যশোরে ককটেল ও অস্ত্রসহ যুবদল নেতা আটক
Published: 25th, November 2025 GMT
যশোরে সাতটি ককটেল, তিনটি পেট্রোল বোমা সদৃশ্য বস্তু ও বেশকিছু ধারালো অস্ত্রসহ যুবদল নেতা মাসুদ আল রানাকে আটক করেছে পুলিশ।
মাসুদ আল রানা যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া রাজা বরদাকান্ত রোড এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক।
কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক আনিছুর রহমান খাঁন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ভোরে গোপন সূত্রে জানা যায় যে, যুবদল নেতা রানার বাড়িতে বোমা ও অস্ত্র আছে। সকাল ৬টার দিকে তিনি রানার বাড়িতে যান এবং তাকে আটক করেন। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তার বাড়ির উঠোনের পাশে রান্নাঘরের পেছন থেকে সাতটি ককটেল, তিনটি কাঁচের বোতলে পেট্রোল বোমা সাদৃশ্য বস্তু, একটি ছোরা ও দুটি হাসুয়া জব্দ করা হয়। এই অস্ত্রগুলো মাসুদ আল রানার কি না, তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকা/রিটন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশ ও বেহাত বিপ্লব
বাংলাদেশের ইতিহাস মূলত গণমানুষের জাগরণের ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান—প্রতিটি অধ্যায়ে তৃণমূল মানুষের আত্মত্যাগ, রক্ত ও স্বাধীনভাবে বাঁচার আকাঙ্ক্ষা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। কিন্তু প্রতিটি বিজয়ের পর ইতিহাস যেন এক অপ্রিয় বাস্তবতার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। বিপ্লব হয়, পরিবর্তনের সুর বাজে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ফিরে যায় ভিন্ন মুখোশধারী একই গোষ্ঠীর হাতে। যেন—যে যায় লঙ্কায়, সে-ই হয় রাবণ।
তাহলে প্রশ্ন জাগে—আমাদের গণ-অভ্যুত্থানগুলো কি সত্যিই জনগণের জন্য, নাকি সাধারণ মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার পালাবদলের হাতিয়ার?
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক মহান সামাজিক বিপ্লবের সামগ্রিক ফসল। কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী সময়েই সেই বিপ্লবের নেতৃত্ব চলে যায় রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত এক এলিট শ্রেণির হাতে। যাদের ওপর আস্থা রেখে জনগণ শাসনক্ষমতা অর্পণ করেছিলেন, কালের পরিক্রমায় তারাই শাসক থেকে শোষকে রূপান্তরিত হলেন। হয়ে উঠলেন রক্ষক থেকে ভক্ষক। অথচ জনতার স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু বাস্তবে তার সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হলো—যেখানে আদর্শ হার মানল লোভের কাছে, আর রাজনীতি পরিণত হলো স্বার্থ চরিতার্থ করার যন্ত্রে। ফলস্বরূপ, জনমনে জন্ম নিল নতুন অসন্তোষ।
এরপর এল ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান। ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণ একত্র হয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রচনা করল এক নতুন ইতিহাস। সবাই ভেবেছিল, এবার হয়তো সত্যিকারের গণতন্ত্রের সূর্যোদয় হবে। কিন্তু না—ইতিহাস আবারও নিজেকে পুনরাবৃত্ত করল। আন্দোলনের সুফল ভোগ করল রাজনীতির পুরোনো খেলোয়াড়েরা, আর যারা রাস্তায় রক্ত দিল, যাদের পরিবারের সদস্যরা জীবন বিপন্ন করল, তারাই রইল মঞ্চের বাইরে। শাসক বদলাল, কিন্তু চরিত্র বদলাল না। আবারও বিপ্লব বেহাত হলো।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানেও দৃশ্যপট প্রায় অভিন্ন। হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ আর অসংখ্য মানুষের পঙ্গুত্বের বিনিময়ে উদিত হয়েছিল এক নতুন সূর্য। কিন্তু বছর না ঘুরতেই দেখা গেল সেই পুরোনো পরিচিত চিত্র—চাঁদাবাজি, বদলি বাণিজ্য, রাজনৈতিক কোন্দল এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজনে বিপ্লবের চেতনা ক্ষয় হতে শুরু করল। সংস্কার নিয়ে ঐকমত্যে বিরোধ, ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে তর্ক—সব মিলিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনা আজ প্রায় বিপর্যস্ত। যাদের আত্মত্যাগে এই আন্দোলন সফল হয়েছিল, তাদের প্রতি দেখা যাচ্ছে অবহেলা। অন্যদিকে পরাজিত শক্তিও আবার মাথা তুলছে—নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ, রাজনৈতিক সহিংসতা—সবকিছু যেন ফিরে এসেছে পুরোনো চিত্রে।
সব মিলিয়ে আজকের বাংলাদেশ যেন তাসের ঘরের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এক বেহাত বিপ্লবের নাম। দুই দিন পর হয়তো নির্বাচন হবে, সরকার গঠিত হবে, কিন্তু তারপর? হয়তো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নেই ব্যস্ত থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো। জনগণকে তখন মনে পড়বে কেবল ভোটের দিনে, আর বাকিটা সময় তারা হয়ে থাকবে নিছক এক ‘সংখ্যা’।
ইতিহাস সাক্ষী—প্রয়োজনে যতবারই ক্রান্তিকাল এসেছে, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও সাধারণ জনতা রক্ত দিয়েছে। অথচ ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছেন রাজনীতিবিদেরা ও মুষ্টিমেয় এলিট শ্রেণি। বিপ্লবের চেতনা রাস্তায় জন্ম নেয়, কিন্তু ফল ভোগ করে চৌহদ্দিতে বন্দী কিছু সুযোগসন্ধানী। এই চক্র ভাঙতেই হবে—এবং ভাঙতেই হবে। তবে এর জন্য কেবল বিপ্লব বা সরকার পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন মানুষের মানসিকতার গভীর পরিবর্তন। বিপ্লবীদেরও বুঝতে হবে—অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতা হস্তান্তরই চূড়ান্ত দায়িত্ব নয়; নিজেদের হাতে নিয়ে দায়িত্বশীলভাবে রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করাও তাদের কর্তব্য। জনগণকে নিজেদের ক্ষমতা, অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ সচেতন হতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে রাজনীতি-সচেতন, নেতৃত্ব নির্বাচনে সজাগ ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
তবেই হয়তো এই হতভাগ্য রাষ্ট্রের ভাগ্য আকাশে সুবাতাস বইবে; নয়তো এই অন্ধকার চক্র চলবে শেষনিশ্বাস পর্যন্ত।
সাব্বির রহমান
শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিজ্ঞান, ঢাকা কলেজ।