গত ৫ মার্চ, শনিবার গভীর রাতে, শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ রোগযন্ত্রণা আর বুকের মধ্যে গভীর বেদনা নিয়ে নির্বাক মজিবুর রহমানের মৃত্যু হলো। ১৯৮৭ সালের গণআন্দোলনের শহীদ নূর হোসেনের পিতা হলেন মজিবুর রহমান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

বিগত বছরে ১ আগস্ট (২০০৪ সালে) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন। একাধিক হাসপাতালে চিকিত্সার পর গত ৩ নভেম্বর মিরপুরের বাসায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

আমরা গত বছরের ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেনকে স্মরণ করে তাঁর গুরুতর অসুস্থতার খবর ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলোতে একটি নাতিদীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম। তারপর তাঁর মৃত্যুবরণের সংবাদ ছাপলাম ৭ মার্চ। আমরা জানতাম, তাঁর জীবন আর দীর্ঘ হবে না। তাঁর মৃত্যু প্রায় আসন্ন। তারপরও মজিবুর রহমানের মৃত্যুসংবাদ আমাদের গভীরভাবে ব্যথিত করেছে।

আরও পড়ুনশহীদ নূর হোসেন, বৃদ্ধ মজিবুর রহমান এবং শামসুর রাহমানের কবিতা ১০ নভেম্বর ২০১৭

বৃদ্ধ মজিবুর রহমানের মৃত্যুর সংবাদ কোনো গুরুত্ব পায়নি টেলিভিশন বা দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে। অথচ একসময় সেই গত শতাব্দীর আশির দশকে শহীদ নূর হোসেন আর তার পিতাকে নিয়ে কত না হৈচৈ আর মাতামাতি হয়েছিল। কত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে সভা-সমাবেশে।

১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বরে আত্মদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন ২৪ বছরের যুবক নূর হোসেন। দেশের প্রায় সব সংবাদপত্রে তার ছবি ছাপা হলো। সারা দুনিয়ার সংবাদ হলেন নূর হোসেন। নূর হোসেনকে নিয়ে কবিতাও লেখা হলো অনেক। গল্প আর নাটক হলো। পোস্টারের বিষয় হয়ে উঠলেন নূর হোসেন। আশির দশকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নূর হোসেন নতুন এক সাহস, এক প্রেরণা হয়ে উঠেছিল।

১০ নভেম্বর নূর হোসেনের আত্মদানের মধ্য দিয়ে তার পরিবারও সংবাদ হয়ে উঠেছিল। দৈনিক, সাপ্তাহিক আর মাসিক পত্রিকায় তাদের নিয়ে অসংখ্য খবর বের হলো। নূর হোসেনের পিতা মজিবুর রহমানের অনেক সাক্ষাত্কার নেওয়া হলো। ছোট-বড় নানা রকম সভা-সমাবেশ, আলোচনা, এমনকি শহীদ মিনারে বুদ্ধিজীবীদের মস্ত বড় অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রধান অতিথি করা হলো। প্রচুর সম্মান দেওয়া হলো তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে। মজিবুর রহমান যারপরনাই খুশি ছিলেন সে দিনগুলোতে। নূর হোসেনের পিতা বৃদ্ধ মজিবুর রহমান গর্বিত হৃদয়ে পুত্রশোকের সান্ত্বনা খুঁজলেন।

কোনো কোনো পত্রিকায় খবর বের হয়েছিল, জুরাইনের গোরস্থানে তার কবর হয়েছে। এ খবর শুনে নূর হোসেনের পিতা মজিবুর রহমান ১৩ নভেম্বর দৌড়ে গিয়েছিলেন সে জায়গায়। জুরাইনের কবরখোদকরা তাকে জানায়, ১২ নভেম্বর শেষরাতে, সময় রাত ৩টা হবে, আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের গাড়িতে করে তিনটি লাশ আনা হয়েছিল। পুলিশ ছিল সঙ্গে।

সে সময় জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং তাদের সহযোগীরা নূর হোসেনের পিতা মজিবুর রহমানের বনগ্রামের এক ঘরের গেরস্থালিতে গেলেন। শুধু যাননি জাতীয় পার্টি আর জামায়াতে ইসলামীর কেউ। সে ঘরে নেতাদের বসতে দেওয়ার মতো জায়গা ছিল না। তবু এমন সব ব্যক্তির আগমনে শহীদের পিতা-মাতা উচ্ছ্বাসে তাদের জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনি তাদের বারবার বলেছেন, আমরা কিছু চাই না। আমাদের ছেলেকে আর কোনো দিন ফিরে পাব না। ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এবং ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ আমার ছেলের এ স্লোগান যদি পূরণ হয়, তাহলেই আমরা খুশি।

ঢাকার রাজপথে নূর হোসেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন মানে গণতন্ত্র, এই ভুয়া তত্ত্ব থেকে বের হতে হবে: ফরহাদ মজহার

নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন চিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার।

সোমবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, “যদি আমরা কিছু করতে চাই তাহলে, দয়া করে নির্বাচনের ধারণাটা বাদ দেন। নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র, এটা মারাত্মক ভুল। নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন মানে গণতন্ত্র, এই ভুয়া তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্র মানে হচ্ছে জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায় বাস্তবায়িত করা। এটার আরেকটা নাম আছে, সেটা হচ্ছে গণসার্বভৌমত্ব। জনগণের গাঠনিক ক্ষমতা কখনো হরণ করা যায় না। আন্দোলনসহ বিভিন্ন কিছুর মধ্য দিয়ে জনগণ তার এই গাঠনিক ক্ষমতাকে জারি রাখে।”

তিনি বলেন, “এখন সমস্যা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ক্ষমতাকে যেখানে দিয়েছেন, পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলো রয়ে গেছে। যেহেতু আমরা শেখ হাসিনার রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রেখেছি, সেই রাষ্ট্রটা এখনও আছে। ফলে সেই রাষ্ট্রটি আপনার সামনে দানবের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এটাকে আপনি ভাঙতে পারছেন না। আপনি (ড. ইউনূস) বলছেন এটাকে সংস্কার করতে হবে।”

ফরহাদ মজহার বলেন, “আমাদের নতুন বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ খুব সহজ। নতুন গণপরিষদ গঠন করা এবং একটা গণপরিষদে নির্বাচন করা। গণপরিষদে আমাদের সমস্ত সাংবিধানিক প্রশ্ন, সকল আইনি প্রশ্ন, রাষ্ট্রীয় প্রশ্ন ফয়সালা করা। যখন আমরা সিম্পল ফরমুলাকে জটিল করে ফেলি, এদিক-ওদিক নিয়ে যাই, তখন বিভিন্ন শক্তির কারণে আমরা এটাকে তখন নষ্ট করে ফেলি।”

ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “জনগণকে বলতে দেন, তারা কেমন বাংলাদেশ চায়। জনগণকে ক্ষমতা দেন। এটা না করে আপনি দু-তিনটা লোক নিয়ে এসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করলেন। এটার তো কোনো ভ্যালিডিটি নেই। আপনাদের কোনো এখতিয়ারই নেই।”

আলোচনা সভায় কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন মানে গণতন্ত্র, এই ভুয়া তত্ত্ব থেকে বের হতে হবে: ফরহাদ মজহার
  • জনগণের পার্লামেন্ট না হলে অধিকার ফিরে আসবে না: মির্জা ফখরুল
  • শহীদ নূর হোসেন, বৃদ্ধ মজিবুর রহমান এবং শামসুর রাহমানের কবিতা
  • জুলাই সনদের যে পাতায় সই করেছি, তা বাদ দিয়ে অন্য পাতা ঢোকানো হয়েছে
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ, সিদ্ধান্ত সরকারের হাতে
  • বিএনপির জন্ম হয়েছে সংস্কার করার জন্য: ডা. জাহিদ  
  • বিএনপিতে ৫ শতাংশ শিক্ষকের মনোনয়ন চায় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট