নাটক গান কবিতায় উৎসবমুখর প্রচার
Published: 13th, October 2025 GMT
ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন প্রার্থীরা। একের পর এক শিক্ষার্থী ফটক পেরিয়ে ঢুকছেন। প্রার্থীরা তাঁদের হাতে গুঁজে দিচ্ছেন প্রচারপত্র। হাসিমুখে বলছেন, ‘আপনার মূল্যবান ভোট চাই। সমর্থন চাই।’ গতকাল রোববার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ল। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাস এখন উৎসবমুখর।
আজ সোমবার রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচার। তার আগে গত ১৮ দিন ক্যাম্পাসে প্রার্থীরা প্রচার চালিয়েছেন। কেউ কেউ গান গেয়ে, জামাই সেজে, ঐতিহ্যবাহী ‘গম্ভীরা’ গানের সুরে সুরে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। শিক্ষার্থীরাও প্রার্থীদের এসব অভিনব পদ্ধতির প্রচারে সাড়া দিয়েছেন। প্রার্থীর সঙ্গে ছবি তুলেছেন। প্রচারণা মুঠোফোনে ধারণ করেছেন।
ক্যাম্পাসে সশরীর প্রচারের বাইরে অনলাইনেও সরব আছেন প্রার্থীরা। তাঁরা এখনো নিয়মিত ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও আপলোড করছেন। কেউ কেউ শর্টফিল্ম বানিয়ে আলোচনায় এসেছেন। কেউ বানিয়েছেন নাটক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আবার ভোট হতে যাচ্ছে। এবার মোট ভোটার প্রায় ২৭ হাজার, যার মধ্যে ছাত্রী প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। প্যানেল রয়েছে ১৩টি।
‘সময়ের সঙ্গে দৌড়’
দুপুর ১২টা। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ঝুপড়ি গমগম করছিল প্রার্থী ও ভোটারের ভিড়ে। ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়াকে পাওয়া গেল ঝুপড়িতে। তিনি শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন। এক ফাঁকে ধ্রুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর কিছু ঘণ্টা পর প্রচার শেষ হবে। এই শেষ মুহূর্তে সময়ের সঙ্গে দৌড়াচ্ছি। শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি। নিজেদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছি। শিক্ষার্থীরাও আগ্রহী হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ।’
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মুল আখয়ার। ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন এই শিক্ষার্থী। প্রচারপত্র দিতে এলে কথায় কথায় তিনি জানালেন, নিজস্বতা বজায় রেখে তিনি প্রচার চালাচ্ছেন। ভোটারদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন। ভোটে অংশ নেওয়া তাঁর কাছে অন্য রকম অভিজ্ঞতা এনে দিচ্ছে।
একই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী তাওসিফ মুত্তাকী চৌধুরীকেও ব্যস্ত পাওয়া গেল। বিজ্ঞান অনুষদের নিচে প্রচার চালিয়ে কেবল ঝুপড়িতে এসেছিলেন তিনি। পরে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা একটি আধুনিক ক্যাম্পাস গড়তে চান। এ প্রতিশ্রুতি সবাইকে দিচ্ছেন।
নির্বাচন এলে ভোটারদের কদর বাড়ে—এ কথা সবার মুখে মুখে। নাট্যকলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী বিশ্বনাথ ভৌমিকও সেদিকে ইঙ্গিত করে বললেন, পরিবেশ এখন পর্যন্ত উৎসবমুখর। দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীরাও উচ্ছ্বসিত।
ভিন্নধারার প্রচারণা
প্রচারে নতুনত্ব চোখে পড়েছে। কেউ মাইক ছাড়াই কবিতা আবৃত্তি করে শিক্ষার্থীদের টানছেন, কেউ পোস্টারের বদলে হাতে এঁকে তৈরি করেছেন পোস্টকার্ড। আবার টাকার ওপর ছবি ছাপিয়েও প্রচার করছিলেন এক প্রার্থী। আবদুল্লাহ আল সাকিফ রহমান দুই টাকার একটি নোট হাতে ধরিয়ে দিয়ে প্রচার করছিলেন। কাছে গিয়ে দেখা গেল, এটি নকল টাকা। নোটের ওপর তাঁর ছবি আঁকা। আর লেখা—আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদপ্রার্থী। চাহিবামাত্র ইহার প্রার্থীকে ভোট প্রদান করবেন। আরেক পাশে জাতীয় পাখি দোয়েলের পাশে এই প্রার্থীর ব্যালট নম্বর লেখা। সাকিফ প্রথম আলোকে বলেন, একটু ব্যতিক্রমভাবে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন তিনি। সাড়াও পাচ্ছেন।
কাটা পাহাড়ে ‘চার্লি চ্যাপলিনের’ অবয়ব ধারণ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন মো.
এবারের প্রচারে বড় অংশজুড়ে দেখা গেছে নারী শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা। প্রতিটি প্যানেল নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ইশতেহারে বিভিন্ন দফা যুক্ত করেছে। এসব দফা সামনে এনে প্রচার চালাচ্ছে তারা।
১০ মিনিটে ৪০ ভোট
নির্বাচনে এবার একজন ভোটার ৪০টি পদে ভোট দেবেন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি ও হল সংসদের ১৪টি পদে ভোট দিতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে ভোট দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। পাঁচটি অনুষদ ভবনে ভোটকেন্দ্র থাকবে ১৫টি ও বুথ থাকবে ৭০০টি। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বলছে, সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ভোটকেন্দ্রের ভিড় ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বলছে, একজন শিক্ষার্থীকে পাঁচটি ব্যালট পেপার দেওয়া হবে। এর মধ্যে চারটিতে থাকবে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্রার্থীদের নাম ও ব্যালট নম্বর। অন্য একটিতে থাকবে হল সংসদের প্রার্থীদের নাম ও ব্যালট নম্বর। এতে ভোটাররা দ্রুত বুঝতে পারবেন কোন ব্যালটে কোন পদ রয়েছে। ভোট গণনা হবে অপটিক্যাল মার্ক রিডার বা ওএমআর পদ্ধতিতে।
চার স্তরের নিরাপত্তা
নির্বাচন ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় প্রশাসনিক ভবনে সিনেট কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার। তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সব দাবি অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছি। চার স্তরের নিরাপত্তা থাকলেও আমাদের আসল শক্তি ৩০ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’
সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ব্যালট পেপার ও স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স প্রস্তুত করা হয়েছে। ভোটারদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গোপন কক্ষগুলো সিসিটিভির আওতায় থাকবে ও বিদ্যুৎ চলে গেলেও ফুটেজ সংরক্ষিত থাকবে। প্রতি কেন্দ্রে দুটি করে মেডিকেল টিম থাকবে। ১৪ অক্টোবর থেকে পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন না, ভোটের দিনও কেবল পরিচয়পত্র নিয়েই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শাটল ট্রেনের সূচি বাড়ানো হয়েছে, পাশাপাশি অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি প্রবেশপথের মধ্যে ৭টি বন্ধ থাকবে নির্বাচনের দিন। শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে ২৪টি পয়েন্টে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুদকের পরিধি বাড়ছে, আসছে নতুন নিয়ম
দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও শক্তিশালী করতে সংস্থাটির পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। চেয়ারম্যানসহ পাঁচ সদস্যের কমিশনে একজন নারী ও একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ থাকবেন। এখন থেকে দুদকের কাজের প্রতিবেদন ছয় মাস পরপর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে এবং দুদক কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দাখিল করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এই সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছে।