জিম্মিরা মুক্ত হওয়ামাত্রই গাজার সুড়ঙ্গগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ইসরায়েলের
Published: 12th, October 2025 GMT
গাজা থেকে জিম্মিরা মুক্ত হওয়ার পরপরই সেখানকার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের অবশিষ্টাংশ গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আজ রোববার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এ কথা বলেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, যে দেশটির উদ্যোগে তিন দিন আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে, সেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি ‘আন্তর্জাতিক’ তদারকিতে এই অভিযান চলবে।
এক বিবৃতিতে কাৎজ বলেছেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি পাওয়ার ধাপটি শেষ হলে ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জটি হবে গাজায় হামাসের সব সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা। এ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকতে আমি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি।’
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজায় ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এ ধরনের সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নজরদারির বাইরে থেকে কাজ করার সুযোগ পায় তারা। এর মধ্যে কিছু সুড়ঙ্গ সীমানার বেড়ার নিচ দিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছে। এগুলো ব্যবহার করে ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালানোর সুযোগ পায় হামাস।
‘জিম্মিদের মুক্তি পাওয়ার ধাপটি শেষ হলে ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জটি হবে গাজায় হামাসের সব সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা। এ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকতে আমি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি।’ (ইসরায়েল কাৎজ, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী)২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস সীমান্ত পার হয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে দুই বছর ধরে ইসরায়েলি হামলা চালিয়ে বেশ কিছু সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে দিয়েছে।
আরও পড়ুনহামাস কি অস্ত্র ছাড়তে রাজি হবে১০ অক্টোবর ২০২৫কাৎজ বলেছেন, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ও সংগঠনটির সামরিক ক্ষমতা কমানোর রূপরেখা অনুযায়ী বাকি সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করা হবে। গাজায় যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম ধাপ মেনে নিয়েছে। এর আওতায় গত শুক্রবার থেকে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর মধ্যে যাঁরা জীবিত আছেন, তাঁদের জীবিত অবস্থায় তুলে দেওয়া হবে। আর যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।
আরও পড়ুনগাজায় হাসপাতালের নিচে সুড়ঙ্গে হামাসের সামরিক প্রধান সিনওয়ারের মরদেহ শনাক্তের দাবি ইসরায়েলের০৯ জুন ২০২৫ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন কারাবন্দীকে মুক্তি দেবে। এর মধ্যে প্রাণঘাতী হামলার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া কয়েকজন ব্যক্তিও আছেন। গাজা থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে আটক হওয়া ১ হাজার ৭০০ জন ফিলিস্তিনিও মুক্তি পাবেন।
তবে হামাস এখনো পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণের জন্য রাজি হয়নি। আজ রোববার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হোসাম বাদরান বলেছেন, মার্কিন পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে অনেক জটিলতা এবং সমস্যার বিষয় আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধ ব স কর ইসর য় ল র জন য বল ছ ন ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা
জীবনের এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়ের উৎস শুকিয়ে যাওয়া, পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকা বা জীবনে বরকতের অভাব—এসব চাপে মানুষের মন ভারী হয়ে ওঠে। ইসলামে এমন সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এমন একটি দোয়া মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সেবক আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর জন্য করেছিলেন। এই দোয়া শুধু ধন-সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি চায় না, বরং সবকিছুতে আল্লাহর বরকত কামনা করে।
দোয়ার উৎস ও প্রেক্ষাপটহাদিসে বর্ণিত, আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইম নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার এই সেবক আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ তখন নবীজি (সা.) দোয়া করেন: ‘আল্লাহুম্মা আকসির মালাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বারিক লাহু ফীমা আ'তাইতাহু।’
এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং পৌত্রাদি মিলিয়ে তিনি ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।আরও পড়ুনতাকওয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ৩০ জুন ২০২৫অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তার ধন-সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও এবং তুমি যা দান করেছ, তাতে তার জন্য বরকত দান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৪)
আনাস (রা.) তখন মাত্র দশ বছরের একটি ছেলে, যিনি নবী (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর তিনি পৌত্রাদি মিলিয়ে ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন (সহিহ মুসলিম থেকে বর্ণিত)। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।
দোয়ার উদ্দেশ্য শুধু ধন নয়, বরকতএই দোয়ার সৌন্দর্য এতে যে এটি ধন-সম্পদের পাশাপাশি বরকতের জন্য প্রার্থনা করে। ইসলামে ধনকে শুধু সঞ্চয় নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯)
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। অর্থনৈতিক সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা বা পরিবারের চাপে অনেকে কষ্ট পান। কিন্তু এই দোয়া স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সমৃদ্ধি আল্লাহর রহমতে। সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই—সন্তান লাভের সঙ্গে তাদের সুস্থতা, শান্তি ও ইমানের বরকত চাওয়া জরুরি।
আজকের দিনে, যখন পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে এবং অর্থের চাপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন দোয়া) মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়া শুধু ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়।
দোয়ার সঙ্গে সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন—এগুলো বরকতের দরজা খোলে।
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