ময়মনসিংহের কাছারিঘাটের ‘হিমু আড্ডা’ রেস্তোরাঁর উত্তর পাশে ‘বাংলাদেশ নার্সারি’র বিক্রয়কেন্দ্র। গত ১ আগস্ট সকালে ব্রহ্মপুত্রতীরের জয়নুল উদ্যান থেকে হেঁটে ফেরার পথে এই নার্সারিতে গেলাম। সেখানেই পেলাম হলুদ স্থলপদ্মের দেখা। এরপর ৬ অক্টোবর ময়মনসিংহের সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (পুরুষ) ক্যাম্পাসে দেখা পাই লতাকস্তুরি ফুলের। দুটি উদ্ভিদই Malvaceae গোত্রের।

সৌন্দর্যে অনন্য হলুদ স্থলপদ্ম

লতাকস্তুরির মতো দেখতে হলুদ রঙের একটা ফুলের দিকে চোখ আটকে গেল। ভালো করে দেখে বুঝতে পারলাম এটি হলুদ স্থলপদ্ম। আসলে দুটি উদ্ভিদ একই পরিবার ও একই গণ হিবিসকাস-এর অন্তর্ভুক্ত বলে এই মিল। হলুদ স্থলপদ্মের বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus glanduliferus, এটি Malvaceae পরিবারের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। অনেকে এই ফুলকে সমুদ্র জবা বলে ভুল করেন। ইংরেজিতে হলুদ স্থলপদ্ম ‘ইয়েলো রোজ ম্যালো’ নামে পরিচিত। আর সমুদ্রজবা পরিচিত ‘সি হিবিসকাস’ নামে।

হলুদ স্থলপদ্ম ফুলের রং হলুদ, তাতে ডোরাকাটা থাকে এবং কেন্দ্রে থাকে গাঢ় বেগুনি রং। এই গুল্ম যা এক থেকে দেড় মিটার উঁচু হয়। পাতা ডিম্বাকার, হৃদয় আকৃতির, ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়। পাতার ডগা সূক্ষ্ম এবং প্রান্ত দাঁতের মতো কিন্তু অগভীর খাঁজকাটা। এই উদ্ভিদ বাগান এবং উদ্যানে সুন্দর মানায়। বাসার বারান্দায় টবেও লাগানো যায়। উদ্ভিদটির আদি নিবাস কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।

উদ্ভিদের পাতার নিচের পৃষ্ঠ লোমশ। পাতার গোড়ায় একটি ডিম্বাকার গ্রন্থি থাকে, তাই এই প্রজাতির নামকরণ হয়েছে গ্ল্যান্ডুলিফেরাস। ফুল উজ্জ্বল হলুদ। জন্মায় শাখার আগায়। ৬ থেকে ১২ সেন্টিমিটার লম্বা। ব্র্যাক্টগুলো ডিম্বাকার। পূর্ণ প্রস্ফুটিত ফুল প্রায় ১০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত হয়। ফুলে বৃত্যংশ ৫টি, পাপড়িও ৫টি। এর পুংকেশর অসংখ্য। ফল মাকু আকৃতির, ২ সেন্টিমিটার চওড়া, ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ফল পরিপক্ব হলে অনুদৈর্ঘ্যভাবে ফেটে যায়। বীজ ছোট, কিডনি আকৃতির।

দৃষ্টিনন্দন লতাকস্তুরি ফুল

৬ অক্টোবর সকালে হাঁটতে গিয়ে ময়মনসিংহের সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (পুরুষ) ক্যাম্পাসে লতাকস্তুরি উদ্ভিদে হলুদ ফুলের দেখা পেলাম। নীল আকাশের প্রচ্ছদপটে হলুদ রঙের ফুল দেখতে খুব ভালো লাগল। ছবি তুললাম ঝটপট। এই উদ্ভিদের অন্যান্য বাংলা নাম হচ্ছে মুসকদানা, মুস্কদানা, কালা কস্তুরি ইত্যাদি। বেশ কয়েক বছর আগে সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়ে নীলকমল অভয়ারণ্যেও লতাকস্তুরি দেখেছি।

লতাকস্তুরি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। আকারে খুব বড় হয় না। বৈজ্ঞানিক নাম Abelmoschus moschatus, এটিও Malvaceae পরিবারের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর উচ্চতা তিন ফুটের মতো হয়। ডাঁটা শক্ত এবং শক্ত সরু লোমে ঢাকা। বোঁটা পাতা থেকে লম্বা হয়। পাতা দেখতে হৃৎপিণ্ডের মতো, মোট তিন থেকে পাঁচটি অংশে বিভক্ত। পাতার আগার দিকটা সরু, কিনারা করাতের দাঁতের মতো খাঁজকাটা। পাতার উভয় দিক লোমে ঢাকা।

ময়মনসিংহের টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (পুরুষ) ক্যাম্পাসে লতাকস্তুরি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উদ ভ দ

এছাড়াও পড়ুন:

সিটি করপোরেশনের নামমাত্র সেবা কত দিন

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের যাত্রা শুরু হয়েছে সাত বছর আগে, কিন্তু আজও নগরীর নাগরিকেরা, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের প্রায় দেড় লাখ মানুষ সুপেয় পানির মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলেও ওয়াসার মতো পানি সরবরাহের কোনো প্রতিষ্ঠানই গড়ে ওঠেনি। নগরবাসীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও পুরোনো পৌরসভার সেবাই চালু আছে। আর কত বছর পার হলে সিটি করপোরেশনের প্রকৃত সেবা পাবেন নগরবাসী? 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ময়মনসিংহ শহরে ১৩৬ বছর আগে মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী যান্ত্রিক উপায়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি শোধন করে সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই শহরে আজ মানুষ টাকায় কিনে পাচ্ছেন দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানি। প্রতি মাসে সিটি করপোরেশনকে টাকা দেওয়ার পরও লাইনে যে পানি আসে, তা ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত এবং তাতে পোকা ও শামুক পর্যন্ত পাওয়া যায়। এই পচা পানি ব্যবহার করে অনেকের শরীরে চুলকানির মতো নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

সিটি করপোরেশন হওয়ার পর নগরের পরিসর বেড়েছে, নগরবাসীর সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু পানির সংযোগ পৌরসভা আমলের। ফলে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয়ে পানি সরবরাহ করতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে। চাহিদা, ঘাটতি ও সামর্থ্যহীনতার কারণে শহরটিতে পানি সরবরাহ নিয়ে চরম অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে, কোনো সন্দেহ নেই। আবার আয়ের তুলনায় ব্যয়ের যে হিসাব দেখা যাচ্ছে, তাতে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, সেটিও অনুসন্ধানের বিষয়।

ময়মনসিংহে পানির সরকারি সংযোগ আছে মাত্র সাত হাজার পরিবারের। অন্যদিকে প্রায় দেড় লাখ নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা মেটাতে সিটি করপোরেশন অনুমোদনের মাধ্যমে বা গোপনে সাড়ে ২২ হাজারের বেশি সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনকে উৎসাহ জুগিয়েছে। এই অনিয়ন্ত্রিত পাম্প স্থাপন ও ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদেরা।

সিটি করপোরেশনের বক্তব্য, সিটি করপোরেশন হওয়ার পর জনসংখ্যা বাড়লেও পানি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়েনি এবং রাজস্ব আয় সামান্য হওয়ায় সরকার থেকে বিশেষ প্রকল্প না পেলে বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষমতা নেই।

 জানা যাচ্ছে, সিটি করপোরেশন হলেও এর নিজস্ব জনবল কাঠামোই এখনো ঠিক হয়নি। পৌরসভার জনবল দিয়েই চলছে সিটি করপোরেশন। প্রশ্ন হচ্ছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন কত দিন ‘নামকাওয়াস্তে’ সিটি করপোরেশন হয়ে থাকবে। নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আমরা জোরালো আহ্বান জানাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে আরেক ট্রাকের ধাক্কা, চালক ও তাঁর সহকারী নিহত
  • ট্রাকের পেছনে অপর ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ২
  • সিটি করপোরেশনের নামমাত্র সেবা কত দিন
  • ইঞ্জিনসংকটে ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথে ট্রেন বন্ধ, চালুর দাবিতে আলটিমেটাম