চিহ্নিত ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপানো উচিত নয়
Published: 12th, October 2025 GMT
কোনো চিহ্নিত ব্যক্তির দায় কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপানো উচিত নয়, বরং ব্যক্তির সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারে একমত বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর যে সদস্যরা গুম-খুনের মত অপরাধে জড়িয়েছে, তাদের ‘নির্মোহ’ বিচার জরুরি বলে মনে করছে বিএনপি।
শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দলের এই অবস্থান তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, সীমা লঙ্ঘনকারীরা বিচারের মুখোমুখি হোক, যাতে কোনো সরকার আর কখনো সেনাবাহিনীকে গুম-খুনের মতো অন্যায় নির্দেশ দিতে না পারে। সর্বজনীন এই আকাঙ্খার সাথে শতভাগ একমত পোষণ করেছে দলটি।
এতে আরো বলা হয়, “বিএনপি বিশ্বাস করে, দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব রক্ষায় সংশ্লিষ্ট অপরাধের সুষ্ঠু ও নির্মোহ বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ন্যায়বিচার শুধু অতীতের ঘটনাগুলোর শাস্তির নিশ্চয়তা দেয় না, বরং ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি না ঘটায়, সেই নিশ্চয়তাও দেয়। আইন ও মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণাঙ্গ শ্রদ্ধাই হতে পারে একটি শান্তিপূর্ণ, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি।”
বিএনপি বলেছে, একটি দেশের চলা উচিত ‘ল অব দ্যা ল্যান্ড’ অনুযায়ী। কিছু চিহ্নিত ব্যক্তির দায় যেমন কোনো প্রতিষ্ঠানের উপর চাপানো উচিত নয়, তেমনি তাদের অপকর্মের কারণে সেই প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করাও অনুচিত। একজন মানুষের কাজের ভালো-মন্দের দায়, বিশেষত গুরুতর অপরাধের শাস্তি, একান্তই তার নিজের।
"ফ্যাসিবাদের পুরো সময়জুড়ে সবচেয়ে বেশি গুম, খুন ও নিপীড়নের শিকার দল হিসেবে বিএনপি অবশ্যই সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের পক্ষে। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় নয়, বিবেচ্য কেবল ব্যক্তির অপরাধ ও আইনের শাসন। কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিচ্ছিন্ন অপরাধের সঙ্গে একটি দেশপ্রেমিক বাহিনীকে ঘিরে জনগণের আবেগ, আস্থা ও সম্মানের কোনো সম্পর্ক নেই, থাকা উচিতও নয় বলেও জানিয়েছে দলটি।
সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য এই দেশের, এই মাটির গর্বিত সন্তান। আর তাই, অধিকাংশ সেনা সদস্য নিশ্চিতভাবেই মন থেকে চান, সীমা লঙ্ঘনকারীরা বিচারের মুখোমুখি হোক, যাতে কোনো সরকার আর কখনো সেনাবাহিনীর কাছে গুম-খুনের মতো অন্যায় নির্দেশ দিতে না পারে। সর্বজনীন এই আকাঙ্খার সাথে বিএনপি শতভাগ একমত বলেও দাবি করা হয় বিবৃতিতে।
এর আগে গতকাল বিকালে ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো.
