মেট্রোরেলের স্থায়ী কার্ড রিচার্জ করতে আর স্টেশনে যেতে হবে না। আজ মঙ্গলবার থেকে যেকোনো স্থান থেকে এই কার্ডে টাকা রিচার্জ করা যাবে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, নগদ, রকেটসহ সব ধরনের অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

‎আজ দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে মেট্রোরেলের র‍্যাপিড পাস ও এমআরটি পাস কার্ডে অনলাইন রিচার্জের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক, সেতু ও রেল মন্ত্রণালয়) শেখ মইনউদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নিখিল কুমার দাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ মইনউদ্দিন বলেন, এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের গণপরিবহনে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হবে। অনলাইন রিচার্জ সুবিধার মাধ্যমে র‍্যাপিড পাস ও এমআরটি পাস ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে নিরাপদে, দ্রুততার সঙ্গে তাঁদের যাতায়াত সুবিধার জন্য কার্ড রিচার্জ করতে পারবেন।

গণপরিবহনে দক্ষতা বৃদ্ধি, সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও যাত্রী সেবার মানোন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন নিখিল কুমার দাস। তিনি বলেন, অনলাইন রিচার্জ সেবা চালু হওয়ায় যাত্রীরা আরও দ্রুত, নিরাপদ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থার সুবিধা পাবেন। ভবিষ্যতে গণপরিবহনের সেবাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করতে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।

নীলিমা আখতার বলেন, বহুল কাঙ্ক্ষিত এই সেবার মাধ্যমে যাত্রীদের সময় সাশ্রয় হবে। নগদহীন ও ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার প্রসার ঘটবে। গণপরিবহন ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণ আরও সুদৃঢ় হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে যাত্রীরা একটি স্মার্ট ও ঝামেলামুক্ত যাতায়াতের অভিজ্ঞতা পাবেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মোল্লা, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক শরাফত উল্লাহ খান, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলম, এসএসএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশনের প্রতিটিতে দুটি করে মোট ৩২টি অ্যাড ভ্যালু মেশিন (এভিএম) বসানো হয়েছে। এই মেশিনে র‍্যাপিড পাস ও এমআরটি পাস কার্ড স্পর্শ করানোর পর অনলাইন রিচার্জ সম্পন্ন হবে। পরবর্তীতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। আগামী মাসে অনলাইনে রিচার্জের সুবিধার জন্য মেট্রোরেলের অ্যাপ চালু হবে।

যেভাবে রিচার্জ করবেন

প্রথমবার অনলাইন রিচার্জ করার জন্য ওয়েবসাইট/অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে।

অনলাইন রিচার্জের ক্ষেত্রে র‍্যাপিড পাস কার্ডটি ইতিমধ্যে নিবন্ধন করা না থাকলে নিবন্ধন করতে হবে।

যেকোনো একটি পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইনে কার্ড রিচার্জ করতে হবে।

অনলাইনে রিচার্জ করার পর এভিএম কার্ড স্পর্শ করার আগ পর্যন্ত তা (রিচার্জ) অপেক্ষমাণ (পেন্ডিং) দেখাবে।

অনলাইন রিচার্জের পর কার্ডটি এভিএম মেশিনে স্পর্শ করে রিচার্জ করা ব্যালেন্স যুক্ত হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে।

রিচার্জ সফল হলে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে একটি এসএমএস দেওয়া হবে।

একটি কার্ডে একবারে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা, সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করা যাবে।

এ ছাড়া একবারে শুধুমাত্র একটি পেন্ডিং অনলাইন রিচার্জ থাকতে পারবে। আগের রিচার্জ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নতুন অনলাইন রিচার্জ করা যাবে না।

কার্ড যদি ব্ল্যাক লিস্টেড, রিফান্ডেড বা অবৈধ হয়, তাহলে রিচার্জ করা যাবে না। ব্যবহারকারী তাঁর রিচার্জ হিস্ট্রি অ্যাপ্লিকেশন বা ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে দেখতে পারবেন।

ব্যবহারকারী চাইলে কার্ড এভিএম মেশিনে স্পর্শ করার আগে ৭ দিনের মধ্যে রিচার্জ বাতিলের জন্য অনুরোধ করতে পারবেন। রিচার্জ বাতিলের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ কাটা হবে।

কার্ড ব্ল্যাক লিস্ট-সংক্রান্ত কারণে পেন্ডিং ট্রানজেকশনের ক্ষেত্রেও গ্রাহক রিফান্ড রিকোয়েস্ট করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রেও ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ কাটা হবে।

আরও পড়ুনঘরে বসে মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ চালু হচ্ছে ২৫ নভেম্বর১৯ নভেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণপর বহন র চ র জ কর অন ষ ঠ ন ব যবস থ ব যবহ র পর বহন ন বন ধ র জন য প রব ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ঢাকার উন্নয়ন ধারণায় মৌলিক পরিবর্তন জরুরি’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ঢাকার উন্নয়ন ধারণায় এখনই মৌলিক পরিবর্তন আনা জরুরি। 

তিনি বলেন, ‘‘অতিরিক্ত কংক্রিটনির্ভর উন্নয়ন ঢাকাকে অনিরাপদ ও দুর্ব্যবস্থাপনায় ঠেলে দিয়েছে। বছরের পর বছর আমরা সমস্যা নিয়ে কথা বলি, কিন্তু সমাধানে যেতে সাহসী সিদ্ধান্ত নেই না। আমাদের চিন্তায় পরিবর্তন আনতেই হবে। কারণ পুরোনো কাঠামো এখন আর কাজ করছে না।’’ 

রবিবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (JICA) কারিগরি সহায়তায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থবহ সংস্কারের উদ্যোগ নিলে বিভিন্ন স্তরের প্রতিরোধের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘কার্যকর সমন্বয়, ক্ষমতায়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন।’’

এ সময় তিনি ঢাকার নাজুক গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেন। ‘‘প্রতিদিন কালো ধোঁয়া নির্গতকারী বাস রাস্তায় চলছে। যানবাহন ও পরিবহন পরিচালনা ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া ঢাকাকে বাসযোগ্য করা সম্ভব নয়। স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা এখন আর বিলাসিতা নয়, অপরিহার্য।”

তিনি আরও বলেন, ‘‘ট্রানজিট-অরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) স্মার্ট পরিবহন কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে, তবে পরিবেশগত অখণ্ডতা যেন ক্ষুণ্ন না হয়। একটি সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে আরেকটি সমস্যা তৈরি করা যাবে না। মেট্রো স্টেশন বা বাণিজ্যিক স্থাপনার জন্য উন্মুক্ত স্থান ও পরিবেশগত বাফার নষ্ট করা ঠিক হবে না। ঢাকার মানুষ নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো খোলা জায়গা চায়।’’ 

পুরান ঢাকায় রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তরে ধীরগতির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলোর কারণে প্রয়োজনীয় সংস্কার এগোয় না।’’

তিনি শহরে সবুজায়ন উদ্যোগে কমিউনিটির অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেন। টিওডি উদ্যোগের মাধ্যমে নগরে আরও উন্মুক্ত স্থান, পার্ক ও সবুজ পরিবেশ সৃষ্টির সম্ভাবনায় আশাবাদ ব্যক্ত করলেও তিনি অপ্রয়োজনীয় বাজার নির্মাণে সতর্কতা বজায় রাখার পরামর্শ দেন। 

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ নজরুল ইসলাম, সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; ফারুক আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড; এবং মি. ইচিগুচি তমহিদে, প্রধান প্রতিনিধি, জাইকা বাংলাদেশ। সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রিয়াজুল ইসলাম। 

ঢাকা/এএএম//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ঢাকার উন্নয়ন ধারণায় মৌলিক পরিবর্তন জরুরি’