ঘাড়ব্যথা যখন হাতে ছড়ায়, তখন কী করবেন
Published: 13th, November 2025 GMT
কেন হয়, উপসর্গ কী
এটা হওয়ার একটা কারণ ডিস্ক প্রোলাপ্স বা হার্নিয়েশন। অর্থাৎ হাড়ের মাঝখানের ডিস্ক ফুলে গিয়ে বা ছিঁড়ে স্নায়ুতে চাপ দেয়।
দ্বিতীয়ত, হাড়ের স্পার বা অস্টিওফাইট। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ধারালো গজানো অংশ স্নায়ু চেপে ধরে।
তৃতীয়ত, আঘাতজনিত পরিবর্তন। দুর্ঘটনা বা ট্রমায় স্নায়ুতে চাপ পড়তে পারে। চতুর্থত, খারাপ ভঙ্গি। দীর্ঘ সময় নিচু হয়ে মুঠোফোন দেখা বা একটানা ডেস্কে বসা।
এ ব্যথার অন্যতম উপসর্গ ঘাড় থেকে কাঁধ হয়ে হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়িয়ে যাওয়া। ঝিনঝিনে অনুভূতি, অবশ ভাব হয়। হাত বা বাহু দুর্বল হয়ে যায়। ঘাড় নড়াচড়া করলে ব্যথা বেড়ে যায়। কখনো হাতের গ্রিপ দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুনকোমর মোচড়ানো কি নিরাপদ, বিজ্ঞান কী বলে৬ ঘণ্টা আগেচিকিৎসাসম্পূর্ণ বিশ্রামের দরকার নেই। তবে অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ভারী কাজ এড়িয়ে চলতে হবে।
গরম বা ঠান্ডা সেঁক নেওয়া যায়।
ব্যথা তীব্র হলে অস্থায়ীভাবে সারভাইক্যাল কলার ব্যবহার করা যেতে পারে।
টেনস (ট্রান্স কিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেশন) ব্যথা কমায়।
আইএফটি (ইন্টারফেরেনশিয়াল থেরাপি) স্নায়ুর ব্যথা উপশমে কার্যকর।
থেরাপিউটিক আলট্রাসাউন্ড প্রদাহ ও পেশির সংকোচন কমাতে সহায়ক।
চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক, মাংসপেশি শিথিলকারী ওষুধ খেতে পারেন।
ব্যথা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে ঘাড়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া ফিরিয়ে আনতে মোশন এক্সারসাইজ করা যেতে পারে।
মাংসপেশি শক্তিশালী করতে আইসোমেট্রিক নেক এক্সারসাইজ করা যায়।
আরও পড়ুনঘাড় ফোটালে কি স্ট্রোক হতে পারে২১ অক্টোবর ২০২৪করণীয়মুঠোফোন বা ট্যাব ব্যবহারের সময় মাথা নিচু না করে চোখের সমান উচ্চতায় ধরুন।
কম্পিউটারের মনিটর চোখের সমান্তরালে রাখুন, চেয়ারের উচ্চতা ঠিক করুন।
উঁচু বালিশে শুবেন না।
মাঝারি উচ্চতার শক্ত বালিশ ব্যবহার করুন।
মাথায় ভারী জিনিস বহন করবেন না।
এক হাতে ভারী জিনিস না নিয়ে দুই হাতে ভাগ করে তুলুন।
আধা ঘণ্টা পরপর কাজের বিরতি নিয়ে একটু দাঁড়িয়ে হাঁটুন।
গাড়ি চালানোর সময় লম্বা সফরে ঘাড়ের জন্য ছোট কুশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডা.
সাকিব আল নাহিয়ান, সহকারী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে ফুসফুস ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব
ফুসফুস ক্যানসার—শুনলেই ভয় লাগে। অথচ অনেক সময় এটি নীরবে শরীরের ভেতর বেড়ে ওঠে কোনো বড় উপসর্গ ছাড়াই। যখন রোগ ধরা পড়ে, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে ফুসফুস ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
এসকেএফ অনকোলোজির আয়োজনে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় কথাগুলো বলেন ডা. তুষার দাস।
নভেম্বর মাস ‘ফুসফুস ক্যানসার সচেতনতার মাস’। ফুসফুস ক্যানসারবিষয়ক সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনার এ পর্বে অতিথি ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. তুষার দাস। উপস্থাপনায় ছিলেন নাসিহা তাহসিন।
এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘ফুসফুস ক্যানসার বার্তা’। বাংলাদেশে ফুসফুস ক্যানসার রোগের কারণ, ঝুঁকি, লক্ষণ, চিকিৎসা, সচেতনতা এবং প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. তুষার দাস। পর্বটি শনিবার (৮ নভেম্বর) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলোজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
ফুসফুস ক্যানসারের ধরন
ফুসফুস ক্যানসার মূলত দুই ধরনের বলে উল্লেখ করেন ডা. তুষার। এই দুই ধরন হলো—প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। তিনি বলেন, প্রাইমারি ক্যানসার ফুসফুসের নিজস্ব কোষ থেকে উৎপন্ন হয় আর সেকেন্ডারি ক্যানসার শরীরের অন্য অংশ থেকে ছড়িয়ে ফুসফুসে আসে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি আবার দুভাগে ভাগ করা হয়—নন-স্মল সেল লাং ক্যানসার এবং স্মল সেল লাং ক্যানসার। প্রথম ধরনের রোগী বেশি দেখা যায়।
ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ কী
ধূমপান না করলেও কি ফুসফুস ক্যানসার হতে পারে? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. তুষার দাস বলেন, অনেকের ধারণা, কেবল ধূমপায়ী হলেই ফুসফুস ক্যানসার হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ধূমপান অবশ্যই প্রধান কারণ, তবে বায়ুদূষণ, পরোক্ষ ধূমপান এবং জিনগত বিষয়ও বড় ভূমিকা রাখে। পরোক্ষ ধূমপান মানে হচ্ছে অন্যের ধোঁয়া নিজের অজান্তে শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করা।
রান্নাঘরের কয়লা বা লাকড়ির ধোঁয়া থেকে ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বিষয়ে উপস্থাপক জানতে চাইলে ডা. তুষার দাস বলেন, রান্নাঘরের কয়লা বা লাকড়ির ধোঁয়া ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে যে নারীরা প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে এই ধোঁয়ার মধ্যে রান্না করেন, তাঁদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই ধোঁয়ার মধ্যে এমন সব রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা ধীরে ধীরে ফুসফুসের কোষে ক্ষতি করে। শুধু ক্যানসার নয়, এই ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা ফুসফুসের সংক্রমণও হতে পারে।
তুষার দাস বলেন, ফুসফুস ক্যানসারের পেছনে কিছু জিন মিউটেশন ভূমিকা রাখে। তাই যেসব পরিবারের কারও এ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে বয়স ৩০ পেরোলেই নিয়মিত স্ক্রিনিং শুরু করা উচিত। বাংলাদেশে বেশির ভাগ রোগী দেরিতে অর্থাৎ স্টেজ-৩ বা স্টেজ-৪ পর্যায়ে হাসপাতালে আসেন। এর মূল কারণ হলো অসচেতনতা, ভুল চিকিৎসা কিংবা উপসর্গকে সাধারণ ঠান্ডা-কাশি ভেবে অবহেলা করা।
কাশির সঙ্গে রক্ত এলে দ্রুত ডাক্তার দেখান
ডা. তুষার দাস বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার পরামর্শ হলো, যদি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি থাকে, বিশেষ করে কাশির সঙ্গে রক্ত আসে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।’
সাধারণ কাশি আর ফুসফুস ক্যানসারের কাশির মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে ডা. তুষার দাস বলেন, পার্থক্য খুব সূক্ষ্ম, সচেতন থাকলেই তা বোঝা সম্ভব। সাধারণ সর্দি-কাশি ভাইরাস ও অ্যালার্জিজনিত কারণে হয়ে থাকে এবং সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই সেরে যায়।
ডা. তুষার বলেন, যদি কাশি তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, বিশেষ করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ার পরও না কমে, কিংবা কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তাহলে তা আর হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এ সময় একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা যেমন এক্স-রে বা লো-ডোজ সিটি স্ক্যান করানো উচিত। কারণ, ফুসফুস ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে নিরাময়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
বাংলাদেশে ফুসফুস ক্যানসার রোগের কারণ, ঝুঁকি, লক্ষণ, চিকিৎসা, সচেতনতা এবং প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. তুষার দাস