ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ। কিন্তু অনলাইনে দলটির পক্ষে প্রচার থেমে নেই। তার মধ্যে পুরোনো কর্মসূচির ভিডিও নতুন দাবি করে ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিন্ন ধরনের কর্মসূচিকেও আওয়ামী লীগের বলে প্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর নজিরও দেখা যাচ্ছে।

৭ নভেম্বর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায়, রাতের অন্ধকারে অসংখ্য মানুষ মশাল হাতে সমবেত হয়েছেন।

ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘আরেকটি যুদ্ধ হবে, স্বাধীন হবে মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ১৩ তারিখ লকডাউন সফল করতে ঢাকার পথে রওনা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপা।’

ভিডিওটি ঘিরে অনেকেই দাবি করছেন, এটি আওয়ামী লীগের ডাকে আসন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীমুখী মশালমিছিলের দৃশ্য।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ভিডিওটি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের কারও কারও মাথায় ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ লেখা হেডব্যান্ড পরা আছে, যা ভিডিওর শুরু ও শেষ অংশে অস্পষ্টভাবে হলেও দৃশ্যমান।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক সময়ে এমন মশালমিছিলের কোনো কর্মসূচির তথ্য পাওয়া যায়নি। দলটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ বা কোনো মূলধারার গণমাধ্যমেও এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠানের সংবাদ বা ছবি নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৬ অক্টোবর উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা—এই পাঁচ জেলায় একযোগে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটা প্রথম আলোসহ একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই কর্মসূচির ছবি–ভিডিও এসেছিল।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও নদীর ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, ছাত্র ও যুবসমাজের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। তাঁদের মূল স্লোগান ছিল—‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই, তিস্তার ন্যায্য হিস্যা চাই’।

সুতরাং এই মশাল–সমাবেশ আসলে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলনের অংশ, এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার দাবিটি ঠিক নয়।

জামায়াতের মিছিলকেও আওয়ামী লীগের বলে প্রচার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত ৩১ অক্টোবর একটি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটির বর্ণনায় দাবি করা হয়, এটি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ দাবিতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল।

ভিডিওতে দেখা যায়, অসংখ্য মোটরসাইকেল আরোহী দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় শোভাযাত্রা করছেন এবং স্লোগান দিচ্ছেন।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে ইনভিড টুলস ব্যবহার করে ফ্রেম বাই ফ্রেম করে গুগল লেন্সে সার্চ করা হলে স্পষ্ট হয়, এটি উল্লিখিত দাবির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে ঢাকা-১১ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আতিকুর রহমানের সমর্থনে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনী মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

লিংক: এখানে

এ তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে ‘মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা’ কিওয়ার্ডে অনুসন্ধান করে একুশে টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে গত ৩১ অক্টোবর সরাসরি সম্প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির শিরোনাম ছিল ‘ঢাকা-১১ আসনে জামায়াতের মোটরযাত্রা, সরাসরি…’। ওই ভিডিওর ভিজ্যুয়াল ফ্রেম ও ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্যের মধ্যে স্পষ্ট মিল পাওয়া যায় রাস্তাঘাট, পরিবহন, মোটরসাইকেলের অবস্থান ও অংশগ্রহণকারীদের পোশাকে।

লিংক: এখানে

এ ছাড়া অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেও ৩১ অক্টোবর শেয়ার করা হয়েছে একই মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও। ওই পোস্টে উল্লেখ ছিল, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মালিবাগ মোড় হয়ে নতুন বাজার পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

লিংক: এখানে

সব তথ্য বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া যায়, ভিডিওটি অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ দাবির কর্মসূচির নয়; বরং এটি জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারের।  

পুরোনো ভিডিও নতুন দাবি করে প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একদল মানুষ ‘জয় বাংলা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। ভিডিওর বর্ণনায় দাবি করা হয়েছে, এটি আওয়ামী লীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শাহবাগমুখী ঝটিকা মিছিল। কেউ কেউ আবার বলছেন, এটি আগারগাঁওয়ের দৃশ্য।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ভিডিওটি প্রথম ১ নভেম্বর কয়েকটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়, যেখানে লেখা ছিল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শাহবাগ অভিমুখে হাজারো মানুষের জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত ক্যাম্পাস। যমুনা কিন্তু বেশি দূরে নয়!’

