বিদেশি অতিথিরা এসে যাতে জনগণের দারিদ্র্য-মালিন্য দেখতে না পান, সে জন্য ‘রাজপথের ধারেকাছে দারিদ্র্যের যত চিহ্ন আছে’ সব আড়াল করার চল এ অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই চালু আছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান কিশোরগঞ্জের ভৈরব স্টেশন সড়কে যাওয়ার পর সেখানে সেই ধরনের দৃশ্যপট দেখা গেছে। দেখা গেছে, উপদেষ্টা আসবেন বলে প্রধান সড়কের পাশের আবর্জনা পর্দা দিয়ে আড়াল করা হলো। আবর্জনা চোখের আড়ালে গেলেও দুর্গন্ধ রয়ে গেল। মানুষ নাক চেপে পার হলো। কিন্তু ছবিতে ধরা পড়ল ‘পরিচ্ছন্ন’ ভৈরব।

উপদেষ্টা নিশ্চিন্তে ফিরে গেলেন। পরের দিন পর্দা খুলে ফেলা হলো। একদিন পর সেখানে উঠল বেড়া। স্থায়ী আবরণে আবর্জনাকে চোখের আড়াল করা হলো। এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসিঠাট্টা হয়েছে। তবে ঘটনাটি নিছক হাস্যকর নয়; কারণ এটি বাংলাদেশের প্রশাসনিক সংস্কৃতির এক গভীর প্রতীকচিত্র।

এতে যে কারও মনে হতে পারে, আমরা এমন এক রাষ্ট্রে বাস করছি, যেখানে ‘পরিচ্ছন্নতা’ মানে ময়লা ও গন্ধ দূর করা নয়, বরং বিশেষ ও অভিজাত ব্যক্তিবিশেষের দৃষ্টিসুখ নিশ্চিত করা। এখানে উন্নয়নকে দেখা হয় প্রলেপের মতো যার গভীরে থাকে পচন, ওপরে থাকে উজ্জ্বল রংচং। এই নান্দনিক প্রতারণার উদ্দেশ্য নাগরিককে সন্তুষ্ট করা নয়; বরং সেই বিশেষ ব্যক্তির সন্তুষ্টি অর্জন।

ইউএনওর যুক্তি ছিল, ঘরে মেহমান এলে যেমন গৃহস্থ ঘর গুছিয়ে রাখে, তেমনি উপদেষ্টার সম্মানে আবর্জনাকে সাময়িক আড়াল করা হয়েছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্র নামক এই ঘরের মালিক উপদেষ্টা নন, জনগণ। আর উপদেষ্টা বা মন্ত্রীরা সেই ঘরের মেহমান নন। তাঁরা সেই ঘর গুছিয়ে রাখার কাজে নিয়োজিত বেতনভুক্ত পরিচারক।

সেই বিবেচনায় ভৈরবের আবর্জনার স্তূপ আড়াল না করে উল্টো উপদেষ্টাকে আরও ভালো করে তা দেখানো দরকার ছিল। এতে সরকার যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁরা মাঠপর্যায়ের সত্যিকার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন এবং সে অনুযায়ী তাঁরা সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এতে দিন শেষে তা নাগরিকের জন্যই কল্যাণকর হয়।

স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনকে বুঝতে হবে, আবর্জনা আড়াল না করে শহরের জন্য স্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সময়মতো বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ জরুরি। এগুলো কোনো বিলাসিতা নয়, এগুলো নাগরিক জীবনের মৌলিক শর্ত। সেই আলোকে ভৈরব স্টেশন সড়কের বর্জ্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান জরুরি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

‘সঠিক স্থান নির্ধারণ না হওয়া আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে’

জনগণের জন্য সুবিধা হয়, এমন স্থানে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। তিনি বলেন, ‘‘সঠিকভাবে স্থান নির্ধারণ হয়নি, এমন দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। নির্মাণাধীন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে যেগুলোর উপযোগিতা নেই, সেগুলোর বিষয়ে নিরীক্ষা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর এবং চটচটিয়া শিবনগর খেয়াঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। 

আরো পড়ুন:

অস্বাভাবিক জোয়ারে হাতিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত  

টানা বর্ষণে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা

উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, ‘‘অতীতে অনেক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নিচু ও বন্যাপ্রবণ স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে। উঁচু স্থানে নির্মাণ করলে সেগুলো অধিক কার্যকর হতো। স্থানীয় জনগণের আপত্তি সত্ত্বেও এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই কাজগুলো করা হয়েছে। সত্যিকার দুর্যোগের সময় সেই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো কাজে আসবে না।’’  

তিনি বলেন, ‘‘এখন তিনতলা বিশিষ্ট দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। দুর্যোগকালে সেগুলোর দ্বিতীয় তলায় নারী-শিশু এবং তিন তলায় থাকবে পুরুষরা।’’  

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘‘সরকার অর্থ খরচ করে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য। দুর্যোগের সময় ভবনগুলো সেল্টার হিসেবে ব্যবহার হবে, অন্যসময় এগুলো জনস্বার্থে ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে।’’ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্মাণাধীন আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা।
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান, খুলনার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান, জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।

পরে উপদেষ্টা বাগেরহাটের বিভিন্ন দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াত
  • পিআর আন্দোলনের লক্ষ্য নির্বাচন বিলম্বিত করা: মির্জা ফখরুল
  • পাকিস্তানের ৫৮ সেনা হত্যার দাবি কাবুলের, ১৯ আফগান ফাঁড়ি ‘দখল’ ইসলামাবাদের
  • সোনারগাঁয়ে মুষলধারে বৃষ্টিতেই ড. ইকবালের গণসংযোগ  
  • পিআর পদ্ধতিতে জনগণের কোনো সুবিধা নেই: মঈন খান
  • জোটের বিষয়ে কোনো দলের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক হয়নি: আখতার 
  • দেশে পিআর পদ্ধতি চালুর মতো পরিবেশ নেই: এ জেড এম জাহিদ
  • ইসলামি শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন জরুরি: চরমোনাই পীর
  • ‘সঠিক স্থান নির্ধারণ না হওয়া আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে’