চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী মেজর ইকবাল গ্রেপ্তার
Published: 11th, November 2025 GMT
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি মেজর ইকবাল নামে পরিচিত। গতকাল সোমবার রাতে চট্টগ্রামের রাউজানের সুলতানপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ইকবাল ওই গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ৪০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু মামলায় তিনি জেলও খেটেছেন। বর্তমানে মামলা বিচারাধীন রয়েছে ১১টি। যার মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা। সর্বশেষ ২০১০ সালে সাত বছর জেল খেটে তিনি জামিনে বের হন। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ছিলেন। কয়েক বছর আগেই তিনি এলাকায় ফিরেছেন।
পুলিশ জানায়, আগে আওয়ামী লীগের রাউজান আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে কাজ করতেন ইকবাল। বর্তমানে রাউজানে বিএনপির এক নেতার হয়ে এলাকায় অবস্থান করছিলেন।
১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ও রাউজান কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) মজিবুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসব খুনের ঘটনার মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে মেজর ইকবালের নাম। ১৯৯৩ সালে পূর্ব গুজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতার হোসেনকে ব্রাশফায়ারে হত্যার প্রধান আসামিও করা হয় মেজর ইকবালকে। রাউজানে দুই ভাই টিটু ও মিঠুকে একসঙ্গে হত্যা, মুক্তিযোদ্ধা নিহার কান্তি বিশ্বাসকে হত্যা, ছাত্রলীগের জেলা নেতা ইকবাল ও জামিল এবং ফটিকছড়ির শ্যামল ও আমান নামের দুই ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা মামলার আসামি ছিলেন ইকবাল।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, অস্ত্রসহ অবস্থান করছেন—এমন খবরে ইকবালকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। তবে তাঁর কাছ থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। অস্ত্র থাকার কথাও তিনি স্বীকার করেননি। তাঁকে রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, মেজর ইকবাল নামে পরিচিত এই সন্ত্রাসীকে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ইকব ল
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই অভ্যুত্থানের ভিডিওকে এখন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বলে প্রচার
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা ১৩ নভেম্বর ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচির আগে নানা ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে বিভ্রান্তিকর নানা দাবিও করা হচ্ছে। পুরোনো কর্মসূচির ভিডিও নতুন দাবি দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, আবার ভিন্ন প্রসঙ্গের ঘটনাকেও আওয়ামী লীগের কর্মসূচি হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১০ নভেম্বর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, রাস্তায় উত্তেজিত মানুষের সমাবেশ এবং সড়কের পাশে পড়ে থাকা একাধিক মোটরসাইকেল, যার কয়েকটিতে আগুন জ্বলছে।
লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ‘বরিশালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি শুরু।’ অপর এক ফেসবুক আইডিতে একই ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘বরিশালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচীর বিক্ষোভ শুরু’
লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
ভিডিওটিতে একটি দোকানের ব্যানার দেখা যায়, যাতে লেখা রয়েছে ‘Classic & Rock, Barishal’। এই নামটি গুগলে সার্চ করলে হাসপাতাল রোড, বরিশাল ৮২০০ ঠিকানায় একটি দোকানের অবস্থান পাওয়া যায়। দোকানটি বাদ্যযন্ত্র বিক্রি ও মেরামত করে।
লিংক: এখানে
ঠিকানা ধরে ক্লাসিক অ্যান্ড রক-এর মালিক ফয়সাল আলম চৌধুরী মিন্টুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়। এটি গত বছরের জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের সময়, ৪ আগস্ট দুপুরের পর ধারণ করা।’
ফয়সাল আলম চৌধুরী আরও বলেন, ‘তখন আমার দোকান ক্লাসিক এন্ড রক ছিল করিম কুটি মসজিদের উল্টো পাশে, এম এ জলিল সড়কে (নবগ্রাম)। ভিডিওটিতে যে বাইকগুলো পুড়তে দেখা যাচ্ছে, সেগুলো আমার দোকানের সামনে ছিল।’
প্রথম আলোর বরিশাল প্রতিনিধি জানান, ঘটনার ওই স্থান বরিশাল নগরের এম এ জলিল সড়কের (নবগ্রাম সড়ক) করিম কুটির এলাকায়। ঘটনাটি বরিশালের সাবেক সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়ি বেগম ভিলার ফটকের সামনে।
জুলাই আন্দোলনের সময় গত বছরের ৪ আগস্ট বরিশালে ছাত্র–জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক পর্যায়ে জাহিদ ফারুক শামীমের বাসভবন বেগম ভিলার সামনে থাকা একাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। পরে উত্তেজিত জনতা সেই বাইকগুলোতে আগুন দেয়।
বরিশালের স্থানীয় মুদিদোকানি হারুন অর রশিদও ভিডিওটি দেখে একই কথা বলেন,‘এটা এই বছরের ঘটনা না, গত বছরের আগস্টের শুরুতে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময়কার ঘটনা।’
২০২৪ সালের ৪ ও ৫ আগস্টের সংঘর্ষ নিয়ে বেসরকারি টিভি চ্যানেল যমুনা টিভি ও মাছরাঙা টিভি যথাক্রমে ‘বরিশালে ব্যাপক সংঘর্ষ; পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বাসভবনে আগুন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রচার করে।
লিংক: এখানে, এখানে
এ ছাড়া প্রথম আলো, সমকাল, বাংলানিউজ২৪সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমও তখন সংবাদ প্রকাশ করেছিল, ‘বরিশালে প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি ভাঙচুর, ২০টি মোটরসাইকেলে আগুন।’
লিংক: এখানে, এখানে, এখানে
প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ৪ আগস্ট বরিশালের বটতলা নবগ্রাম রোড এলাকায় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বাসায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানে থাকা ২০–২৫টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় নগরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। পরে পুলিশ এসে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সুতরাং ভিডিওটি বরিশালে আওয়ামী লীগের নতুন কোনো কর্মসূচির নয়, বরং গত বছরের ৪ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানকালীন সংঘর্ষের দৃশ্য।