লিংক: এখানে

আবার অন্য এক পোস্টে লেখা হয়, ‘ভয়কে করো জয়, মরণপণে কিসের ভয়! আগারগাঁও, পিকচার আভি বাকি।’

তবে ভিডিওটি ফ্রেম বাই ফ্রেম বিশ্লেষণ করে গুগল লেন্সে সার্চ দিলে স্পষ্ট হয়, এটি নতুন নয়। একই ভিডিও গত ২৫ অক্টোবর ফেসবুকে ‘রাজধানীর প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি অলি-গলিতে আজ একটাই নাম শেখ হাসিনা’ শিরোনামে পোস্ট করা হয়েছিল।

লিংক: এখানে, এখানে

তারও আগে ২২ অক্টোবর ইনস্টাগ্রামে ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হয়, ‘ব্রেকিং নিউজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আওয়ামী লীগের বিশাল মিছিল’।

লিংক: এখানে

আরও পেছনে গেলে দেখা যায়, এক মাস আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর একই ভিডিও এক ফেসবুক ব্যবহারকারী পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘লীগের আজকের দৌড়মিছিল, এক জায়গায় বলে “জয়”, আরেক জায়গায় গিয়ে বলে “বাংলা”’।

লিংক: এখানে

আর সবচেয়ে পুরোনো পাওয়া পোস্টটি ৭ সেপ্টেম্বরের, যেখানে ভিডিওটির ক্যাপশন ছিল ‘আজকের বিজয় সরণিতে জয় বাংলার স্লোগানে মুখরিত’।

লিংক: এখানে, এখানে

দাবি করা ভিডিওর বিভিন্ন সময়ের পোস্ট বিশ্লেষণ ও ভিজ্যুয়াল ক্লু মিলিয়ে দেখা যায়, ঘটনাটি আসলে ২০২৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিজয় সরণিতেই ঘটে।

ভিডিওটির জিওলোকেশন ও ফ্রেম বিশ্লেষণে মেট্রোরেল পিলারে লেখা ‘বাংলা ব্লকেড’, পাশে ‘শিকড়’ ও ‘বিকল্প অটো সার্ভিস’ লেখা বাস দেখা যায়। মেট্রোরেলের স্তম্ভগুলোয় দৃশ্যমান জুলাই গণ–অভ্যুত্থানবিষয়ক চিত্রকর্ম ও স্টেশনের নাম ‘বিজয় সরণি’ দৃশ্যমান, যা নিশ্চিত করে ভিডিওটির অবস্থান।

ঘটনাটি যে ৭ সেপ্টেম্বরের, তা মিলে যায় বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনেও। জাতীয় দৈনিকগুলো জানায়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই আওয়ামী লীগের একদল নেতা–কর্মী ৭ সেপ্টেম্বর বিজয় সরণিতে ঝটিকা মিছিল করেন, যেখান থেকে পুলিশ ১৩ জনকে আটক করে।

প্রকাশিত সংবাদের লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোয় বলা হয়, সেদিন বেলা পৌনে দুইটার দিকে বিজয় সরণি মেট্রোস্টেশনের নিচ থেকে একদল যুবক মিছিল শুরু করেন, সংসদ ভবনের রাস্তা ধরে খামারবাড়ি গিয়ে শেষ হয় মিছিলটি।

সুতরাং মিছিলটি আওয়ামী লীগের সমর্থনে হলেও তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আগারগাঁও বা অন্য কোনো স্থানের নয়।

২০২১ সালের ভিডিওকেও সাম্প্রতিক বলে প্রচার

‘রাজপথে নেমে গেছে জয় বাংলার কর্মীরা, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয় শেখ হাসিনা’—এই শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি আরেকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওটির বর্ণনা অনুযায়ী, এটি সাম্প্রতিক সময়ে কার্যক্রম–নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীদের মিছিলের দৃশ্য। ভিডিওতে দেখা যায়, হাতে ব্যানার–প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় মিছিল করছেন একদল মানুষ।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

তবে যাচাই–বাছাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি নতুন নয়; এটি ২০২১ সালের একটি শোভাযাত্রার দৃশ্য।

ভিডিওটি বিশ্লেষণের শুরুতে ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে মিছিলে ব্যবহৃত ব্যানারে স্পষ্ট দেখা যায়—‘আজমেরী ওসমানের আহ্বানে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, নারায়ণগঞ্জ’।

‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ ও ‘আজমেরী ওসমানের আহ্বানে র‌্যালি’ কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে সময় টিভির একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়, যেখানে ২০২১ সালের ২৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জে আয়োজিত শোভাযাত্রার খবরটি ছিল।

লিংক: এখানে

এরপর ইউটিউবে ‘আজমেরী ওসমানের আহ্বানে বর্ণাঢ্য র‌্যালি’ কিওয়ার্ডে সার্চ করা হলে ‘City News BD’ নামকের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ২৬ মার্চের একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যেখানে অন্য কোণ থেকে ধারণ করা একই শোভাযাত্রার দৃশ্য দেখা যায়। ভাইরাল ভিডিওটির ফ্রেমের সঙ্গে ইউটিউব ভিডিওটির মানুষ, রাস্তার অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক মিল রয়েছে।

লিংক: এখানে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘Raashid Chowdhury’ নামের আইডি থেকেও ২০২১ সালের ২৬ মার্চ এই শোভাযাত্রার ছবি পোস্ট করা হয়। পোস্টের ক্যাপশনে উল্লেখ ছিল, ‘এটি মহান স্বাধীনতা দিবস ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে আজমেরী ওসমানের আহ্বানে আয়োজিত একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালির চিত্র’।

লিংক: এখানে

সুতরাং সব তথ্যে এটা স্পষ্ট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি চার বছর আগের।

২০২৪ সালের পুরোনো ভিডিও

‘শেখ হাসিনার ভয় নাই রাজপথ ছাড়ি নাই। চলছে লড়াই চলবে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ১৪/১০/২০২৫’ ক্যাপশনে আওয়ামী লীগের মিছিল দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘মুজিব সেনারা মরতে শিখে গেছে। মরার জন্য প্রস্তুত হও রাজাকাররা’।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ভিডিও যাচাই করে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে আয়োজিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো মিছিলের দৃশ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের একটি বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি গত ১৪ অক্টোবর থেকে নতুন করে প্রচার করা হয়েছে এবং এটিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেদিনের আয়োজিত মিছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর সূত্র ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে ওই তারিখের পোস্টগুলো যাচাই করে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো পোস্ট বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আরও অনুসন্ধানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট ‘চট্টগ্রাম-এ ছাত্র জনতার মিছিল–আমার দেশ আমার মা পাকিস্তান, আফগানিস্তান হবে না’ শিরোনামের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ভিডিওর দৃশ্যাবলির সঙ্গে এখন ছড়ানো ভিডিওটির দৃশ্যাবলির মিল রয়েছে।

‘চট্টগ্রাম-এ ছাত্র জনতার মিছিল-আমার দেশ আমার মা পাকিস্তান, আফগানিস্তান হবে না’—এ বাক্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সার্চ করা হলে ‘Gazi Hafizur Rahman Liku’ নামের আইডি থেকে আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়, যার সঙ্গে এখন ছড়ানো ভিডিওর সাদৃশ্য রয়েছে।

লিংক: এখানে, এখানে

সুতরাং এখনকার মিছিল বলে যে ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে, তা আসলে ২০২৪ সালের ৩ আগস্টে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের মিছিলের।

সম্রাটের পুরোনো ভিডিও এখনকার বলে প্রচার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে, ‘আওয়ামী যুবলীগ তাদের বহিষ্কৃত সব নেতা–কর্মীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে, আর সেই সিদ্ধান্তের পর যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এখন ঢাকা দক্ষিণের রাজপথ দখলে নিয়ে মাঠে নেমেছেন।’

ভিডিওতে দেখা যায়, গুলিস্তান এলাকায় বিপুলসংখ্যক লোকজনকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে সম্রাটকে।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

তবে যাচাই করে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বর্তমান সময়ের নয়। আলোচিত ভিডিওর একাধিক ফ্রেম গুগল লেন্সে সার্চ করে দেখা যায়, ভিডিওটি মূলত ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ‘আন্দোলনের মাঠে যুবলীগ নেতা সম্রাট’ শিরোনামের ভিডিও থেকে নেওয়া। ৩ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য, ব্যানার ও ভিজ্যুয়াল ফ্রেমের পুরোপুরি মিল পাওয়া যায়।

পরবর্তীকালে ‘আন্দোলনের মাঠে সম্রাট’ ও ‘যুবলীগ নেতা সম্রাটের আন্দোলন’—এ দুই কিওয়ার্ডে অনুসন্ধান চালিয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যমেও ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দিন রাজধানীর গুলিস্তানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধে অবস্থান নেন তৎকালীন বহিষ্কৃত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।

