অপেক্ষা
আমি চলে গেলে তুমিও চলে যাবে আমার সাথে
এখানে অনেক লোকের মাঝে থাকো
তাই আমাদের সম্পর্ক টিকে আছে সংঘাতে
দৃশ্যের মধ্যে সর্বদা লোকনিন্দার ভয়
অন্যেরা দেখে ফেলে পাছে সেই লজ্জায়
বলি না, তুমি কাছে না থাকলে আমার কী হয়
মনে মনে কত গান বাঁধি তোমায় শোনাব বলে
তোমার হয় না সময়
তুমি আস সুর নিয়ে আমি অবসন্ন ক্লান্ত হলে
বুঝি না এতটা যত্ন করেছিলে কোন প্রয়োজনে
আমরা তো আগেও ছিলাম নীরবে–নিভৃতে
মিলন ততটা শারীরিক নয়, যতটা মনে
এই পৃথিবী নয় প্রেমিকের উপযুক্ত স্থান
ছলনার ঘাটতি হলে যারে তুমি ভালোবাসো
সেও তোমারে দেবে অসহ্য অপমান
আমি আর করব না অহেতুক অভিযোগ
যেহেতু আর কয়টা দিনের পরে
ঘটবে আমাদের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ
যত অসহ্য হোক, সব সাময়িক দুর্ভোগ।
পুরোনো রীতির প্রতি আমিও অভ্যস্ত চিরকাল
শুনেছি যেসব গল্প নিশিরাতে জননীর কাছে
কুমারীর প্রাণহীন শরীর জেগে আছে শিথানে
আরব্য গল্পের দৈত্য আর কুমারী রানি একাকী
আজ অনেক হয়েছে বেলা, দেখি সমুদ্র-পাতাল
প্রকৃতির নিত্যখেলা ঝরেছে পুষ্পপল্লবগাছে
মেশিন ও মানুষের শব্দ শুনি বারংবার কানে
হতভাগ্য কুমারী সে, অসহায়, দুঃখ তার বাকি।
তাকে একদিন দিতে হবে মুক্তি বন্দিদশা থেকে
মানুষের সব গল্প বাঁধা থাকে শৈশবখাঁচায়
অনেক পথের বাধা ফুরালে থাকে অজানা ভয়
ভয়ের দৈত্য অনড়-কুমারের পথ যায় বেঁকে।
মানব সমাজ ছাড়া কাহিনির নেই প্রয়োজন
চারিদিক অন্ধকার, গভীর অরণ্য মনোবন।
পৃথিবী যখন মরে যাচ্ছে,
অহেতুক তুমি আলো ছড়াচ্ছ
তোমার গর্ভ থেকে একদিন যে বেরিয়েছিল
এ পথ ছিল তার সম্পূর্ণ অজানা
কন্যারা যেভাবে চলে যায় অজানার পথে
স্বামী–সংসার মূলত এক রুক্ষ মরুভূমি
অতলান্ত সাগর
এবড়োখেবড়ো পাহাড়, গিরিখন্দ
তোমার অগ্নিশর্মা রূপ
তাই আমরা বরফে নামিয়েছিলাম
আমাদের কাপড় ছিল না
কাঁদতে কাঁদতে আমাদের চোখগুলো মরুভূমি
আর গণ্ডদেশ নদী হয়ে গিয়েছিল
এই আমি একদিন গড়ে তুললাম সংসার
তোমার নাতিপুতিরা মাথা তুলে দাঁড়াল
হরেক ফুল ও পাখি
নদী ও মেঘ সব তুমি সাজিয়ে তুললে
কারণ, তুমি তোমার আগুন থেকে
আমাকে বাঁচাতে চেয়েছিলে
তোমার অনেক ছেলেমেয়ে
উপগ্রহের মতো পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে
যেদিন একজন মানুষকে নামাও উদরের নদী থেকে
সেদিন তুমি একটি নক্ষত্রের জন্ম দাও
আর একটি গ্রহকে পরিণত করো মৃত নক্ষত্রের ছায়ায়।
জন্মদিন যদিও শহুরে সংস্কৃতির অংশ
তবু বিষণ্ন হই, ভাবি, এই দিনই কি সেই দিন
যেদিন আমি জন্মেছিলাম!
বিহঙ্গ কি জানে, জানে কি প্রাণিকুল—
যাদের জীবাশ্ম ভরেছে পৃথিবীর ভান্ডার
সব জীবনে বছর ঘোরে না
কারও জীবন পল ও দণ্ডে
আহ্নিক গতির ঋতুচক্র ঘটে প্রকৃতির নিয়মে
সময় কি ফিরে আসে নিজস্ব আলয়ে!
