‘ওরা ১১ জন’, চাষী নজরুল ইসলামের আরও সাড়া জাগানো ছবিগুলো
Published: 11th, January 2025 GMT
৭৩ বছর বয়সে ২০১৫ সালের আজকের দিনে মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। ১৯৫৫ সালে টাটানগরে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে প্রথম অভিনয় করেন প্রখ্যাত এই নির্মাতা। ১৯৬০ সালে ফতেহ লোহানীর সঙ্গে ‘আসিয়া’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর কাজ করেন ওবায়েদ উল হকসহ আরও অনেকের সঙ্গে। অভিনয়ও করেন কিছু ছবিতে। ১৯৭২ সালে পরিচালনা করেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছবি ‘ওরা ১১ জন’। ছবিটি দারুণ প্রশংসিত হয়। পাঁচ দশকের বেশি সময়ে চাষী নজরুল ইসলাম ৩৫টির মতো ছবি নির্মাণ করেন। এর মধ্যে ছয়টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘সংগ্রাম’, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘ধ্রুবতারা’, ‘শহীদ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দীন’, ‘দেবদাস’, ‘শুভদা’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘হাছন রাজা’, ‘শাস্তি’, ‘সুভা’ ইত্যাদি। তারপরও কয়েকটি ছবি তাঁকে অমর করে রাখবে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেসব ছবির নাম।
ওরা ১১ জন
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছিলেন নির্মাতা-প্রযোজক। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে একাত্তরের ডিসেম্বরে রণাঙ্গন থেকে অস্ত্র হাতে ঘরে ফিরেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেই অস্ত্র নিয়েই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল, বেবি, নান্টু, ওলীন, মঞ্জু, আতা, ফিরোজ, আবু, আলতাফরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রতিকূল পরিবেশে তখন সিনেমা নির্মাণ করা সহজ ছিল না। বলা যায়, দেশের প্রতি ভালোবাসার টানেই সেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন দুই বন্ধু—প্রযোজক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ও পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত গোলাবারুদও সিনেমার শুটিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছিল। সিনেমার প্রয়োজনে কয়েকজন রাজাকারকেও ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, এ টি এম শামসুজ্জামানের মতো শিল্পীরাও অভিনয় করেছিলেন সিনেমায়। সিনেমার নামকরণ নিয়ে চাষী নজরুল ইসলাম জীবদ্দশায় বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, একাত্তরে ১১টি সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন বাঙালিরা। বিষয়টি মাথায় রেখেই সিনেমার নাম রাখা হয়েছে ‘ওরা ১১ জন’। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম এ সিনেমায় ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, গেরিলাযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা তুলে আনা হয়। সেই সঙ্গে দেখানো হয়েছে দেশীয় দালালদের পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করার ঘৃণ্য ইতিহাস ও তার পরিণতি। এই ছবিতে তুলে আনা হয়েছে নারীদের বীরত্বগাথাও। মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনা নারীর আত্মত্যাগ, যুদ্ধের ময়দানে পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের চিত্র উঠে এসেছে। পরিচালক হিসেবে চাষী নজরুল ইসলামের প্রথম সিনেমা ছিল এটি; তার আগে এক যুগ ধরে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। ‘ওরা ১১ জন’ সিনেমা শুরু হয় সাইফুল ইসলামের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত ‘ও আমার দেশের মাটি’ দিয়ে। শেষ হয় সাবিনা ইয়াসমীনের ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ দিয়ে। ছবিটি মুক্তির পর ব্যবসায়িকভাবে যেমন সাফল্য পেয়েছে, তেমনি সমালোচকদের প্রশংসাও পেয়েছিল। ৫০ বছর পর নিজের সিনেমাকে নিয়ে মূল্যায়ন করতে বললে সোহেল রানা বলেন, ‘“ওরা ১১ জন” স্বাধীনতাযুদ্ধ নিয়ে ভালো ছবি নয়, কিন্তু এটা ওয়ান অব দ্য বেস্ট ডকুমেন্টারি ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। মুক্তিযোদ্ধারাই অভিনয় করেছেন, যুদ্ধের আসল গোলাবারুদও ব্যবহার করেছিলেন। ডকুমেন্টারি হিসেবে এটার তুলনা চলে না।’
‘শুভদা’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সেই আছিয়ার পরিবারকে গরু ও ঘর দিল জামায়াত
মাগুরায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে মারা যাওয়া আলোচিত শিশু আছিয়ার পরিবারকে দুটি গরু ও একটি গোয়ালঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে আছিয়ার পরিবারকে এ উপহার দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামে আছিয়ার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উপহার হস্তান্তর করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।
এ সময় জেলা জামায়াতের আমির এম বি বাকের, সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আব্দুল মতিনসহ স্থানীয় এবং জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
অপারেশনের পর শিশুর মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন, থানায় মামলা
গত ১৫ মার্চ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আছিয়ার বাড়িতে যান। তিনি শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত বিচার চান। সে সময় আছিয়ার পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে একটি গোয়াল ঘর এবং দুটি গরু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জামায়াতের আমির।
আট বয়সী আছিয়া মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ ওঠে। গত ৬ মার্চ অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। অবস্থার অবনতি হলে মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেকে সেদিন সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়া হয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দুই দিন পর ৮ মার্চ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আছিয়ার।
ঢাকা/শাহীন/রফিক