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন য য় ব এনপ অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
মাদারীপুরে ‘অবৈধ’ কর্মকর্তাদের টেনেহিঁচড়ে বের করে দেওয়ার হুমকি জামায়াত নেতার
মাদারীপুরে ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখায় প্রবেশ করে ‘অবৈধ’ কর্মকর্তাদের টেনেহিঁচড়ে ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা। ওই হুমকি দেওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
হুমকি দেওয়া ওই নেতার নাম আবদুর রহিম। তিনি জামায়াতে ইসলামীর মাদারীপুর পৌর শাখার নায়েবে আমির। এ ছাড়া মাদারীপুর পুরান বাজারের ডিএম টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আবদুর রহিম তাঁর অনুসারীদের নিয়ে মাদারীপুর শহরের পুরান বাজার ইসলামী ব্যাংকের শাখায় প্রবেশ করেন। পরে তিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের কক্ষে প্রবেশ করেন। পরে ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বক্তব্য দেন। এ সময় তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘কাল থেকে যেন তারা (এস আলমের সময়কালে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা) ব্যাংকে না আসে। এস আলমের কোনো লোক এই ব্যাংকে থাকতে পারবে না। আজ সন্ধ্যার মধ্যে তাদের আর জানি এই ব্যাংকে আমরা আর দেখতে না পাই।’
ভিডিওর আরেকটি অংশে আবদুর রহিমকে বলতে দেখা যায়, ‘এখানে চাকরি করতে পারবে না, পারবে না, পারবে না। আজকে আপনাদের ম্যানেজারসহ বলে গেলাম, আগামী দিন আমরা আবার আসব। পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়ে যায়। আমরা টেনেহিঁচড়ে ব্যাংক থেকে বের করে দেব, ইনশা আল্লাহ! আগামীকাল কোনো প্রক্রিয়ায় যেন অবৈধ লোক এই ব্যাংকে প্রবেশ করতে না পারে। যদি সঠিক পন্থায় নিয়োগ হয়, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাদের জবাব দিতে হবে। না হলে তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দিতে হবে। আমরা ঘোষণা দিয়ে গেলাম। আগামীকাল আবার খোঁজখবর নেব।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকালে জামায়াতের ওই নেতা ইসলামী ব্যাংকে যান। শনিবার সন্ধ্যার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়।
জানতে চাইলে জামায়াত নেতা আবদুর রহিম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয়ভাবে আমাদের ওই ব্যাংকে যাওয়ার কোনো নির্দেশনা ছিল না। আমরা বৃহস্পতিবার ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেছি। পরে ব্যাংকের ম্যানেজার আমাদের ডাকলে তাঁর কক্ষে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, এস আলমের সময় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা যেন এই ব্যাংকে না থাকতে পারে। এটাই আমরা বলেছি। কোনো হুমকিধমকি দিইনি। বাকি কথা ব্যাংকের ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি উত্তর দেবে।’
ইসলামী ব্যাংক মাদারীপুর পুরান বাজার শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল গাফ্ফার মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশেই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৬ হাজার ৫০০ জন ছাঁটাই হয়েছে। আমাদের ব্রাঞ্চ (শাখা) থেকে ১৬ জন বাদ পড়েছে। যারা ছাঁটাই হয়েছে, তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেছে। তার প্রতিবাদে আবার গ্রাহকেরা মানববন্ধন করেছে। ওই দিন আবদুর রহিম একজন গ্রাহক হিসেবে মানববন্ধনে অংশ নেন। পরে ব্যাংকে আসেন। তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, একজন গ্রাহক হিসেবেই বলেছেন। বর্তমানে যাঁরা ব্যাংকে কর্মকর্তা আছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য করে তিনি কিছু বলেন নাই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মাদারীপুর ব্রাঞ্চ থেকে ১৬ জন ছাঁটাই হলেও আরও একজন কর্মকর্তাকে জামায়াতের লোকজন বাদ দিতে ম্যানেজারকে চাপ সৃষ্টি করেন। পরে জামায়াতের ওই নেতা প্রকাশ্যে হুমকি দিলে তিনি আর ব্যাংকে আসেননি। এখানে যাঁরা ছাঁটাই হয়েছেন, সবাই অনিয়ম করে আসেননি। অনেকে যোগ্যতা অনুসারে নিয়োগ পেয়েছেন। তাঁরাও ছাঁটাই হয়েছেন।
এ সম্পর্কে মাদারীপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুর রহিম ইসলামী ব্যাংকে গিয়ে হুমকি দিয়েছেন, এমন কথা শুনিনি বা জানি না। ব্যাংকের ম্যানেজার তাঁকে ডাকছিল বলে শুনেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফেসবুকে আমরা তাঁর (আবদুর রহিমের) বক্তব্য শুনেছি। এটি নিয়ে আমরা আলাপ করে বিষয়টি দেখব।’
একদিকে ছাঁটাই, অন্যদিকে নিয়োগে তোড়জোড় ইসলামী ব্যাংকের