চকরিয়ার বাসা থেকে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ, রোহিঙ্গা শিবির থেকে উদ্ধার
Published: 9th, October 2025 GMT
কক্সবাজারের চরকিয়ার পৌরসভার একটি বাসা থেকে অপহরণের শিকার তৃতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে আর বাড়িতে ফেরেনি ওই ছাত্রী। ছাত্রীকে উদ্ধার করা হলেও তার অপহরণকারীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
গতকাল রাত ১১টার দিকে অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধারের পর চকরিয়া থানায় আনা হয় বলে জানান অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই ছাত্রীর অপহরণকারী একজন রোহিঙ্গা যুবক। অন্য এক রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করে চকরিয়া পৌরশহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সেই বাসায় অপহৃত ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতেন তিনি। ওই রোহিঙ্গা যুবক বাংলাদেশের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করতেন বলে জানা গেছে।
গতকাল রাতে চকরিয়া থানা চত্বরে ওই ছাত্রীর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাসার পাশে এক দম্পতি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। গৃহকর্তা মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান তাঁর বাসায় প্রাইভেট পড়ানো শুরু করলে আমার মেয়েকেও সেখানে পড়তে দিই। তাঁরা যে রোহিঙ্গা, সেটি আমরা জানতাম না। হঠাৎ গত মঙ্গলবার বিকেলে মেয়ে পড়তে গিয়ে আরে ফেরেনি। শিক্ষকের বাসাও তালা দেওয়া। শিক্ষককে ফোন দিলেও ধরেননি তিনি। পরদিন সকালে আমার মুঠোফোনে কল করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। কণ্ঠ শুনে নিশ্চিত হই, এটি মুজিবুর রহমানের কণ্ঠ। একপর্যায়ে ওই শিক্ষক স্বীকার করেন, তিনি আমার মেয়েকে অপহরণ করেছেন। মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে তিনি একটি বিকাশ নম্বর দেন।’
চকরিয়া থানার পুলিশ জানায়, মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে ছাত্রীর বাবাকে একটি বিকাশ নম্বর দেন শিক্ষক মুজিবুর। সেই নম্বরে কিছু টাকা পাঠিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে অপহরণকারীর অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেনের নেতৃত্বে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে অভিযান চালিয়ে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। তবে পুলিশ অপহরণকারীকে ধরতে পারেনি।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, অপহৃত ছাত্রীকে পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। অপহরণকারীও শিগগিরই ধরা পড়বেন। এ ঘটনায় গতকাল রাতে ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপহ ত ছ ত র ক অপহরণক র ওই ছ ত র চকর য় গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা অভিমুখী ফ্লোটিলা থেকে শহিদুলকে অপহরণের প্রতিবাদে জবিতে বিক্ষোভ
ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে মানবিক সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র একটি নৌযান থেকে বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে অপহরণ করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি প্রশাসনিক ভবন এলাকা, কাঁঠালতলা, মুক্তমঞ্চ, বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত বাহাদুর শাহ পার্কসংলগ্ন ‘বিশ্বজিৎ চত্বর’-এর সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘মুক্তি মুক্তি চাই, শহিদুল আলমের মুক্তি চাই’; ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’; ‘ফিলিস্তিনে মানুষ মরে, জাতিসংঘ কী করে’; ‘স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন, স্বাধীন হবে ফিলিস্তিন’ এবং ‘ফিলিস্তিনে গণহত্যা, বন্ধ কর করতে হবে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এর আগে আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেন, তাঁদের বহনকারী গাজা অভিমুখী জাহাজটি মাঝসমুদ্রে আটকে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তিনি অপহরণের শিকার হয়েছেন।
শহিদুল আলম কনশেনস নামের যে জাহাজে আছেন, তা আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ও থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি) নৌবহরের একটি জাহাজ। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীবাহী এই জাহাজ ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাজা অভিমুখে রওনা হয়েছিল।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম বলেন, গাজা অভিমুখী ত্রাণবহর সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি বর্বর হামলা হয়েছে। বহরে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করা হয়েছে। শহিদুল আলম নিজে বলেছেন তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সেখানে আটককৃত সকল মানবাধিকারকর্মীর অবিলম্বে মুক্তি চাই।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, ফিলিস্তিনে কয়েক দশক ধরে বর্বর গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গণহত্যা চালিয়েও তারা ক্ষান্ত হয়নি, তারা গাজায় সব ধরনের খাবার-ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছে। এই অবরোধ ভাঙতে সারা পৃথিবীর মানবাধিকারকর্মীরা অর্ধশত নৌযান নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু একেক করে সবাইকে আটক করেছে ইসরায়েল।
শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ফয়সাল মুরাদ বলেন, শহিদুল আলমকে মুক্ত করে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের যা যা করার, তা করতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীভ বলেন, ‘গাজাগামী সুমুদ ফ্লোটিলায় শহিদুল আলমের এই যাত্রা সারা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা জানলাম তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের পুরো জাতিকে অপমান করা হয়েছে। শহিদুল আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাই।’
আরও পড়ুনইসরায়েলি বাহিনী আমাদের আটকে দিয়েছে, আমাকে অপহরণ করেছে: শহিদুল আলম৭ ঘণ্টা আগে