রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন
Published: 22nd, October 2025 GMT
রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সালমান ফারসী বুলু নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থী। তার এমন সাফল্যে আনন্দিত পরিবারসহ স্থানীয়রা। অভাব-অনটনের কারণে অদম্য এই মেধাবী শিক্ষার্থীর রঙ যাতে হারিয়ে না যায় সেই চিন্তায় আছেন তারা।
ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধণিরাম গ্রামের দিনমজুর আবেদ আলী ও দুলালী দম্পতির সন্তান সালমান। এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি।
আরো পড়ুন:
উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ
কুষ্টিয়ার সাইফুল মাশরুম চাষে সফল, দিয়েছেন ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ
আট শতক জমিতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন সালমান। দিনমজুরের কাজে চলে সংসার। স্থানীঢ শাহবাজার এ.
সালমান বলেন, “নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বুঝতে পারি দাখিল পরীক্ষায় ফরম ফিলাপের টাকা জোগার করতে না পারলে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের এখানে অনেক মেধাবী ছেলেকে দেখেছি, অর্থ সংকটের কারণে পড়ালেখা ছেড়ে কায়িক শ্রম দিচ্ছেন। তারা পড়ালেখায় ফিরে আসতে পারেননি। এজন্য নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিক্ষকদের না জানিয়ে প্রায় এক বছরের জন্য জেলার বাইরে কাজ করতে যাই।”
তিনি বলেন, “ঢাকা ও কুমিল্লার বিভিন্ন বাড়িতে এবং ভবনে রাজমিস্ত্রির সহযোগী (জোগালী) হিসেবে কাজ করেছি। টাকা জমিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। পরে সেই টাকায় দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরর্ণ করে পরীক্ষা দেই। দাখিলে জিপিএ-৫ পাই। এরপর আবারো পড়ালেখা খরচ জোগাতে বিভিন্ন সময় এলাকায় এবং ঢাকায় রাজমিস্ত্রির সহযোগীর কাজ করেছি। এক বছর আগে টাকা জমিয়ে বাড়িতে ফেরার পর পড়ালেখায় মনোযোগ দেই। এ কারণে কাজের জন্য আর ঢাকায় যাওয়া হয়নি।”
“শিক্ষকরা আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। তারা সহযোগিতা না করলে এত দূর আসতে পারতাম না। দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পর এবার আলিমেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি”, যোগ করেন তিনি।
ফয়সাল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং-এ ভর্তি হয়েছি। ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে পরে মেডিকেলেও পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমার দরিদ্র পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।”
সালমানের মা দুলালী বেগম বলেন, “সবাই বলতেছিল, ছেলে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। এখন আরো পড়াতে হবে। মাদরাসার শিক্ষকরা সবাই বাড়িতে এসেছিল। আমাদের কোনো টাকা নাই। তাকে কোচিং এ ভর্তির জন্য একটা খড়ের গাদা ছিল সেটা ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি।”
সালমানের ভাই দুলু মিয়া বলেন, “পরিবারে অর্থকষ্টের কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমি পড়ালেখা করতে পেরেছি। সালমান খুব মেধাবী। আমার ছোট ভাই নিজের চেষ্টায় রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমার ছোট ভাই যাতে পড়ালেখা করতে পারে, সে জন্য যতটুকু পারছি সহযোগিতা করছি। সামর্থবানরা এগিয়ে আসলে আমার ছোট ভাইটি দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে।”
সালমানের বাবা আবেদ আলী বলেন, “আমার বয়স হয়েছে, এখন আগের মতো কাজ করতে পারি না। অনেক কষ্টে সংসার চলছে। আগে যা ছিল সব শেষ। এখন সবাই সহযোগিতা করলে ছেলেটা পড়তে পারবে।”
ফুলবাড়ী উপজেলার শাহবাজার এ.এইচ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম মিয়া বলেন, “গত বছর আমাদের মাদরাসা থেকে সালমান দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। এবার আলিম পরীক্ষায় আবারো জিপিএ-৫ পেয়ে চমকে দিয়েছে তিনি। তার রেজাল্টে আমরা খুশি। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া মেধাবী এই ছেলেটির স্বপ্ন পুরর্ণে বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।”
ঢাকা/বাদশাহ/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সফলত এইচএসস ফল পর ক ষ য় জ প এ ৫ প দ খ ল পর ক ষ সহয গ ত ম দর স ক জ কর র জন য পর ব র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্নীতি আছে, দখল–চাঁদাবাজিও চলছে
দুর্নীতি আগের চেয়ে বেড়েছে নাকি কমেছে, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘দুর্নীতি আগের চেয়ে বেড়েছে নাকি কমেছে, সে বিষয়ে তুলনামূলক তথ্য নেই। এটি নিয়ে টিআইবি কাজ করছে। কিন্তু এটা বলতে পারি, দুর্নীতি অব্যাহত আছে। রাজনৈতিক ও সরকারি স্পেসের ক্ষমতাকে অপব্যহার করে বিভিন্ন মহল দলবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে। সরকারের অভ্যন্তরেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। এটা উদ্বেগজনক।’
