অধ্যাদেশের দাবিতে বিক্ষোভ, ঢাকা কলেজে শিক্ষককে হেনস্তা, কাল শিক্ষা ক্যাডারের কর্মবিরতি
Published: 13th, October 2025 GMT
ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ একীভূত করে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি করা নিয়ে জটিলতা আরও বাড়ছে। এ নিয়ে আন্দোলন এখন সহিংসতার দিকে গড়াচ্ছে। আজ সোমবার ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীকে মারধর ও একজন শিক্ষককে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে সরকারি কলেজ, সরকারি মাদ্রাসা ও অন্যান্য অফিসে দিনব্যাপী সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আজ রাজধানীর শিক্ষা ভবনসংলগ্ন রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ওই সাত কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী। এই কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়। সচিবালয় অভিমুখে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ কারণে ওই পথ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, খসড়া অধ্যাদেশের বিষয়ে ছয় হাজারের বেশি মতামত পাওয়া গেছে। এগুলো সংকলন ও বিশ্লেষণের কাজ চলছে। এরপর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অংশীজনের সঙ্গে শিগগির ধারাবাহিক পরামর্শ সভা করা হবে।
২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তখন থেকেই সংকট ছিল। সরকারি এসব কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই কলেজগুলোকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত করার আগেই অধিভুক্তি বাতিল করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এখন এসব কলেজ একীভূত করে সরকার নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। সাতটি কলেজ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠকেন্দ্র (একাডেমিক ক্যাম্পাস)। একেক ক্যাম্পাসে আলাদা আলাদা বিষয়ে (ডিসিপ্লিন) পড়ানো হবে। বিষয়ও কমে যাবে। প্রস্তাবিত এই কাঠামো নিয়ে ওই সব কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা বেশ কিছুদিন ধরেই পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন করছেন।
কলেজগুলোর উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা কলেজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার দাবিতে আন্দোলন করছেন। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের অনেকেই প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না। এ জন্য তাঁরা খসড়া অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই অবস্থায় আছেন বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের ছাত্রীদের অনেকেই।
আর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি দ্রুত করার দাবিতে আন্দোলন করছেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, তাঁরা ‘মার্চ ফর অর্ডিন্যান্স’ কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে দাবিতে আজ বেলা ১১টার দিকে শিক্ষা ভবনসংলগ্ন সড়কে জমায়েত হন। কয়েক শ শিক্ষার্থী সেখানে অংশ নিয়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারির দাবিতে মিছিল করেন ও স্লোগান দেন।
এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের এক ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে তাঁরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়াও প্রকাশ করে মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। এখন তাঁরা চান, দ্রুতই অধ্যাদেশ প্রকাশ করা হোক। কারণ, তাঁরা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও নেই, আবার নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও নেই। এতে পড়াশোনারও ক্ষতি হচ্ছে।
শিক্ষক হেনস্তা, উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীকে মারধর, কর্মবিরতির ঘোষণা
এদিকে ঢাকা কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো বিলুপ্তির আশঙ্কায় কলেজটির উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে অভিযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন। আবার স্নাতক-স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের আরেকাংশ শিক্ষা ভবনের সামনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এ নিয়ে শিক্ষকেরা সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। একপর্যায়ে ইতিহাস বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপককে হেনস্তা ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কিছু ছাত্রকেও মারধর এবং কলেজের শিক্ষক লাউঞ্জ ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন শিক্ষকেরা। তাঁরা ঢাকা কলেজ মিলনায়তনে প্রতিবাদ সভা করেন। সেখানে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন শিক্ষকেরা।
পরে সংগঠনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সহকর্মীদের জানানো হয়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সব কর্মকর্তাকে এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ ও সদস্যসচিব মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন ট র ল ইউন ভ র স ট প রস ত ব ত অবস থ ন কল জ র ব স এস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গর্ভে একই সঙ্গে একাধিক সন্তান কেন আসে? এর ঝুঁকি কী?