সুতরাং এখন প্রচারিত ভিডিওটি আসলে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৭ স প ট ম বর ২০২১ স ল র ২০২৪ স ল র ফ সব ক প জ র ক য পশন ল দ শ আওয য চ ই কর প স ট কর স র চ কর প রক শ ত অবস থ ন র কর ম ভ ড ওর য বল গ উল ল খ অন ষ ঠ আজম র র একট আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

এসএ পোর্টের মুনাফা এক বছরে ৬৩ শতাংশ বেড়েছে

দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কনটেইনার ব্যবস্থাপনা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এসএ পোর্ট বা সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এ কারণে গত ১৫ বছরের মধ্যে শেয়ারধারীদের জন্য সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানি। কনটেইনার ব্যবস্থাপনা সেবাদাতা এই কোম্পানি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য শেয়ারধারী ১৮ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাতে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে একজন শেয়ারধারী পাবেন ১ টাকা ৮০ পয়সা করে লভ্যাংশ।

গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। ওই আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একই সভায় গত অর্থবছরের লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবদেনের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর শেষে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ কোটি ৫১ লাখ টাকায়। তার আগের (২০২৩-২৪) অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ৬৩ শতাংশ বা ২৬ কোটি টাকার বেশি। মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১০ সালের পর এ বছর সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানি। ২০১০ সালে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছিল, যার পুরোটাই ছিল বোনাস। এবার ১৮ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দেবে কোম্পানিটি।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি বছর বছর বাড়তে থাকায় কনটেইনার ব্যবস্থাপনা সেবার ব্যবসাও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ব্যবস্থাপনার ব্যবসা দিন দিন বড় হচ্ছে। বেসরকারি এই খাতে ১৯টি ডিপো থাকলেও সিংহভাগ ব্যবসা করছে ৬টি কনটেইনার ডিপো।

কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বেসরকারি খাতের ১৯টি ডিপো আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ৮ লাখ ৩০ হাজার একক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যে সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার একক কনটেইনার। সেই হিসাবে বেসরকারি এ খাতে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। এ খাতের ব্যবসায় সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের অবস্থান তৃতীয়। সামিট গ্রুপ ও অ্যালায়েন্স হোল্ডিংসের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৯২ হাজার ৬৭০ একক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। এই ডিপোর বাজার হিস্যা ১১ শতাংশ।

এদিকে গত ১ সেপ্টেম্বর কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন রপ্তানি খাতের সাত ধরনের সেবার মাশুল বাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে কনটেইনারে পণ্য বোঝাই করে বন্দর দিয়ে রপ্তানির মাশুল একলাফে ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি খালি কনটেইনারের ভাড়াও বাড়িয়েছে ডিপোগুলো। এসব খাতে সেবার মাশুল বাড়ানোর কারণে ডিপোগুলোর বার্ষিক আয় আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকা বাড়তে পারে বলে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। মূলত মাশুল ও আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে কনটেইনারের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসাও বাড়ছে। তাতে বাড়ছে আয় ও মুনাফা।

এসএ পোর্ট বা সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৮ সালে। বর্তমানে এটি শেয়ারবাজারে ভালো মানের ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি। সর্বশেষ গত অক্টোবর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের ৫৯ শতাংশই ছিল উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। বাকি ৪১ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ব্যক্তি শ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল সাড়ে ৩ শতাংশ শেয়ার। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল প্রায় সাড়ে ৪৭ টাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন সিআইডির
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি অনুষদের ডিনস অ্যাওয়ার্ড, পেলেন ৪৪ শিক্ষার্থী ও ৩০ শিক্ষক
  • ইবিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের তথ্য-অনুসন্ধান নিয়ে সেমিনার
  • এসএ পোর্টের মুনাফা এক বছরে ৬৩ শতাংশ বেড়েছে
  • বিএনপির ৩১ দফা: পাঠ ও বিবেচনা
  • নতুন সংঘাতের পর পাকিস্তান–আফগানিস্তানের মধ্যে আলোচনায় আবারও অচলাবস্থা
  • ডেঙ্গু সংক্রমণের সময় বদলাচ্ছে, বেড়েছে নভেম্বরে, কারণ কী
  • বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান কী
  • ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ঢাবির ৭৪ শিক্ষক-শিক্ষার্থী