৭৩ বছর বয়সে ২০১৫ সালের আজকের দিনে মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। ১৯৫৫ সালে টাটানগরে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে প্রথম অভিনয় করেন প্রখ্যাত এই নির্মাতা। ১৯৬০ সালে ফতেহ লোহানীর সঙ্গে ‘আসিয়া’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর কাজ করেন ওবায়েদ উল হকসহ আরও অনেকের সঙ্গে। অভিনয়ও করেন কিছু ছবিতে। ১৯৭২ সালে পরিচালনা করেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছবি ‘ওরা ১১ জন’। ছবিটি দারুণ প্রশংসিত হয়। পাঁচ দশকের বেশি সময়ে চাষী নজরুল ইসলাম ৩৫টির মতো ছবি নির্মাণ করেন। এর মধ্যে ছয়টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘সংগ্রাম’, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘ধ্রুবতারা’, ‘শহীদ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দীন’, ‘দেবদাস’, ‘শুভদা’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘হাছন রাজা’, ‘শাস্তি’, ‘সুভা’ ইত্যাদি। তারপরও কয়েকটি ছবি তাঁকে অমর করে রাখবে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেসব ছবির নাম।

ওরা ১১ জন

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছিলেন নির্মাতা-প্রযোজক। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে একাত্তরের ডিসেম্বরে রণাঙ্গন থেকে অস্ত্র হাতে ঘরে ফিরেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেই অস্ত্র নিয়েই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল, বেবি, নান্টু, ওলীন, মঞ্জু, আতা, ফিরোজ, আবু, আলতাফরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রতিকূল পরিবেশে তখন সিনেমা নির্মাণ করা সহজ ছিল না। বলা যায়, দেশের প্রতি ভালোবাসার টানেই সেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন দুই বন্ধু—প্রযোজক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ও পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত গোলাবারুদও সিনেমার শুটিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছিল। সিনেমার প্রয়োজনে কয়েকজন রাজাকারকেও ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, এ টি এম শামসুজ্জামানের মতো শিল্পীরাও অভিনয় করেছিলেন সিনেমায়। সিনেমার নামকরণ নিয়ে চাষী নজরুল ইসলাম জীবদ্দশায় বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, একাত্তরে ১১টি সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন বাঙালিরা। বিষয়টি মাথায় রেখেই সিনেমার নাম রাখা হয়েছে ‘ওরা ১১ জন’। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম এ সিনেমায় ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, গেরিলাযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা তুলে আনা হয়। সেই সঙ্গে দেখানো হয়েছে দেশীয় দালালদের পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করার ঘৃণ্য ইতিহাস ও তার পরিণতি। এই ছবিতে তুলে আনা হয়েছে নারীদের বীরত্বগাথাও। মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনা নারীর আত্মত্যাগ, যুদ্ধের ময়দানে পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের চিত্র উঠে এসেছে। পরিচালক হিসেবে চাষী নজরুল ইসলামের প্রথম সিনেমা ছিল এটি; তার আগে এক যুগ ধরে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। ‘ওরা ১১ জন’ সিনেমা শুরু হয় সাইফুল ইসলামের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত ‘ও আমার দেশের মাটি’ দিয়ে। শেষ হয় সাবিনা ইয়াসমীনের ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ দিয়ে। ছবিটি মুক্তির পর ব্যবসায়িকভাবে যেমন সাফল্য পেয়েছে, তেমনি সমালোচকদের প্রশংসাও পেয়েছিল। ৫০ বছর পর নিজের সিনেমাকে নিয়ে মূল্যায়ন করতে বললে সোহেল রানা বলেন, ‘“ওরা ১১ জন” স্বাধীনতাযুদ্ধ নিয়ে ভালো ছবি নয়, কিন্তু এটা ওয়ান অব দ্য বেস্ট ডকুমেন্টারি ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। মুক্তিযোদ্ধারাই অভিনয় করেছেন, যুদ্ধের আসল গোলাবারুদও ব্যবহার করেছিলেন। ডকুমেন্টারি হিসেবে এটার তুলনা চলে না।’

‘শুভদা’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

ক্যারিবীয় সাগরে একটি জাহাজে আবারো হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এতে জাহাজটিতে থাকা অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। 

রবিবার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

আরো পড়ুন:

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

কানাডার সঙ্গে আলোচনায় না বসার ঘোষণা ট্রাম্পের

শনিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই জাহাজটিকে অবৈধ মাদক চোরাচালানে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচালিত এই হামলার সময় জাহাজটিতে ‘তিনজন পুরুষ মাদক-সন্ত্রাসী’ ছিলেন। তিনজনই নিহত হয়েছেন।” 

শনিবারের এই হামলার আগে গত বুধবার ক্যারিবীয় সাগরে আরো একটি জাহাজে মার্কিন বাহিনীর হামলায় চারজন নিহত হন। গত সোমবার মার্কিন হামলায় নিহত হন ১৪ জন।

মাদক পাচারের অভিযোগ তুলে সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার নাগরিকসহ ৬২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া ১৪টি নৌযান এবং একটি সাবমেরিন ধ্বংস হয়েছে।

তবে নৌযানগুলো মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র এখনও দেয়নি।  ফলে হামলার বৈধতা নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু আইনজীবী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

ভেনেজুয়েলা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করেছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশটি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাতটি যুদ্ধজাহাজ, একটি সাবমেরিন, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে এবং মেক্সিকো উপসাগরে মোতায়েন করেছে আরেকটি যুদ্ধজাহাজ।

ট্রাম্প প্রশাসন মাদক চোরাচালানকারী নৌযানের ওপর তাদের হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের নৌযান সাধারণত আটক করা হয় ও ক্রুদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো নৌকা ধ্বংস করা হচ্ছে। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই অভিযানগুলোকে ‘বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