পাবনায় রেজিস্ট্রারদের প্রাণনাশের হুমকি-হামলার অভিযোগ: ৬ দলিল লেখক
Published: 25th, November 2025 GMT
পাবনা জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রারদের কার্যালয়ে হামলা, প্রাণনাশের হুমকি, মামলা প্রত্যারের আল্টিমেটাম, চাঁদাবাজি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করাসহ নানা অভিযোগে পাবনা সদর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালিকাভুক্ত ছয় জন দলিল লেখকের সনদ বাতিল করা হয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা রেজিস্ট্রার দ্বীপক কুমার সরকার। এর আগে রবিবার (২৩ নভেম্বর) দ্বীপক কুমার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাদের সনদ বাতিল ও অফিস আঙ্গিনায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত দলিল লেখকরা হলেন— পাবনা সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ইসহাক উল আলম, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম শাহীন, সদস্য আব্দুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, হাসান মাহমুদ পাপ্পু ও গোলজার হোসেন।
এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার দ্বীপক কুমার সরকার বলেছেন, হত্যার হুমকি ও অশালীন আচরণসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত উল্লিখিত দলিল লেখকদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছিলেন সদর উপজেলার সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। সেই অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া যায়। সম্প্রতি সেই অভিযোগসহ দলিল লেখকদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা প্রত্যাহারের জন্য আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। এছাড়াও একাধিক সময়ে তাদের বিরুদ্ধে অফিসে হামলা, প্রাণনাশের হুমকি, মামলা প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম, অফিসে আতঙ্ক সৃষ্টি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করা, চাঁদা আদায়সহ নানা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই ৬ জন ছাড়াও যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নুরুল আলম শাহীন আওয়ামী লীগের সময় নিজেকে শ্রমিক লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে পাবনা সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আধিপত্য গড়ে তোলেন। জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার ছত্রছায়ায় সেখানে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে তিনি নিজেকে বিএনপিপন্থী পরিচয় দিয়ে কয়েকজন নেতার ছত্রছায়ায় এই স্বর্গরাজ্য ধরে রেখেছেন। প্রতিদিন সেখানে ৪ থেকে ৫০০ দলিল সম্পাদন হয়। দলিল প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করেন তিনি। সেই হিসেবে প্রতিদিন ১০-১৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলে ভাগবাটোয়ারা করা হয়।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ফোন বন্ধ থাকায় নুরুল আলম শাহীনের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাবনা সদর উপজেলার দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ইসহাক উল আলম বলেছেন, “আমরা শুধু চিঠি পেলাম যে, আমাদের সনদ বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু, কেন করা হয়েছে, তা আমরা জানি না। আমাদের এর আগে কোনো নোটিশও দেয়নি। এখন মিথ্যা মামলা দিলে আমাদের কী বলার আছে?”
ঢাকা/শাহীন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের নয়ডায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
ভারতে পড়তে এসে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর। ২২ বছর বয়সী ওই নিহত শিক্ষার্থীর নাম শাহরিয়ার। রবিবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তাকে ঘরের ভেতরে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান বাড়ির মালিক।
শাহরিয়ার উত্তর প্রদেশের নয়ডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (এনআইইউ) পড়াশোনা করতেন। তিনি বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা। গ্রেটার নয়ডায় বেটা-১ সেক্টরের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি। তার লাশ দেখতে পাওয়ার পর বেটা-২ থানায় খবর দিলে ঘটলাস্থলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।
আরো পড়ুন:
বারাণসী: বাজেট ১৮০৩ কোটি টাকা, কে কত পারিশ্রমিক নিলেন?
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে দিল্লিকে নতুন চিঠি ঢাকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাড়ির মালিক জানান, রবিবার সন্ধ্যায় আমি জানলা দিয়ে ঘরের মধ্যে তাকাতেই শাহরিয়ারকে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। এরপরে সাথে সাথেই থানায় খবর দিই।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার তারা খবর পায় সেক্টর বেটা-১ এর একটি ভাড়া নেওয়া বাসায় এক যুবক আত্মহত্যা করে মারা গেছে। এরপরই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। যদিও ঘরটি ভেতর থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। এরপর বাড়ির মালিকের উপস্থিতিতে পুলিশ দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
বাড়ির মালিক জানান, বিহারের মধুবনীর বাসিন্দা রূপা নামে এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল শাহরিয়ারের। গত ১৬ নভেম্বর, রূপাকে সাথে নিয়ে শাহরিয়ার ওই বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য সেখানে আসে। এসময় তারা দুজনেই নিজেদেরকে বিবাহিত দম্পতি হিসেবে তার (বাড়িওয়ালার) কাছে পরিচয় দেন। প্রতি মাসে ৮ হাজার রুপিতে তিনি শাহরিয়ার দম্পতিকে ঘরটি ভাড়া নিয়েছিলেন। পরদিন ১৭ নভেম্বর তারা উভয়েই ওই ঘরে এসে ওঠেন।
বাড়িওয়ালা আরো জানান, ওই নারী ২১ নভেম্বর ঘর থেকে বেরিয়ে যান কিন্তু এরপর আর ফিরে আসেননি। আর সেদিন থেকেই শাহরিয়ারের ফোনও বন্ধ ছিল। ফলে একরাশ সন্দেহের জন্ম দেয়। এদিকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ থাকায়, রবিবার ২৩ নভেম্বর তিনি জানালা দিয়ে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা স্টেশন হাউস অফিসার বিনোদ কুমার জানান, ঘটনাস্থল থেকে কোনো সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়নি। মৃত্যুর কারণ কী, তা নিশ্চিত করার জন্য ওই নারীর চলে যাওয়া, এর ফলে শাহরিয়ার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল কিনা, শাহরিয়ারের ফোন কেন বন্ধ ছিল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো সমস্যা ছিল কিনা- এই সমস্ত দিক পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে তদন্তে নেবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রুপা নামে ওই নারীর কোনো সন্ধান পায়নি পুলিশ। কারণ ঘটনার পর থেকে রূপার ফোনও বন্ধ পায় তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
বাড়ির মালিক জানান, তারা যখন ঘর ভাড়া নিতে আসে তখন তাদের উভয়কেই নববিবাহিত দম্পতির মতোই লাগছিল। আচমকা এরকম একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে কখনোই বুঝতে পারিনি।
পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মৃতের পরিবারের সদস্যদের অবহিত করা হয়েছে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