শেষ চাকসু নির্বাচনে ‘সর্বদলীয় ঐক্য’র কাছে হেরে গিয়েছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা। সেই হারের পরও ক্যাম্পাসে শিবিরের ‘দাপট’ ছিল। ২০১৪ সালে তাদের সরিয়ে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করে ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ)। ৩৫ বছর পর হতে যাওয়া এবারের নির্বাচন সংগঠনটির কাছে যেন ফিরে আসার লড়াই।
গত প্রায় এক দশক ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেনি ছাত্রশিবির। রাজনৈতিক পালাবদলের পর এখন আবার তারা ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ করছে। ফিরেছে ছাত্ররাজনীতিতে। চাকসু নির্বাচনেও তাদের প্রার্থীরা বেশ সরব।
নির্বাচনের প্রচারণা, ইশতেহার ও ভোটারদের সাড়া—সব মিলিয়ে এবার চাকসুতে পুরো প্যানেল জয় পাওয়ার আশা করছেন নেতা-কর্মীরা। সংগঠনটি মনে করছে, চাকসু নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ প্রস্তুতি, প্রার্থীদের পরিচিতি ও ক্যাম্পাসের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভোট দেবেন। তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। আবাসিক হলগুলোতেও সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনে এটি নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে শিক্ষার্থীরা শিবিরের কার্যক্রম দেখার সুযোগ পাননি। এ কারণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, যাতে শিবিরের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডগুলো শিক্ষার্থীরা দেখেন। আশা করছি শিক্ষার্থীরা মূল্যায়ন করবেন।’
প্রস্তুতি দীর্ঘদিনেরগত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের দুই সদস্যের কমিটি প্রকাশ্যে আসে। এরপর ২১ অক্টোবর প্রকাশ্যে আসেন প্রচার সম্পাদক সাইদ বিন হাবিব। চাকসুতে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন।
শাখা ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা জানান, চাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি এক বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে থাকা এসব নেতা-কর্মীর পরিচিতিই অন্যতম শক্তি। এটি প্রচারণার ক্ষেত্রে কাজে দিচ্ছে। এর বাইরে ক্যাম্পাসে দুবার নবীনবরণ, বিনা মূল্যে ইফতার আয়োজন, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সেমিনার আয়োজনও শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
প্রচারণায় কৌশলচাকসুতে ভোটার প্রায় ২৮ হাজার। এর মধ্যে ১৮ হাজারই অনাবাসিক। এই অনাবাসিক ভোটারদের কাছেই পৌঁছানো অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন প্রার্থীরা। ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের চারজন প্রার্থী ও একাধিক নেতা-কর্মী প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।
প্রার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইশতেহার ও প্রার্থী পরিচিতির বিভিন্ন ভিডিও তাঁরা দিচ্ছেন। তবে এটি যথেষ্ট নয়। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে তাঁরা অনুষদ ভবন, ঝুপড়ি ও ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, নগরের ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন ও শাটল ট্রেনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রতিদিনই এসব জায়গায় সংগঠনটির নেতা-কর্মী ও প্রার্থীরা ভিড় করছেন।
৯ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রচারআগামী বুধবার চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হতে যাওয়া এ ভোটের আয়োজনে ক্যাম্পাসজুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। ছাত্রশিবিরের পাশাপাশি আরও ১২টি প্যানেল চাকসুতে লড়ছে। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে হবে বলে ধারণা করছেন শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রশিবির তাঁদের প্রচারণায় ৯টি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। এগুলো হলো আবাসন, যাতায়াত সংকট নিরসন, নিরাপদ ও সবুজ ক্যাম্পাস নির্মাণ, সেশনজট কমানো, আধুনিকায়ন, নারীবান্ধব ক্যাম্পাস, শিক্ষা, গবেষণা ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিতকরণ ও জনকল্যাণ কার্যক্রম।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গতানুগতিক নয়, পরিবর্তনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি : মাসুদুজ্জামান
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, এবং আমাদের অভিভাবক তারেক রহমানের প্রতি।
আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করছি গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়, তাই আপনারা সবাই তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। বন্দর ও নগর একই মায়ের দুই সন্তান। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনকে একটি আধুনিক ও স্বপ্নের নারায়ণগঞ্জে রূপান্তরিত করা সম্ভব।
আমি জানি আপনাদের গ্যাস সমস্যা, সুপেয় পানি, সেতু এবং পরিকল্পিত নগরীর প্রয়োজন রয়েছে। সমস্যা আছে, কিন্তু সমাধানের পথও আছে। আপনারা যদি বিএনপিকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেন, তবে আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব জাতীয় সংসদে।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় বন্দর সিরাজদৌল্লা ক্লাব মাঠে বন্দর থানা ও বন্দর উপজেলা বিএনপি কারানির্যাতিত নেতাকর্মীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমি গতানুগতিক নয়, পরিবর্তনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি।
বন্দরে এখনো একটি পরিকল্পিত নগরী গড়ার সুযোগ আছে, এবং আমরা সেটি বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি না এবং করবোও না, তবে প্রিয় বন্দরবাসী, নগরবাসী - আপনারা সচেতন থাকবেন যাতে কেউ ধর্মকে বিভ্রান্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জনমানুষের দল - আমরা মানুষের অন্তরে আছি। ইন শা আল্লাহ, আগামী নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পারব যে জনগণ বিএনপিকেই তাদের প্রত্যাশার জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আতাউর রহমান মুকুলের সভাপতিত্বে সংবধর্ণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক; আব্দুস সবুর খান সেন্টু, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সদস্য; হাজী ফারুক হোসেন, অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, মনোয়ার হোসেন শোখন, মো: আলমগীর হোসেন, অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু। প্রবীণ বিএনপি নেতা, বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজী নুরুদ্দিন, বন্দর থানা বিএনপির; সভাপতি শাহেন শাহ্, মহানগর যুবদল সভাপতি মনিরুল ইসলাম সজল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাখাওয়াতুল ইসলাম রানা, সাবেক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা – মুরাদ, কৃষকদলের সভাপতি এনামুল খন্দকার স্বপন। ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাজীব। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের বিএনপির মহানগর, থানা, ওয়ার্ডসহ কৃষকদল, যুবদল, মহিলাদল এবং সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কারাভোগ করা নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে অনেকে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও আন্দোলনের প্রেরণা তুলে ধরেন। উপস্থিত জনতারা বলেন, ন্যায়বিচার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সংগ্রাম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।