথমত, উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। অদক্ষ শ্রমশক্তি দিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত উৎপাদন পায় না। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে। ​দ্বিতীয়ত, বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হলেও দক্ষ কর্মী না পাওয়ার আশঙ্কায় দ্বিধাগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে, হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস বা অ্যাডভান্সড টেক্সটাইল (যেমন: সিনথেটিক ফাইবার) খাতে উচ্চ প্রযুক্তি এবং সুনির্দিষ্ট দক্ষতা প্রয়োজন। কিন্তু দেশীয় শ্রমবাজারে সেই চাহিদা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ না থাকায়, অনেক সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চীন, ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোকে বেছে নিচ্ছে। এভাবে দক্ষতার অভাবে আমরা নির্দিষ্ট উন্নত খাত হারাচ্ছি।

​তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে। যারা দক্ষ, তারা ভালো মজুরি পায়; আর অদক্ষ শ্রমিকরা স্বল্প আয়ে সীমাবদ্ধ থাকে।  ফলে সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য আরও তীব্র হয়।

আজকের তরুণ এক অদ্ভুত সংকটে পড়েছে। তারা একদিকে উচ্চশিক্ষার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পরও দীর্ঘ সময় কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন অনেকে। ফলে তারা সামাজিক ও মানসিক চাপের শিকার হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন, যা মানবপাচার কিংবা জীবনসংকটের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করছে।

কেন তৈরি হলো এই দক্ষতাহীনতার ফাঁদ? শুধু পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জন করলেই যে চাকরি হবে, সে ধারণা বাংলাদেশের তরুণদের একটি বড় অংশের মধ্যে গভীরভাবে গেঁথে আছে । ফলে উচ্চশিক্ষিত হয়েও অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না। এর পেছনে অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে—

প্রথমত, পাঠ্যক্রমের অপ্রাসঙ্গিকতা। এখনো আমাদের অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান হয় পুরোনো সিলেবাস অনুযায়ী। ৪র্থ শিল্পবিপ্লব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা, ই-কমার্স বা আধুনিক শিল্পপ্রযুক্তির বিষয়গুলো পাঠ্যক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

দ্বিতীয়ত, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি অনীহা। তরুণরা সাধারণত ডিগ্রিধারী হতে চায়, কিন্তু কারিগরি খাতে যেতে আগ্রহী নয়। অথচ দেশের শ্রমবাজারে যেমন, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারেও সবচেয়ে বেশি চাহিদা কারিগরি ও দক্ষতাভিত্তিক কাজে।

তৃতীয়ত, দক্ষতা উন্নয়নের অবকাঠামো সংকট। আমাদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর সংখ্যা যেমন সীমিত, তেমনি সেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি, অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক ও বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণের অভাব প্রকট। ফলে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েও বের হয়, তাদের অনেক সময় বাজারোপযোগী দক্ষতা থাকে না।

চতুর্থত, শিল্পখাতের সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্বল সংযোগ। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো বাজারের বাস্তব চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও নিজেদের প্রয়োজন স্পষ্টভাবে তুলে ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে শিক্ষিত জনশক্তি তৈরি হচ্ছে, কিন্তু তারা শিল্পকারখানায় কাজ করার মতো দক্ষ হয়ে উঠছে না।

পঞ্চমত, প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতার ঘাটতি। হাতে-কলমে কাজ শেখার সুযোগ শিক্ষার্থীরা খুব কমই পায়। ইন্টার্নশিপ, ওয়ার্কশপ, ল্যাব বা ফিল্ডওয়ার্কের মতো বাস্তবমুখী শিক্ষা কার্যক্রম সীমিত হওয়ায় তরুণরা কেবল তত্ত্বে পারদর্শী হয়ে থাকছে, বাস্তব কাজে পিছিয়ে যাচ্ছে।

