ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে তারেক রহমান: তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
Published: 9th, October 2025 GMT
বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এখনো প্রধানত তৈরি পোশাকশিল্পনির্ভর। কিন্তু বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, নতুন শুল্ককাঠামো তৈরি হচ্ছে, আর শ্রমমূল্যের পার্থক্য কমে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প রপ্তানি খাত গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জেলা ও গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তারা যদি বিশ্ববাজারের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সংযুক্ত হতে পারেন, তাহলে আমাদের রপ্তানিকাঠামোয় এক মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।’
সুপার সোর্সিং হাবের পরিকল্পনাসাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেন, বৈশ্বিক শুল্ক পরিবর্তন এখন বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকার যদি ‘ই-কমার্স সোর্সিং হাব’ গড়ে তোলে, তাহলে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা (এসএমই) আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। এতে শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক শিল্প নয়, বরং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ছোট কারখানা, হস্তশিল্প ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিটও রপ্তানির ধারায় যুক্ত হতে পারবে।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের তুলনামূলক কম শুল্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে শূন্য শুল্কসুবিধা, চীন ও কানাডার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি—এসব সুযোগ কাজে লাগালে স্থানীয় উদ্যোক্তারা অ্যামাজন, আলিবাবা, শপিফাই বা ওয়ালমার্টের মতো বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনাতারেক রহমানের ভাষায়, ‘যে তরুণেরা আজ ফেসবুকে বা স্থানীয় মার্কেটে ছোট পরিসরে ব্যবসা করছেন, তাঁদের সামনে এখন বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের দরজা খুলে দেওয়া দরকার।’ তিনি মনে করেন, এভাবে তৈরি পোশাকের বাইরেও বাংলাদেশের হস্তশিল্প, গৃহসজ্জা, পাটপণ্য, প্রাকৃতিক প্রসাধনী, কাঠের খেলনা ও শিশুপণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিত হতে পারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এ ধারণা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে রপ্তানি খাতে বহুমুখীকরণ ঘটবে, যা কর্মসংস্থান ও আঞ্চলিক অর্থনীতিতে নতুন গতি আনতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতিতবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের পথে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আন্তর্জাতিক ই-কমার্সে যুক্ত হতে হলে মান নিয়ন্ত্রণ, পণ্যের সার্টিফিকেশন, ডেলিভারি অবকাঠামো ও পেমেন্ট সিস্টেমে নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক জেলায় এখনো প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস ও অনলাইন বাণিজ্যের সহায়ক অবকাঠামো দুর্বল। ফলে ‘সুপার সোর্সিং হাব’ গড়ে তুলতে হলে সরকার, ব্যাংকিং খাত ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
অর্থনৈতিক ভিশন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটদীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন দূর থেকে। তিনি সাক্ষাৎকারে নিজের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘রাজনীতি মানে কেবল ক্ষমতায় যাওয়া নয়, বরং দেশের প্রত্যেক তরুণকে আত্মনির্ভর করে তোলা।’ অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, তাঁর এই পরিকল্পনা মূলত একধরনের ‘ডিজিটাল বিকেন্দ্রীকরণ’, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র শুধু বড় শহর নয়, বরং প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
সম্ভাবনার দিগন্তবাংলাদেশ ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, চীন ও কানাডার বাজারে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। এসব চুক্তি যদি ই-কমার্সভিত্তিক রপ্তানি বাড়াতে ব্যবহার করা যায়, তাহলে দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে যুক্ত হতে পারবেন।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ‘রপ্তানি মানে পোশাক’—এ ধারণা বদলে যাবে। গ্রামের কারিগর, শহরতলির উদ্যোক্তা বা অনলাইন ব্যবসায়ী—সবার জন্যই নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে তারেক রহমানের যে বক্তব্য উঠে এসেছে, তা বাংলাদেশের রপ্তানিনীতির ভবিষ্যৎ দিক নিয়ে এক নতুন আলোচনার সূচনা করেছে। বাস্তবায়ন সম্ভব হলে রপ্তানির মানচিত্রে দেশের জেলা ও গ্রামও যুক্ত হতে পারে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পথে।
আনিস আহমেদ প্রতিষ্ঠাতা ও গ্রুপ সিইও, এমজিএইচ গ্রুপ
*মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন উদ য ক ত র য ক ত হত ই কম র স র উদ য
এছাড়াও পড়ুন:
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে তারেক রহমান: তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এখনো প্রধানত তৈরি পোশাকশিল্পনির্ভর। কিন্তু বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, নতুন শুল্ককাঠামো তৈরি হচ্ছে, আর শ্রমমূল্যের পার্থক্য কমে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প রপ্তানি খাত গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জেলা ও গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তারা যদি বিশ্ববাজারের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সংযুক্ত হতে পারেন, তাহলে আমাদের রপ্তানিকাঠামোয় এক মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।’
সুপার সোর্সিং হাবের পরিকল্পনাসাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেন, বৈশ্বিক শুল্ক পরিবর্তন এখন বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকার যদি ‘ই-কমার্স সোর্সিং হাব’ গড়ে তোলে, তাহলে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা (এসএমই) আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। এতে শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক শিল্প নয়, বরং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ছোট কারখানা, হস্তশিল্প ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিটও রপ্তানির ধারায় যুক্ত হতে পারবে।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের তুলনামূলক কম শুল্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে শূন্য শুল্কসুবিধা, চীন ও কানাডার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি—এসব সুযোগ কাজে লাগালে স্থানীয় উদ্যোক্তারা অ্যামাজন, আলিবাবা, শপিফাই বা ওয়ালমার্টের মতো বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনাতারেক রহমানের ভাষায়, ‘যে তরুণেরা আজ ফেসবুকে বা স্থানীয় মার্কেটে ছোট পরিসরে ব্যবসা করছেন, তাঁদের সামনে এখন বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের দরজা খুলে দেওয়া দরকার।’ তিনি মনে করেন, এভাবে তৈরি পোশাকের বাইরেও বাংলাদেশের হস্তশিল্প, গৃহসজ্জা, পাটপণ্য, প্রাকৃতিক প্রসাধনী, কাঠের খেলনা ও শিশুপণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিত হতে পারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এ ধারণা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে রপ্তানি খাতে বহুমুখীকরণ ঘটবে, যা কর্মসংস্থান ও আঞ্চলিক অর্থনীতিতে নতুন গতি আনতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতিতবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের পথে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আন্তর্জাতিক ই-কমার্সে যুক্ত হতে হলে মান নিয়ন্ত্রণ, পণ্যের সার্টিফিকেশন, ডেলিভারি অবকাঠামো ও পেমেন্ট সিস্টেমে নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক জেলায় এখনো প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস ও অনলাইন বাণিজ্যের সহায়ক অবকাঠামো দুর্বল। ফলে ‘সুপার সোর্সিং হাব’ গড়ে তুলতে হলে সরকার, ব্যাংকিং খাত ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
অর্থনৈতিক ভিশন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটদীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন দূর থেকে। তিনি সাক্ষাৎকারে নিজের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘রাজনীতি মানে কেবল ক্ষমতায় যাওয়া নয়, বরং দেশের প্রত্যেক তরুণকে আত্মনির্ভর করে তোলা।’ অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, তাঁর এই পরিকল্পনা মূলত একধরনের ‘ডিজিটাল বিকেন্দ্রীকরণ’, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র শুধু বড় শহর নয়, বরং প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
সম্ভাবনার দিগন্তবাংলাদেশ ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, চীন ও কানাডার বাজারে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। এসব চুক্তি যদি ই-কমার্সভিত্তিক রপ্তানি বাড়াতে ব্যবহার করা যায়, তাহলে দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে যুক্ত হতে পারবেন।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ‘রপ্তানি মানে পোশাক’—এ ধারণা বদলে যাবে। গ্রামের কারিগর, শহরতলির উদ্যোক্তা বা অনলাইন ব্যবসায়ী—সবার জন্যই নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে তারেক রহমানের যে বক্তব্য উঠে এসেছে, তা বাংলাদেশের রপ্তানিনীতির ভবিষ্যৎ দিক নিয়ে এক নতুন আলোচনার সূচনা করেছে। বাস্তবায়ন সম্ভব হলে রপ্তানির মানচিত্রে দেশের জেলা ও গ্রামও যুক্ত হতে পারে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পথে।
আনিস আহমেদ প্রতিষ্ঠাতা ও গ্রুপ সিইও, এমজিএইচ গ্রুপ
*মতামত লেখকের নিজস্ব