নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় এক সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ওই সাংবাদিকের সঙ্গে থাকা তাঁর এক সহকর্মী বাধা দিতে গেলে তাঁকেও অস্ত্র দেখিয়ে ধাওয়া করা হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর তেরিবাজার ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত লুৎফুজ্জামান আলিফ ফকির বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল রূপসী বাংলার নেত্রকোনা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা একটার দিকে লুৎফুজ্জামান ও তাঁর সহকর্মী শাহজাহান শেখ দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদী পার হতে একটি ভাড়া মোটরসাইকেলে করে নদীর তেরিবাজার ঘাটে নামেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে চারজন ব্যক্তি সেখানে আসেন। তাঁদের মধ্যে দুজন চাপাতি হাতে নিয়ে লুৎফুজ্জামানকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এতে তাঁর দুই হাত, পিঠ ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। সঙ্গে থাকা শাহজাহান শেখ বাধা দিতে গেলে তাঁকেও কোপানোর চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। পরে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন লুৎফুজ্জামানকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।  

দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সালভিয়া শেহরিন বলেন, ওই সাংবাদিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুর্বৃত্তদের কোপে তাঁর শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।

শাহজাহান শেখ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোটরসাইকেল থেকে নামার পর কিছু বুঝে ওঠার আগেই চার দুর্বৃত্ত আমাদের ঘিরে ফেলে। দুজন চাপাতি হাতে নিয়ে লুৎফুজ্জামানকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তাঁর বাঁ হাতের আঙুল, ডান হাতের রগ কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়েছে। তাঁর ধারণা, সংবাদ প্রকাশের জেরে দুর্বৃত্তরা এই হামলা চালিয়েছে।’

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি শোনার পরই হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ ঘটনায় থানায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ব ত তর

এছাড়াও পড়ুন:

কোনো এক ঝুমকোলতার কথা 

ময়মনসিংহে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রায় ২৪ একর জায়গাজুড়ে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের সংগ্রহ নিয়ে ১৯৬৩ সালে বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়েছিলাম চলতি বছরের ১০ মে। প্রকৃতিতে তখন বৈশাখের শেষ। খুব গরম পড়েছিল সেদিন। তারপরও নতুন কোনো উদ্ভিদের সন্ধান পাই কি না, কোনো উদ্ভিদে ফুল ফুটল কি না, তা দেখার কৌতূহলের কারণেই যাওয়া।

বাগানের বিভিন্ন পথ দিয়ে হাঁটছিলাম আর দুই পাশের উদ্ভিদ দেখছিলাম। হঠাৎ হাঁটাপথের এক জায়গায় গ্রিলের প্রবেশপথের গায়ে দেখা পেলাম উজ্জ্বল লাল রঙের আকর্ষণীয় একধরনের ঝুমকোলতা ফুলের। গ্রিলের পেছনে এক দেবদারুগাছের ডালপালা ঝুলে আছে। লতার গা আলো করে ফুটে আছে প্যাশন ফ্লাওয়ার। খুব ভালো লাগল। গরম আর ক্লান্তি গেলাম ভুলে। এই উদ্ভিদের ফুল এই প্রথম দেখলাম। ছবি তুলে ফেললাম ঝটপট। সুগন্ধ আছে এ ফুলের। তাই ইংরেজিতে এই ফুল পারফিউমড প্যাশন ফ্লাওয়ার নামে পরিচিত। আর এর পাতা আঙুরের পাতার মতো বলে আরেক নাম গ্রেপ লিভড প্যাশন ফ্রুট। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Passiflora vitifolia, এটি Passifloraceae পরিবারের লতানো উদ্ভিদ। প্যাসিফ্লোরা গণে ৫০০-৫৫০টি প্রজাতি রয়েছে। এর বেশির ভাগই লতানো উদ্ভিদ। প্যাসিফ্লোরা এডুলিসের ফল প্যাশন ফ্রুট হিসেবে জনপ্রিয় এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়।

