মুক্তি পাওয়া ১৫৪ ফিলিস্তিনি বন্দীকে জোর করে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল
Published: 13th, October 2025 GMT
ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তির অধীনে মুক্তি পাওয়া অনেক ফিলিস্তিনি বন্দীর পরিবার বলছে, বহু প্রতীক্ষিত এই মুক্তি তাঁদের জন্য একই সঙ্গে আনন্দ ও কষ্টের। কারণ, তাঁরা জানতে পেরেছেন, তাঁদের প্রিয়জনদের তৃতীয় কোনো দেশে নির্বাসিত করা হবে।
ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সোমবার বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়া অন্তত ১৫৪ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে ইসরায়েল নির্বাসনে যেতে বাধ্য করবে।
যাঁদের নির্বাসিত করা হচ্ছে, তাঁরা ইসরায়েলের মুক্তি দেওয়া ফিলিস্তিনের বৃহত্তর একটি দলের অংশ। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ২৫০ এবং গত দুই বছরে গাজা থেকে আটক প্রায় ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের মতে, এঁদের মধ্যে অনেককে ‘গুম’ করা হয়েছিল।
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী আজ সোমবার ২০ জন ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে।
মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের কোথায় পাঠানো হবে, সে সম্পর্কে ইসরায়েল এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে গত জানুয়ারিতে বন্দী মুক্তির সময় কয়েক ডজন বন্দীকে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ যেমন তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও তুরস্কে নির্বাসিত করা হয়েছিল।
পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, এই জোরপূর্বক নির্বাসন মুক্তি পাওয়া বন্দীদের নাগরিকত্বের অধিকারকে লঙ্ঘন করছে। এটি বন্দী বিনিময় চুক্তির ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতির প্রমাণ।
দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের পাবলিক পলিসির সহযোগী অধ্যাপক তামার কারমুত আল–জাজিরাকে বলেন, ‘ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ যে অবৈধ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’
কারমুত বলেন, ‘এটি অবৈধ, কারণ তাঁরা ফিলিস্তিনের নাগরিক। তাঁদের অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব নেই। তাঁদের একটি ছোট কারাগার থেকে বের করে একটি বড় কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। তাঁদের নিজেদের সমাজ থেকে দূরে, নতুন এমন সব দেশে পাঠানো হচ্ছে, যেখানে তাঁদের কঠোর বিধিনিষেধের মুখে পড়তে হবে। এটি অমানবিক।’
পরিবারগুলো হতবাকঅধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় আল–জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সময় ফিলিস্তিনি বন্দী মুহাম্মদ ইমরানের আত্মীয়রা বলেছেন, তিনি নির্বাসিত ব্যক্তিদের তালিকায় আছেন জেনে তাঁরা হতবাক হয়েছেন।
রায়েদ ইমরান জানান, এর আগে ইসরায়েলি এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাঁদের ফোন করে নিশ্চিত করেছিলেন, তাঁর ৪৩ বছর বয়সী ভাই মোহাম্মদ ইমরানকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং মুক্তির পর তিনি কোথায় থাকবেন, তা জানতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু আজ সোমবার পরিবারটি হতাশার খবর জানতে পারে। তাদের জানানো হয়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার এবং ১৩টি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মুহাম্মদকে নির্বাসিত করা হবে।
রায়েদ ইমরান বলেন, ‘আজকের খবরটি বড় এক ধাক্কা ছিল। তবে আমরা এখনো অপেক্ষা করছি। হয়তো কোনোভাবে আমরা তাঁকে দেখতে পাব। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি মুক্তি পাচ্ছেন, দেশে হোক বা বিদেশে।’
এই নির্বাসনের অর্থ হলো সীমান্তের ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণের কারণে ইমরানের পরিবার হয়তো বিদেশে গিয়ে কখনো তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারবে না।
অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছেন আল–জাজিরার নিদা ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন অনেক পরিবার দেখতে পাচ্ছি, যারা তাদের প্রিয়জনদের ফিলিস্তিন থেকে নির্বাসিত হতে দেখতে পারে। বন্দিত্ব থেকে মুক্ত স্বজনের সঙ্গে দেখা করার কোনো উপায় থাকবে না।’
কারমুতের মতে, এই নির্বাসনের উদ্দেশ্য হলো হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীকে এই বন্দী বিনিময় থেকে কোনো ধরনের প্রতীকী বিজয় দাবি করা থেকে বঞ্চিত করা। আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাসিত বন্দীদের যেকোনো রাজনৈতিক বা অন্যান্য কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখা।
কারমুত বলেন, ‘নির্বাসনের অর্থ ওই সব বন্দীর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ইতি ঘটা। তাঁরা যেসব দেশে যাবেন, সেখানে তাঁদের কঠোর সীমিত চলাচলের মধ্যে থাকতে হবে। তাই তাঁরা কোনো ক্ষেত্রেই সক্রিয় হতে পারবেন না।’
এই বিশ্লেষক আরও বলেন, এই নির্বাসন মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং তাঁদের পরিবারের জন্যও একটা শাস্তি। কারণ, পরিবারগুলো হয় তাদের নির্বাসিত প্রিয়জনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে অথবা ইসরায়েল অনুমতি দিলে তাদের সঙ্গে দেখা করতে নিজেদের মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হতে হবে।
সহযোগী অধ্যাপক তামার কারমুত বলেন, ‘এটা ইসরায়েলের জন্য দুদিকেই লাভ’। মুক্তিপ্রাপ্ত ইসরায়েলি বন্দীদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করুন। তাঁরা আবার ইসরায়েলে স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে পারবেন।
তামার কারমুত আরও বলেন, এটা দ্বিমুখী নীতি এবং ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ব স ত কর বন দ দ র র পর ব র ন র ব সন দ ইমর ন র জন য বন দ ক ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
হজের অব্যয়িত প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ফেরত পেল ৯৯০ এজেন্সি: ধর্ম উপদেষ্টা
হজের নিবন্ধনের সময় বাড়াতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ জানানোর কথা জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, “হজের অব্যয়িত ৩৭ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা ফেরত পেল ৯৯০টি হজ এজেন্সি। ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ‘মাসার নুসুক’ প্লাটফর্মের আইবিএএন হিসাবে অব্যয়িত পড়ে থাকা এই টাকা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় ফেরত পাচ্ছে তারা।”
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সচিবালয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
আরো পড়ুন:
কোটির ঘরে ১০০ নাটক!