প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে যত নারী মা হন, তাঁদের মধ্যে প্রতি ২৫০ জনের মধ্যে একজনের যমজ সন্তান হয়। অর্থাৎ দুটি সন্তান গর্ভে আসে। একই সঙ্গে তিন সন্তান গর্ভে আসার ঘটনা ঘটে আরও কম, প্রতি ১০ হাজার জনে একজন।
একই সঙ্গে চার সন্তান জন্মের ঘটনা বিরল। প্রতি সাত লাখ মায়ের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। একবারে এর বেশি সন্তান জন্মের হার আরও কম। তবে একটির বেশি সন্তান গর্ভে থাকলেই তা মা ও সন্তানদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্বাভাবিক নিয়মে একজন নারীর মাসিক চক্রে একটিমাত্র ডিম্বাণুই পূর্ণতা পায়। এই ডিম্বাণু একটি শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ফলে একটি ভ্রুণ সৃষ্টি হয়। এটিই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ব্যতিক্রম হতে পারে দুইভাবে।
১. একাধিক ডিম্বাণু পূর্ণতা পেলে সে ক্ষেত্রে সেগুলো একাধিক শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে একাধিক ভ্রুণ সৃষ্টি হতে পারে। প্রকৃতির নিয়মেই অল্প কিছু নারীর গর্ভে এভাবে একাধিক সন্তান আসে। আবার বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের প্রভাবেও একাধিক ডিম্বাণু পূর্ণতা পেতে পারে এবং ঘটতে পারে এমন ঘটনা।
২. একটি ডিম্বাণুর সঙ্গে একটি শুক্রাণু মিলিত হয়ে যে ভ্রুণ তৈরি হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবেই তা বিভাজিত হয়ে দুটি ভ্রুণ তৈরি হতে পারে। তখন যমজ সন্তান হয়। এ ক্ষেত্রে সন্তানদের চেহারা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থাকে একই রকম।
আরও পড়ুনপ্রসব–পরবর্তী মানসিক সমস্যার কারণ, ঝুঁকি ও করণীয়০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫গর্ভের সন্তানদের ঝুঁকিএকাধিক সন্তান গর্ভে এলে গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
গর্ভকাল পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রসববেদনা শুরু হয়ে যেতে পারে, পানি ভাঙতে পারে।
প্রসবের সময় আগে মাথা না বেরিয়ে শরীরের অন্য অংশ, এমনকি নাড়িও বেরিয়ে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসব হয় না।
অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশুর ওজনও থাকে কম, শ্বাসপ্রশ্বাসও ব্যাহত হতে পারে।
দীর্ঘদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হতে পারে এই শিশুদের, হতে পারে মৃত্যুও।
জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকিও থাকে এসব শিশুর।
গর্ভে থাকার সময়েও মারা যেতে পারে এই শিশুরা।
গর্ভফুলজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন‘ব্রেন ডেড’ নারী যেভাবে যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন০৫ জানুয়ারি ২০২৩মায়ের জটিলতাএকাধিক সন্তান গর্ভে থাকলে বমি বমি ভাব, বমি, দুর্বলতা, রক্তস্বল্পতা, ওজন বৃদ্ধি—সবই হয় অতিরিক্ত মাত্রায়।
তাই স্বাভাবিক চলাফেরা, এমনকি ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
হতে পারে শ্বাসকষ্ট।
রক্তচাপজনিত মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেশি থাকে এই মায়েদের।
একাধিক সন্তান গর্ভে এলে করণীয়একাধিক সন্তান গর্ভে আসা মানেই উচ্চ ঝুঁকি। তাই এমনটা হলে হবু মায়ের চাই বাড়তি যত্ন। অবশ্যই বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে মাকে। পরিবারের সদস্যদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে তাঁর প্রতি। পর্যাপ্ত পুষ্টি, পানি, বিশ্রাম ও হালকা ব্যায়াম—রোজকার জীবনে এসব বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। মায়ের মনেরও যত্ন নিতে হবে। প্রসবের পরিকল্পনা করা উচিত এমন হাসপাতালে, যেখানে প্রয়োজন হলে নবজাতকদেরকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখার সুযোগ আছে।
আরও পড়ুনযে ভাষায় কথা বলেন কেবল দুই যমজ ভাই০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