ষষ্ঠত, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ও দিকনির্দেশনার অভাব। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করার আগেই কীভাবে শ্রমবাজারে প্রবেশ করবে, কোন খাতে বেশি সুযোগ আছে, কিংবা কোন দক্ষতা অর্জন করলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব—এসব বিষয়ে পরামর্শ পায়। বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে তরুণরা অন্ধভাবে চাকরির পেছনে ছুটে বেড়ায়, কিন্তু প্রস্তুতির অভাবে সফল হয় না।

বাংলাদেশের অর্থনীতির এই ‘দক্ষতার সংকট’ মোকাবিলায় কয়েকটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি—

প্রথমত, শিক্ষাব্যবস্থায় যুগোপযোগী সংস্কার আনতে হবে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে ব্যবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক বিষয় যুক্ত করতে হবে। শুধু বই পড়া নয়, সমস্যা সমাধান, দলীয় কাজ, যোগাযোগ দক্ষতা, প্রযুক্তি ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রসারিত করতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় মানসম্মত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন জরুরি। স্কুল পর্যায়েই কারিগরি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।

তৃতীয়ত, শিল্পখাতের সঙ্গে শিক্ষাখাতের সংযোগ বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ইন্টার্নশিপ, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা চালালে শিক্ষার্থীরা বাজারোপযোগী দক্ষতা অর্জন করবে।

চতুর্থত, ডিজিটাল দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে তথ্যপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, রোবোটিক্স ইত্যাদি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ছাড়া বিকল্প নেই।

পঞ্চমত, উদ্যোক্তা তৈরির পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। সবাই যে চাকরি করবে, তা নয়। বরং সরকার ও বেসরকারি খাতকে তরুণদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে, যাতে তারা ক্ষুদ্র ব্যবসা, স্টার্টআপ বা কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারে।

ষষ্ঠতম, তরুণদের মধ্যে জীবনভিত্তিক দক্ষতা, যোগাযোগ, নেতৃত্ব, সমস্যা সমাধান ও সময় ব্যবস্থাপনার মতো “soft skills” গড়ে তুলতে হবে। শুধু পাঠ্যক্রমের জ্ঞান নয়, বাস্তব জীবনের কাজে দক্ষতা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যুবসংগঠন ও পরিবারকে এই উদ্যোগে যুক্ত হতে হবে।

সপ্তমত, শিক্ষার্থী ও নবীন কর্মীদের জন্য ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এখানে শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজার, শিল্পের চাহিদা ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ পাবে। এছাড়া সফল উদ্যোক্তা ও পেশাদারদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বাস্তব দিকনির্দেশনা দেওয়া সম্ভব হবে।

পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। পরিসংখ্যান দিয়ে বেকারত্ব কম দেখানো সম্ভব, কিন্তু দক্ষতাহীনতার সমস্যাকে আড়াল করা যাবে না। কারণ এই সংকট কেবল তরুণদের জীবনে নয়, সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলছে। কাজের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যদি আমরা দক্ষতার অভাবে তা কাজে লাগাতে না পারি, তবে উন্নয়ন থমকে যাবে।

তাই এখনই সময় দক্ষতাকে উন্নয়নের কেন্দ্রে আনার। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারলেই বাংলাদেশ শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে, বিদেশ থেকে আরও বেশি রেমিট্যান্স আসবে, আর অর্থনীতি হবে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। সেই লক্ষ্যে সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পখাত ও তরুণদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে—বাংলাদেশের আসল সংকট বেকারত্ব নয়, দক্ষতাহীনতা। আর এই দায় থেকেই মুক্ত হতে পারলেই সত্যিকারের উন্নয়নের দুয়ার উন্মোচিত হবে।

লেখক: প্রভাষক, অর্থনীতি বিভাগ, জয়পুরা এসআরএমএস স্কুল এন্ড কলেজ, লক্ষীপুর।

ঢাকা/তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ত র ম ব দ ধ মত ত শ রমব জ র ব যবস থ অন য য় র জন য উদ য গ ক জ কর ত ম লক শ ল পপ সরক র অদক ষ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

বেকারত্ব নয়, দক্ষতাহীনতাই বড় দায়

বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এক ভিন্ন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে। আমরা আর শুধু কৃষিনির্ভর দেশের গণ্ডিতে আটকে নেই; বরং রপ্তানিমুখী, বিনিয়োগনির্ভর ও বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এক সম্ভাবনাময় জাতিতে পরিণত হচ্ছি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটছে। কিন্তু এই আশাব্যঞ্জক চিত্রের মাঝেও একটি মৌলিক সংকট ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে—আমাদের শ্রমবাজারে কাজের সুযোগ থাকলেও দক্ষতার ঘাটতির কারণে তরুণরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না। তাই বলা যায়, আজকের বাংলাদেশে আসল সংকট বেকারত্ব নয়, বরং দক্ষতাহীনতা।

প্রতি বছর প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ নতুন কর্মশক্তি বাংলাদেশে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। সরকারি হিসেবে বেকারত্বের হার মাত্র ৪-৫ শতাংশ হলেও বাস্তবে ছবিটা ভিন্ন। অনেক তরুণ কাজ খুঁজে পেলেও তারা নিজেদের যোগ্যতার সঙ্গে মানানসই কর্মক্ষেত্র খুঁজে পান না। আবার অনেকে আংশিক কর্মসংস্থানে যুক্ত থাকে, যাকে বলা হয় ‘আন্ডারএমপ্লয়মেন্ট’। অর্থাৎ, পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ থাকলেও দক্ষতার অভাবে তারা খণ্ডকালীন বা অদক্ষ কাজেই সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে পরিসংখ্যানগতভাবে বেকার সংখ্যা কম দেখা গেলেও অর্থনীতির ভেতরে লুকিয়ে থাকে এক বিশাল অদক্ষ শ্রমশক্তি।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে বিষয়টি আরও প্রকট। সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ লক্ষ্য অর্জনে জোর দিলেও, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), রোবোটিক্স বা ডেটা অ্যানালাইসিসে দক্ষ মানবসম্পদ দরকার, তার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটি বা আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও, শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণ করতে হলে এর গতি ও ব্যাপকতা আরও বাড়াতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেবল ডিগ্রি নয়, ডিজিটাল দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধানের ব্যবহারিক জ্ঞানই অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে ‘শিক্ষিত বেকার’ কথাটা বহুল প্রচলিত। কিন্তু গভীরে গিয়ে দেখলে বোঝা যায়, শিক্ষার অভাব নয়, বরং বাজারোপযোগী দক্ষতার অভাবই মূল সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে, কিন্তু তারা শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতার যোগ্য হয়ে উঠতে পারছেন না। কারণ, তাদের শিক্ষা বইমুখী, তত্ত্বভিত্তিক, বাস্তব প্রয়োগে সীমিত।

একজন অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র হয়তো উন্নয়ন অর্থনীতি বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জটিল তত্ত্ব জানে, কিন্তু কোনো কোম্পানির জন্য অর্থনৈতিক ডেটা বিশ্লেষণ বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রেজেন্টেশন তৈরির দক্ষতা নেই। একইভাবে, কম্পিউটার সায়েন্স পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী প্রোগ্রামিংয়ের মূল ধারণা জানলেও বাজারচাহিদা অনুযায়ী অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রকল্পে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন না। ফলে ডিগ্রি থাকলেও তাদের চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যায়।

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ৮-১০ লাখ মানুষ বিদেশে কাজের জন্য যায়। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এই বিশাল শ্রমশক্তির বড় অংশই অদক্ষ বা স্বল্পদক্ষ শ্রমিক। তারা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নির্মাণকাজ, গৃহকর্ম বা স্বল্প মজুরির কাজে নিয়োজিত থাকে। ফলে তাদের আয় সীমিত হয়, আর দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

অন্যদিকে, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম বা ভারত থেকে যে শ্রমিকরা বিদেশে যায়, তাদের একটি বড় অংশ তথ্যপ্রযুক্তি, নার্সিং, প্রকৌশল বা সেবা খাতে দক্ষ কর্মী হিসেবে কাজ করে। ফলে তারা বেশি আয় করতে সক্ষম হয়। একইভাবে বাংলাদেশও যদি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারে, তাহলে শুধু রেমিট্যান্স বাড়বে না, বরং প্রবাসী শ্রমিকরা সম্মানজনক কাজেও যুক্ত হতে পারবে।

