সড়ক দুর্ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তাদের দায় পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা: সড়ক উপদেষ্টা
Published: 11th, January 2025 GMT
সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে কোনো সরকারি সংস্থার দায় পেলে ওই সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরাসরি দায়ী করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, গাড়ির ফিটনেস সনদ ও চালকের লাইসেন্স না থাকার জন্য দুর্ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সরাসরি দায়ী করা হবে। এসব মৃত্যুর দায়িত্ব তাঁদের ওপর আসবে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইভাবে সড়কের কারণে হলে এর দায় পড়বে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ওপর। এমনকি পুলিশকেও দায় নিতে হবে গাফিলতির।
আজ শনিবার বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভবন পরিদর্শন ও নিরাপদ সড়ক–বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
দুর্ঘটনায় প্রাণহানির কোনো মূল্য হয় না উল্লেখ করে সড়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, এরপরও দায় স্বীকারের অংশ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
লাইসেন্স নবায়ন না করলে বাতিল
চালকের লাইসেন্স ও যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেওয়ার প্রক্রিয়া অনেক জটিল উল্লেখ করে ফাওজুল কবির খান বলেন, এখন থেকে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থাটা সহজ ও কার্যকরী করা হবে। এ জন্য প্রথমেই চালকদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সরকার চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ নবায়নের ক্ষেত্রে আগে থেকে বিআরটিএ গ্রাহককে অবহিত করবে। তখন সেখানে জানিয়ে দেওয়া হবে কত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স ও ফিটনেস নবায়ন করতে হবে। যদি ওই সময়ের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন না করা হয়, তাহলে সেটি বাতিল হয়ে যাবে।
সড়ক উপদেষ্টা জানান, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেসের বিষয়ে কী কী করতে হবে, কে করবে, কীভাবে করবে, কত দিনের মধ্যে করবে, সেটি করতে কী কী প্রয়োজন হবে, এ বিষয়ে একটি ম্যাট্রিক্স দাঁড় করানো হয়েছে। সেটা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে।
বিআরটিএর সেবা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি
বিআরটিএ সেবার উন্নতির জন্য এক মাস সময় বেঁধে দেওয়ার পর কিছুটা উন্নয়ন ঘটেছে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তবে তা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এবার দ্রুত সেবার উন্নতি না করতে পারলে সংস্থাটিকে বন্ধ করে দেওয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে এক সভায় এক মাসের মধ্যে বিআরটিএকে সেবার মান উন্নয়নে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সড়ক উপদেষ্টা। সেই সময়সীমা শেষের দিকে হওয়ায় সংস্থাটির কী উন্নয়ন হয়েছে, আজকের সভা শেষে তা উপদেষ্টার কাছে জানতে চান সাংবাদিকেরা। এর জবাবে তিনি বলেন, বিআরটিএকে এক মাসের সময় দেওয়া হয়েছিল। গ্রহণযোগ্যভাবে উন্নতি না হলেও কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
এ সময় উপদেষ্টা জানান, তিনি বিআরটিএর কাজ প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণে রাখবেন। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলমান, এটা আরও বাড়ানো হবে।
সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে। গত বছর সারা দেশে ৭ হাজার ২৯৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ হাজারের বেশি, যা এর আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যায়নি। এর দায় নিচ্ছেন তিনি।
বর্তমানে সাড়ে চার লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আটকে আছে জানিয়ে সড়ক উপদেষ্টা বলেন, আগামী মার্চের মধ্যে সেগুলো গ্রাহককে দেওয়া হবে। তিন মাসের জন্য শিক্ষানবিশ হিসেবে চালকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকে এরপর স্থায়ী লাইসেন্স নেন না। শিক্ষানবিশ লাইসেন্স তিন মাস পর স্থগিত থাকবে এবং স্থায়ী লাইসেন্স না নিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।