গ্রেপ লিভড প্যাশন ফ্রুট উদ্ভিদের কাণ্ড সরু। উদ্ভিদের পাতার গোড়ায় একজোড়া গ্রন্থি থাকে। পাতা চকচকে, চামড়ার মতো, গাঢ় সবুজ, তিনটি খণ্ডযুক্ত। এটি শক্তিশালী এক লতা। গ্রীষ্মের শুরু থেকে শরৎ পর্যন্ত এতে উজ্জ্বল লাল ফুল ফোটে। ফুল ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হয়। ফুলে লাল, সাদা বা হলুদ ফিলামেন্ট থাকে। এর ফুলের গঠন এমনভাবে তৈরি যে এটি হামিংবার্ড বা প্রজাপতির মাধ্যমে পরাগায়িত হয়।

কচি অবস্থায় নলাকার এই লতা লাল-বাদামি লোমে ঢাকা থাকে। পাতাগুলো তিন খণ্ডযুক্ত, ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা এবং ১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া। ফুলগুলো অত্যাশ্চর্য, উজ্জ্বল লাল, ব্যাস ৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। ফুল কুঁড়ি অবস্থায় লাল শিরাসহ তিনটি উজ্জ্বল গেরুয়া রঙের ব্র্যাক্ট দিয়ে আবৃত থাকে। প্রস্ফুটিত হওয়ার পর তীব্র উজ্জ্বল লাল রঙের বৃতি ও পাপড়ি দেখা যায়। বৃত্যংশগুলোর একটি সূক্ষ্ম শীর্ষ থাকে। পরাগদণ্ড ও গর্ভদণ্ডগুলো লাল রঙের হয়।

ফল হলদে সবুজ। ফল ৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৩ সেন্টিমিটার চওড়া হয়। এই ফল সামান্য পাতলা লোমসহ সবুজ মাংসযুক্ত। ফলের মধ্যে অসংখ্য বীজ থাকে। এ ছাড়া ফলের গায়ে সাদা বিন্দু থাকে। ফল দেখতে ডিমের মতো।

এই উদ্ভিদের বহুবর্ষজীবী মূল রয়েছে। কাণ্ড বর্ষজীবী থেকে বহুবর্ষজীবী। উদ্ভিদ ৫-২০ মিটার লম্বা, মাঝেমধ্যে ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এরা মাটির ওপর হামাগুড়ি দিয়ে চলে এবং অন্য গাছপালা বা গ্রিলকে আঁকশির সাহায্যে আঁকড়ে ধরে ওপরে উঠে যায়।

এই উদ্ভিদের ফুল যেমন বাগানের শোভা বাড়িয়ে দেয়, তেমনি এর ফলও খাওয়া যায়। এর আদি নিবাস দক্ষিণ–মধ্য আমেরিকা (কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, পানামা) এবং উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ আমেরিকা (ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু)। এসব অঞ্চলে এর ভোজ্য ফলটি মাঝেমধ্যে বন থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং স্থানীয়ভাবে খাওয়া হয়। যদিও এই ফল ব্যাপকভাবে সমাদৃত নয়।

কাণ্ডের কাটিং এবং বীজ থেকে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি করা হয়। লতার গায়ে উদারভাবে ফুল ফোটায় কাটিং থেকে তৈরি উদ্ভিদ। বীজ থেকে উৎপন্ন গাছে ফুল ফোটার নিশ্চয়তা নেই। তাই কাটিং পদ্ধতিই জনপ্রিয়।

গাছ থেকে পড়ে গেলে এর ফল টক হয়। এক মাস সময় নিয়ে পাকলে স্বাদ স্ট্রবেরির মতো হয়। সুগন্ধি ফলের কারণে ক্যারিবীয় অঞ্চলে ছোট আকারে এই উদ্ভিদের চাষ করা হয়।

চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে অগ্নিকাণ্ডে ইঞ্জিন বিকল, দুই ঘণ্টা পর রেল যোগাযোগ সচল
  • ময়মনসিংহে ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন, নেত্রকোনা ও ভৈরব রেললাইনে চলাচল বন্ধ
  • ময়মনসিংহে বাসে আগুন, ঘুমন্ত ব্যক্তির মৃত্যু
  • ময়মনসিংহে বাসে দুর্বৃত্তদের আগুন, চালকের মৃত্যু
  • জাজিরায় খেলতে গিয়ে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
  • ময়মনসিংহ নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল
  • কোনো এক ঝুমকোলতার কথা 
  • গিরিয়া হাঁস ও কুড়া ইগলের গল্প
  • বিদায় গামিনি…