​দক্ষতার অভাবের কারণে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে কয়েকটি বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে— ​প্রথমত, উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। অদক্ষ শ্রমশক্তি দিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত উৎপাদন পায় না। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে। ​দ্বিতীয়ত, বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হলেও দক্ষ কর্মী না পাওয়ার আশঙ্কায় দ্বিধাগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে, হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস বা অ্যাডভান্সড টেক্সটাইল (যেমন: সিনথেটিক ফাইবার) খাতে উচ্চ প্রযুক্তি এবং সুনির্দিষ্ট দক্ষতা প্রয়োজন। কিন্তু দেশীয় শ্রমবাজারে সেই চাহিদা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ না থাকায়, অনেক সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চীন, ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোকে বেছে নিচ্ছে। এভাবে দক্ষতার অভাবে আমরা নির্দিষ্ট উন্নত খাত হারাচ্ছি।

​তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে। যারা দক্ষ, তারা ভালো মজুরি পায়; আর অদক্ষ শ্রমিকরা স্বল্প আয়ে সীমাবদ্ধ থাকে।  ফলে সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য আরও তীব্র হয়।

আজকের তরুণ এক অদ্ভুত সংকটে পড়েছে। তারা একদিকে উচ্চশিক্ষার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পরও দীর্ঘ সময় কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন অনেকে। ফলে তারা সামাজিক ও মানসিক চাপের শিকার হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন, যা মানবপাচার কিংবা জীবনসংকটের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করছে।

কেন তৈরি হলো এই দক্ষতাহীনতার ফাঁদ? শুধু পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জন করলেই যে চাকরি হবে, সে ধারণা বাংলাদেশের তরুণদের একটি বড় অংশের মধ্যে গভীরভাবে গেঁথে আছে । ফলে উচ্চশিক্ষিত হয়েও অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না। এর পেছনে অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে—

প্রথমত, পাঠ্যক্রমের অপ্রাসঙ্গিকতা। এখনো আমাদের অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান হয় পুরোনো সিলেবাস অনুযায়ী। ৪র্থ শিল্পবিপ্লব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা, ই-কমার্স বা আধুনিক শিল্পপ্রযুক্তির বিষয়গুলো পাঠ্যক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

দ্বিতীয়ত, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি অনীহা। তরুণরা সাধারণত ডিগ্রিধারী হতে চায়, কিন্তু কারিগরি খাতে যেতে আগ্রহী নয়। অথচ দেশের শ্রমবাজারে যেমন, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারেও সবচেয়ে বেশি চাহিদা কারিগরি ও দক্ষতাভিত্তিক কাজে।

তৃতীয়ত, দক্ষতা উন্নয়নের অবকাঠামো সংকট। আমাদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর সংখ্যা যেমন সীমিত, তেমনি সেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি, অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক ও বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণের অভাব প্রকট। ফলে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েও বের হয়, তাদের অনেক সময় বাজারোপযোগী দক্ষতা থাকে না।

চতুর্থত, শিল্পখাতের সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্বল সংযোগ। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো বাজারের বাস্তব চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও নিজেদের প্রয়োজন স্পষ্টভাবে তুলে ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে শিক্ষিত জনশক্তি তৈরি হচ্ছে, কিন্তু তারা শিল্পকারখানায় কাজ করার মতো দক্ষ হয়ে উঠছে না।

পঞ্চমত, প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতার ঘাটতি। হাতে-কলমে কাজ শেখার সুযোগ শিক্ষার্থীরা খুব কমই পায়। ইন্টার্নশিপ, ওয়ার্কশপ, ল্যাব বা ফিল্ডওয়ার্কের মতো বাস্তবমুখী শিক্ষা কার্যক্রম সীমিত হওয়ায় তরুণরা কেবল তত্ত্বে পারদর্শী হয়ে থাকছে, বাস্তব কাজে পিছিয়ে যাচ্ছে।

ষষ্ঠত, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ও দিকনির্দেশনার অভাব। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করার আগেই কীভাবে শ্রমবাজারে প্রবেশ করবে, কোন খাতে বেশি সুযোগ আছে, কিংবা কোন দক্ষতা অর্জন করলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব—এসব বিষয়ে পরামর্শ পায়। বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে তরুণরা অন্ধভাবে চাকরির পেছনে ছুটে বেড়ায়, কিন্তু প্রস্তুতির অভাবে সফল হয় না।

বাংলাদেশের অর্থনীতির এই ‘দক্ষতার সংকট’ মোকাবিলায় কয়েকটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি—

প্রথমত, শিক্ষাব্যবস্থায় যুগোপযোগী সংস্কার আনতে হবে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে ব্যবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক বিষয় যুক্ত করতে হবে। শুধু বই পড়া নয়, সমস্যা সমাধান, দলীয় কাজ, যোগাযোগ দক্ষতা, প্রযুক্তি ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রসারিত করতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় মানসম্মত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন জরুরি। স্কুল পর্যায়েই কারিগরি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।

তৃতীয়ত, শিল্পখাতের সঙ্গে শিক্ষাখাতের সংযোগ বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ইন্টার্নশিপ, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা চালালে শিক্ষার্থীরা বাজারোপযোগী দক্ষতা অর্জন করবে।

চতুর্থত, ডিজিটাল দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে তথ্যপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, রোবোটিক্স ইত্যাদি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ছাড়া বিকল্প নেই।

পঞ্চমত, উদ্যোক্তা তৈরির পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। সবাই যে চাকরি করবে, তা নয়। বরং সরকার ও বেসরকারি খাতকে তরুণদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে, যাতে তারা ক্ষুদ্র ব্যবসা, স্টার্টআপ বা কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারে।

ষষ্ঠতম, তরুণদের মধ্যে জীবনভিত্তিক দক্ষতা, যোগাযোগ, নেতৃত্ব, সমস্যা সমাধান ও সময় ব্যবস্থাপনার মতো “soft skills” গড়ে তুলতে হবে। শুধু পাঠ্যক্রমের জ্ঞান নয়, বাস্তব জীবনের কাজে দক্ষতা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যুবসংগঠন ও পরিবারকে এই উদ্যোগে যুক্ত হতে হবে।

সপ্তমত, শিক্ষার্থী ও নবীন কর্মীদের জন্য ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এখানে শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজার, শিল্পের চাহিদা ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ পাবে। এছাড়া সফল উদ্যোক্তা ও পেশাদারদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বাস্তব দিকনির্দেশনা দেওয়া সম্ভব হবে।

পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। পরিসংখ্যান দিয়ে বেকারত্ব কম দেখানো সম্ভব, কিন্তু দক্ষতাহীনতার সমস্যাকে আড়াল করা যাবে না। কারণ এই সংকট কেবল তরুণদের জীবনে নয়, সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলছে। কাজের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যদি আমরা দক্ষতার অভাবে তা কাজে লাগাতে না পারি, তবে উন্নয়ন থমকে যাবে।

তাই এখনই সময় দক্ষতাকে উন্নয়নের কেন্দ্রে আনার। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারলেই বাংলাদেশ শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে, বিদেশ থেকে আরও বেশি রেমিট্যান্স আসবে, আর অর্থনীতি হবে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। সেই লক্ষ্যে সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পখাত ও তরুণদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে—বাংলাদেশের আসল সংকট বেকারত্ব নয়, দক্ষতাহীনতা। আর এই দায় থেকেই মুক্ত হতে পারলেই সত্যিকারের উন্নয়নের দুয়ার উন্মোচিত হবে।

লেখক: প্রভাষক, অর্থনীতি বিভাগ, জয়পুরা এসআরএমএস স্কুল এন্ড কলেজ, লক্ষীপুর।

ঢাকা/তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