৫ অক্টোবরের মধ্যে লিড এজেন্সি নির্ধারণে ধর্ম মন্ত্রণালয় চিঠি
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “সরকারি-বেসরকারি উভয় মাধ্যমে হজযাত্রীদের হজ পালনের নিমিত্ত সৌদি প্রান্তের খরচ নির্বাহের জন্য সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ‘মাসার নুসুক’ প্লাটফর্মের আইবিএএন হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে অর্থ প্রেরণ করা হয়ে থাকে। গত ৮ বছরে এ হিসাবে বাংলাদেশি হজ এজেন্সিসমূহ যে টাকা পাঠিয়েছিল, তার কিছু টাকা অব্যয়িত ছিল।”
তিনি বলেন, “এই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য হজ এজেন্সির দিক থেকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়। এ টাকা ফেরত আনার জন্য সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ে কয়েকবার পত্র প্রেরণ করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা করে এ মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ হজ অফিসের মাসার নুসুক প্লাটফর্মের আইবিএএনে অব্যয়িত টাকা ফেরত দিয়েছে।”
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অব্যাহত ও বহুমাত্রিক যোগাযোগের কারণেই এই অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, “সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের আইবিএএন হিসাবে মোট ৯৯০টি বাংলাদেশি হজ এজেন্সির অব্যয়িত অর্থ জমা ছিল। সবকটি এজেন্সির টাকাই ফেরত পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ফেরত দেয়া এই অর্থ বাংলাদেশ হজ অফিসের ‘মাসার নুসুক’ প্লাটফর্মের আইবিএএনে থেকে এ অফিসের হজ সংক্রান্ত সৌদি ফ্রান্সি ব্যাংকে পরিচালিত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে।”
ড. খালিদ বলেন, “হজ এজেন্সির অব্যয়িত টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আমাদের দাপ্তরিক সব প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এই অব্যয়িত অর্থ ফেরত আনা এবং তা সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিসমূহকে ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় উদ্যোগ ও সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।”
হজের নিবন্ধনের সময় বাড়বে কি না- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় ১২ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত ছিল। এ সময় পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৮৫৯ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এরপর নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে।”
তিনি বলেন, “মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সৌদি সরকারের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে। এই বৈঠকে হয়ত তারা আমাদের কাছে জানতে চাইবেন কতজন নিবন্ধিত হয়েছেন, কতজনের ভাউচার হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা আশাবাদী, সময় একটু বাড়তে পারে, যদি তারা অনুমোদন করে। আমরা তাদের সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করব।”
“সময় বাড়বে কি না সেটি সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা বুঝতে পারবো। আমরা হজ এজেন্সিগুলোকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি, আজ বিকেল ৫টার মধ্যে জানাতে হবে- অপেক্ষমাণ হজযাত্রী আর কতজন আছেন, যারা নিবন্ধনের জন্য সিস্টেমে ইনপুট দিতে পারেননি। এ তথ্য আমরা আজ বিকেলের মধ্যে পেলে আগামীকালের মিটিংয়ে বলবো যে এতজন হজযাত্রী নিবন্ধনের অপেক্ষায়,” যোগ করেন উপদেষ্টা।
এবার হজে যেতে সরকারি ও বেসরকারি কোটা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “যতজন হবে ততজনই সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে পারবেন। এটা নিবন্ধনের ওপর নির্ভর করবে।”
সংবাদ বিবৃতিতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মু. আব্দুল আউয়াল হাওলাদার, হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আয়াতুল ইসলাম, প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ইমতিয়াজ হোসেন, যুগ্ম-সচিব (হজ) ড. মো. মঞ্জুরুল হক, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী