‘যেকোনো সম্পর্কে মতবিরোধ হওয়াটা জরুরি’
Published: 10th, November 2025 GMT
ভারতীয় বাংলা সিনেমার দাপুটে অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। ব্যক্তিগত জীবনে ছোট পর্দার অভিনেত্রী অপরাজিতা ঘোষের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন এই অভিনেতা। অবসর পেলেই স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন এই যুগল। বিলাসবহুল ভাবে সময় কাটানো নয়, বরং পরস্পরের সঙ্গে সময় কাটানোই এই দম্পতির মূল উদ্দেশ্য।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ঋত্বিকের স্ত্রী অপরাজিতা ঘোষ। এ আলাপচারিতায় স্বামীর সঙ্গে তার রসায়ন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন ‘চিরসখা’ ধারাবাহিকের ‘কমলিনী’। ধারাবাহিকের কমলিনীর মতোই বাস্তব জীবনেও সংসার আগলে রেখেছেন এই অভিনেত্রী।
আরো পড়ুন:
‘সম্পর্ক দু’মিনিটে তৈরি হওয়া নুডলস নয়’
হাসপাতালে জিতু কমল
অপরাজিতা ঘোষ বলেন, “ঋত্বিকের সঙ্গে আমার সম্পর্কের ফাউন্ডেশন বন্ধুত্বের। অনেক বছর আগে আমরা বন্ধু ছিলাম, মাঝে আমাদের বিয়ে হয়েছে ঠিকই, এখনো আমরা বন্ধু। আশা করি, আগামী দিনেও এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের চেয়ে এগিয়ে থাকবে।”
ব্যাখ্যা করে অপরাজিতা ঘোষ বলেন, “ব্যাপারটা খুব কঠিন তা কিন্তু নয়। এটা আমাদের সহজাত ধর্ম। ২৪ ঘণ্টা একটা মানুষের সঙ্গে থাকার পর আবার সেই মানুষটার সঙ্গেই আমার থাকতে ইচ্ছা করে। এই মানুষটার সঙ্গে আমি ভীষণ বুড়ো হতে চাই। কার কী হয় জানি না, তবে আমাদের এমনটাই লাগে।”
স্বামী ঋত্বিকের সঙ্গে মনোমালিন্যর কথা স্বীকার করে অপরাজিতা ঘোষ বলেন, “অন্য যেকোনো দম্পতির মতো আমাদের মধ্যেও কথা কাটাকাটি হয়, মতবিরোধ হয়। এটা স্বাস্থ্যকর। যেকোনো সম্পর্কে মতবিরোধ হওয়াটা জরুরি। এটা ভীষণ স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তবে তার মানে এই নয় যে, আমরা একে অপরের মতকে সম্মান করি না। আমরা নিজেদের মতামত বলি এবং তারপর মাঝামাঝি একটা জায়গায় আসি। অনেক সময় এমনও হয় যে, আপনাদের একে অপরের মতই ঠিক বলে মনে হয়।”
২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ঋত্বিক ঘোষ ও অপরাজিতা। এ দম্পতির উপমন্যু নামে একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র অপর জ ত আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
এলডিসি উত্তরণ পেছানোর আবেদন করলে অন্য দেশ বিরোধিতা করবে: সেলিম রায়হান
বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি উঠলেও কূটনৈতিকভাবে তার নিশ্চিত পথ নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। আবেদন করলেও স্বচ্ছ তথ্যের ভিত্তিতে করতে হবে। কিন্তু উত্তরণের তিনটি সূচকেই বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ওপরে।
এই পরিস্থিতিতে আবেদন করা হলে অন্য দেশগুলো বিরোধিতা করবে। তাতে বাংলাদেশের বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান। তারপরও ব্যবসায়ীসহ কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য উত্তরণের সময় পিছিয়ে দেওয়া দরকার।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ–মালয়েশিয়া চেম্বারের আয়োজনে এলডিসি উত্তরণ নিয়ে সেমিনারে এ কথা বলেন বক্তারা। সংগঠনটির সভাপতি সাব্বির এ খানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের পরেও আমরা তিন বছর সময় পাব। তারপরও আমাদের অবস্থা পর্যালোচনা করার অনুরোধ করেছি। পর্যালোচনার জন্য তিনজনের একটি দল এসেছে। সব ব্যবসায়ী ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে আমরা অনুরোধ করেছি।’
বাণিজ্যসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি কমেছে বৈশ্বিক কারণে; নয়তো এখন তা কমার কথা নয়। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রধান বাজারের সঙ্গে আমরা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির চেষ্টা করছি। উত্তরণ আমাদের বাস্তবতা—এটা করতেই হবে। তিন থেকে পাঁচ বছরের সুবিধা দেওয়ার কথা বলছি আমরা। মানে ২০৩১ সালে হলেও উত্তরণ করতে হবে।’
মূল প্রবন্ধে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সংকটপূর্ণ সময় পার করছি আমরা। রাজনৈতিক রূপান্তর আমাদের চ্যালেঞ্জ কিছুটা কমাতে সহায়তা করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণ উদ্যাপন থেকে উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। এখন “ন্যারেটিভ” পরিবর্তন হয়েছে। তবে এটা পিছিয়ে দেওয়া কূটনৈতিকভাবে নিশ্চিত নয়। কেননা স্বচ্ছ তথ্যের ভিত্তিতে এর আবেদন করতে হবে। কিন্তু তিনটি সূচকেই আমরা অনেক ওপরে। আবেদন করলে অন্যরা বিরোধিতা করবে। তাও আবেদন করা হলে অন্যরা মনে করবে, বাংলাদেশ দুর্বল।’
আলোচনায় অংশ নেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘আমরা উত্তরণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এটা কাঠামোগত পরিবর্তন, আবেগপূর্ণ কিছু নয়। অজুহাত দেখানোর কিছু নেই। এখন প্রস্তুত না হলে কখনোই হবো না। কিছু ক্ষেত্রে উত্তরণ ঘটেছে। তাই এটাকে ভবিষ্যতের বাধা মনে না করে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন।’
সময় পেলে প্রস্তুতি ভালো হবেএলডিসি উত্তরণের জন্য অতিরিক্ত সময় পেলে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে বলে মনে করছেন গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে অনেক অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের তিন বছর সময় দরকার। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা নিজেই কোমায় আছে। নিয়মমতো তারা চলতে পারছে না।’
এলডিসি উত্তরণ অবশ্যই পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করতে বলছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। তিনি বলেন, ‘এখানে শুধু বেসরকারি খাতকে প্রস্তুতি নিলে হবে না, সরকারেরও অনেক প্রস্তুতির বিষয় আছে। ব্যবসার ব্যয় কমাতে হবে। আমাদের লজিস্টিক খরচ যুক্তরাজ্যের চেয়ে বেশি। জ্বালানি সমস্যা, সুদের হার বেশি। সবকিছুতেই মাথাব্যথার কারণ আছে, সে জন্য সময় দরকার।’
এদিকে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা উত্তরণের বিপক্ষে নই। প্রস্তুতির জন্য উত্তরণের সময় কিছুটা বাড়ানোর জন্যে বলছি। সময় পেলে আমাদের প্রস্তুতি ভালো হবে। গত তিন মাসে রপ্তানি কমেছে। আগামী তিন মাসও কমতে পারে। কেননা বৈশ্বিক চাহিদা কমছে। আমরা কঠিন সময়ে আছি।’
বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা যুক্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার। তাই এখন উত্তরণের অবস্থায় নেই আমরা। নিশ্চয়তা না থাকলেও আমরা পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারি।
সভায় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।