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সাবেক দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেছেন, ‘এই সরকারের সময়ে আরও কঠোরভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সে ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’ টিআইবি বর্তমান সরকারের পুরো মেয়াদের ওপর একটি বিশ্লেষণ তৈরির কাজ করছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। ‘সুশাসিত, বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের অঙ্গীকার: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহার প্রণয়নে টিআইবির সুপারিশ’ শিরোনামে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এমন অবস্থায় আছি যে ৫৪ বছর, বিশেষ করে গত ১৫ বছরের যে জঞ্জাল, সেটা কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশে সুশাসিত, গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজটা চট করে জাদুর কাঠি দিয়ে সম্ভব নয়। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়, এটা মানতে হবে। তবে এই সুযোগটা তৈরি হয়েছে। সেই সুযোগ রাজনৈতিক দলগুলো কতটা নেবে, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ; একইভাবে তাদের কার্যপদ্ধতির মধ্যে অর্থ, পেশি ও ধর্মের প্রভাবটা নির্বাচনের আগে ও পরে কতটুকু তাদের প্রভাবিত করবে, সেটার ওপর ফলাফল অনেকটা নির্ভর করবে।’
ব্যবসা খাতের সংস্কার নিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা অনেকটা রাজনৈতিক দলের সংস্কারের মতো। এটা ভেতর থেকে আসতে হবে, তাদের নিজেদেরই করতে হবে। ব্যবসায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে চূড়ান্ত বিবেচনায় ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন। এটা না করা গেলে একশ্রেণির ব্যবসায়ী লাভবান হন, অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, যেটা গত ১৫ বছরে দেখা গেছে। এর ফলে রাষ্ট্রকাঠামো দখল হয়েছে। কর্তৃত্ববাদ বিকাশের অন্যতম পিলার (স্তম্ভ) হিসেবে ব্যবসা খাতের একাংশ কাজ করেছে। সেই অবস্থার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটাই তারা চাইছেন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান শীতল সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। এর জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ভারতের ইতিহাসে এটা (বর্তমান পরিস্থিতি) সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয়—এটা স্বীকার করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে এখন পর্যন্ত। ভারত এমন দেশ নয়, যারা সহজে এটা স্বীকার করবে। সেটা একটা বাস্তবতা। কিন্তু সেটার অর্থ এই নয় যে এটার কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে না। উন্নতি ঘটার সুযোগ আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই পক্ষের উচ্চ অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্র আছে। সেটা উভয় পক্ষের ওপর নির্ভর করে। তবে ভারত যদি আরও বেশি বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান নিতে পারত, কর্তৃত্ববাদের পক্ষে অবস্থান থেকে যদি সরে আসতে পারত, তাহলে সেটি বাংলাদেশের পক্ষে সহজতর হতো।’
আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে রাখা উচিত এমন ৫২টি প্রস্তাব সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে টিআইবি। এর মধ্যে প্রথম সাতটি প্রস্তাব পড়ে শোনান ইফতেখারুজ্জামান। এগুলোর মধ্যে আছে জুলাই জাতীয় সনদ ও এর বাইরে থাকা সংস্কার কমিশনগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা; জুলাই সনদসহ অন্যান্য সংস্কার কমিশনের ওপর ভিত্তি করে যেসব অধ্যাদেশ জারি ও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো ও কার্যকর ও অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলের সব হত্যা, অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার অব্যাহত রাখা।
বাকি প্রস্তাবগুলো পড়ে শোনান টিআইবির জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা মো. জুলকারনাইন এবং গবেষণা ও নীতি পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান। এসব প্রস্তাবে অনিয়ম–দুর্নীতি প্রতিরোধ, দলের কার্যক্রমে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচারের চর্চা, সম–অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যাংক–আর্থিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ও পরিবেশ–জলবায়ু খাতে সংস্কার, বেসরকারি খাতে সুশাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের এবং আউটরিচ ও কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।