রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সালমান ফারসী বুলু নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থী। তার এমন সাফল্যে আনন্দিত পরিবারসহ স্থানীয়রা। অভাব-অনটনের কারণে অদম্য এই মেধাবী শিক্ষার্থীর রঙ যাতে হারিয়ে না যায় সেই চিন্তায় আছেন তারা। 

ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধণিরাম গ্রামের দিনমজুর আবেদ আলী ও দুলালী দম্পতির সন্তান সালমান। এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি।

আরো পড়ুন:

উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ

কুষ্টিয়ার সাইফুল মাশরুম চাষে সফল, দিয়েছেন ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ 

আট শতক জমিতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন সালমান। দিনমজুরের কাজে চলে সংসার। স্থানীঢ শাহবাজার এ.

এইচ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদারসা থেকে আলিম পরিক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন সালমান।

সালমান বলেন, “নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বুঝতে পারি দাখিল পরীক্ষায় ফরম ফিলাপের টাকা জোগার করতে না পারলে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের এখানে অনেক মেধাবী ছেলেকে দেখেছি, অর্থ সংকটের কারণে পড়ালেখা ছেড়ে কায়িক শ্রম দিচ্ছেন। তারা পড়ালেখায় ফিরে আসতে পারেননি। এজন্য নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিক্ষকদের না জানিয়ে প্রায় এক বছরের জন্য জেলার বাইরে কাজ করতে যাই।” 

তিনি বলেন, “ঢাকা ও কুমিল্লার বিভিন্ন বাড়িতে এবং ভবনে রাজমিস্ত্রির সহযোগী (জোগালী) হিসেবে কাজ করেছি। টাকা জমিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। পরে সেই টাকায় দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরর্ণ করে পরীক্ষা দেই। দাখিলে জিপিএ-৫ পাই। এরপর আবারো পড়ালেখা খরচ জোগাতে বিভিন্ন সময় এলাকায় এবং ঢাকায় রাজমিস্ত্রির সহযোগীর কাজ করেছি। এক বছর আগে টাকা জমিয়ে বাড়িতে ফেরার পর পড়ালেখায় মনোযোগ দেই। এ কারণে কাজের জন্য আর ঢাকায় যাওয়া হয়নি।” 

“শিক্ষকরা আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। তারা সহযোগিতা না করলে এত দূর আসতে পারতাম না। দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পর এবার আলিমেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি”, যোগ করেন তিনি। 

ফয়সাল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং-এ ভর্তি হয়েছি। ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে পরে মেডিকেলেও পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমার দরিদ্র পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।”

সালমানের মা দুলালী বেগম বলেন, “সবাই বলতেছিল, ছেলে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। এখন আরো পড়াতে হবে। মাদরাসার শিক্ষকরা সবাই বাড়িতে এসেছিল। আমাদের কোনো টাকা নাই। তাকে কোচিং এ ভর্তির জন্য একটা খড়ের গাদা ছিল সেটা ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি।” 

সালমানের ভাই দুলু মিয়া বলেন, “পরিবারে অর্থকষ্টের কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমি পড়ালেখা করতে পেরেছি। সালমান খুব মেধাবী। আমার ছোট ভাই নিজের চেষ্টায় রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমার ছোট ভাই যাতে পড়ালেখা করতে পারে, সে জন্য যতটুকু পারছি সহযোগিতা করছি। সামর্থবানরা এগিয়ে আসলে আমার ছোট ভাইটি দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে।”

সালমানের বাবা আবেদ আলী বলেন, “আমার বয়স হয়েছে, এখন আগের মতো কাজ করতে পারি না। অনেক কষ্টে সংসার চলছে। আগে যা ছিল সব শেষ। এখন সবাই সহযোগিতা করলে ছেলেটা পড়তে পারবে।”

ফুলবাড়ী উপজেলার শাহবাজার এ.এইচ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম মিয়া বলেন, “গত বছর আমাদের মাদরাসা থেকে সালমান দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। এবার আলিম পরীক্ষায় আবারো জিপিএ-৫ পেয়ে চমকে দিয়েছে তিনি। তার রেজাল্টে আমরা খুশি। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া মেধাবী এই ছেলেটির স্বপ্ন পুরর্ণে বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।” 

ঢাকা/বাদশাহ/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সফলত এইচএসস ফল পর ক ষ য় জ প এ ৫ প দ খ ল পর ক ষ সহয গ ত ম দর স ক জ কর র জন য পর ব র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ জসিমের মেয়ে লামিয়া ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মো. জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়া ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। এ মামলার তিন আসামির মধ্যে দুইজনকে ১৩ বছর এবং অন্য জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।

আরো পড়ুন: জুলাই বিপ্লবে শহীদ জসিমের মেয়েকে ‌সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, আটক ১

আরো পড়ুন:

খুলনায় প্রতারণা মামলায় কাজী গ্রেপ্তার 

মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে মা, ধর্ষণচেষ্টার মামলা করতে গিয়ে বাবা-ভাই কারাগারে

বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শিরিন রায় ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান। 

সাজাপ্রাপ্তরা ঘটনার সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকায় শিশু আদালত আইনের আওতায় তাদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সিকে ১৩ বছর এবং ইমরানকে ১০ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নে বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে শহীদ জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়া সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। পরে তিনি নিজেই বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরবর্তীতে ধর্ষণের ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে লামিয়া ২৬ এপ্রিল ঢাকার শেখেরটেক এলাকায় ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে আজ বুধবার মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারক। 

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “আজ বিজ্ঞ আদালয় রায় দিয়েছেন। এ মামলায় ১৬ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ দিয়েছেন। আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করায় আমার সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।” 

পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন বলেন, “অপরাধী যত প্রভাবশালী হোক না কেন, তাকে শাস্তি পেতেই হবে। এ মামলাটি তার একটি বার্তা “

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