আমি শুধু সেই শিশুটির কথা ভাবি
এক নারী বাঁশ ও খড়ের চালার নিচে
জবুথবু বৈশাখী ঝড়ে প্রসববেদনায়—
গোশালায় মা মরিয়ম যেন ছোট যিশু কোলে
কিছুক্ষণ আগে এক বৃদ্ধা বলল চিৎকার করে—
‘শুনছ তোমরা? সানুর ছাওয়াল হয়েছে,
বিশ্বাসের ব্যাটা এবার দিতে পারো আজান’
আজ সেই পোয়াতির মুখ মনে পড়ে
একটি ন্যাকড়ার ভেতরে মানুষের পুত্তলি নিয়ে
কীভাবে রাত্রি জেগেছিল ভয়াবহ শঙ্কায়
কার চোখে রেখেছিল চোখ তরুণী মাতা
আজ কোথাও নেই সেই মুখ
শিশুটিও মরে গেছে নিজের ভেতরে
কেবল বীজের চিহ্ন লেগে আছে পল্লবে, কাণ্ডে
বায়ু, তুমি কি রেখেছ ধরে তার দুরন্ত পদচ্ছাপ
নদী, তুমি কি লুকিয়ে ফেলেছ সন্তরণের চিহ্ন
নাকি ফাঁপা বৃথা সময়ের মধ্যে
গির্জার ঘণ্টার ধ্বনি বাজে অবিরাম
শব সৎকারে ব্যতিব্যস্ত অনন্ত পুরোহিত
আকাশ ও মৃত্তিকার মাঝে কিছু ধোঁয়ার কুণ্ডলি
যুদ্ধ কিংবা মহামারি শেষে
এমনকি শান্তি প্রতিষ্ঠার কালে
অপরিবর্তিত থাকে আমাদের নিয়তি।
একটি আলো এসে সব মিশমাশ করে দিল
ঝলসে দিল আমাদের নিজস্ব দিন
আমরা ছিলাম পাখির ডিমের উষ্ণতম অংশে
মা না থাকলে নিজেদেরই ভাঙতে হয় খোলস
তাই নিজেই ডিম্বক থেকে বানিয়েছিলাম মায়ের পুষ্প
যেহেতু আলোতে আমরা দেখতে পাই না
আলো দিয়েছে আমাদের বিভ্রম
অনাগত শিশুদের সঙ্গে তাই খেলতে পারি না
সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে সামান্য অন্ধকার
রয়েছে বিকিরণ থেকে বাঁচার আকুতি
খনির গহ্বরে যেসব নিশিমতার বাস—
তাও আজ বিধ্বস্ত উত্তোলনের মুখে
সূর্য এভাবে শাসাতে থাকলে দিন গণনা ছাড়া
আমরা কেউ পারব না বাঁচতে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সততা ও নৈতিকতার জাদুতেই দূর হবে দুর্নীতি: সালেহ আহমেদ
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেছেন, “সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা শুধু একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়; এটি সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং জনগণের আস্থা অর্জনের মূল চাবিকাঠি।”
তিনি বলেন, “আমরা যদি নিয়ম-নীতি মেনে এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করি, তাহলে উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ দ্রুত, মানসম্মত ও টেকসইভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। ক্রয়ের ক্ষেত্রে সততা ও নৈতিকতার জাদুতেই দুর্নীতি দূর করা সম্ভব।”
আরো পড়ুন:
দুদকের মামলায় বরগুনা জেলা প্রশাসনের সাবেক নাজির কারাগারে
রংধনু গ্রুপের মালিকের বিলাসবহুল হোটেলসহ ৩৩ কোটি টাকা ক্রোক
বুধবার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ‘সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা (পিপিআর-২০২৫)’ শীর্ষক লার্নিং সেশনে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. ফারুক হোসেন।
এএসএম সালেহ আহমেদ বলেন, “সরকার ই-জিপি (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রোকিওরমেন্ট) চালু করে সরকারি ক্রয়ে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে মূল্যায়ন ও চুক্তি সম্পাদন—সবকিছুই এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সম্পন্ন হচ্ছে। এর ফলে সময়, ব্যয় এবং অনিয়ম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে প্রযুক্তির ব্যবহার যতই আধুনিক হোক না কেন, এর সঙ্গে নৈতিকতা, দক্ষতা ও সততার সমন্বয় না থাকলে তা পুরোপুরি কার্যকর হয় না। নীতিগত দুর্বলতা থাকলে কোনো ব্যবস্থাই সফল হতে পারে না।”
তিনি বলেন, “স্বচ্ছতা কেবল একটি প্রশাসনিক বিধান নয়, এটি একটি মূল্যবোধ। আমরা যদি এই মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, তবে সরকারি ক্রয়ে দক্ষতা, সাশ্রয় এবং জনগণের বিশ্বাস—এই তিনটি অর্জন করা সম্ভব হবে। ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আচরণে সত্যনিষ্ঠা, সততা, ন্যায়বোধ, দায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা জরুরি।”
সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে আইন, নীতি, পেশাগত মানদণ্ড ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সিনিয়র সচিব।
লার্নিং সেশনে প্রশিক্ষক মো. ফারুক হোসেন বলেন, “ভূমি মন্ত্রণালয়ই প্রথম ‘সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা (পিপিআর-২০২৫)’ শীর্ষক এই লার্নিং সেশনের আয়োজন করেছে।”
সেশনে আরো উপস্থিত ছিলেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান এজেএম সালাউদ্দীন নাগরি, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিববৃন্দ ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ঢাকা/এএএম/মেহেদী