মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের প্রভাবে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। মিয়ানমারের সংঘাত দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে টেকনাফ স্থলবন্দরের অন্ধকার কেটে যাবে, খুব দ্রুত আলো ফিরবে। কারণ, উভয় দেশে পণ্যের চাহিদা থাকায় পুরোদমে সীমান্ত বাণিজ্য আবার সচল হবে। বর্তমান সরকার সে বিষয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

আজ শনিবার দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর পরিদর্শনে গিয়ে এ কথাগুলো বলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এইচ এম শফিকুজ্জামান। পরিদর্শনকালে তিনি স্থলবন্দরে নিয়োজিত শ্রমিক, মাঝি (শ্রমিকনেতা) ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রম আইন ও শ্রমিক অধিকারের বিষয়ে বৈঠক করেন। এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রাখা উচিত না। প্রথমে দরকার ওপারের শান্তি, সেটি হলে সীমান্ত বাণিজ্য আগের রূপে ফিরবে।

শ্রমিকদের উদ্দেশে সচিব এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘এখানে (স্থলবন্দরে) অনেক সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে পরিবহন খাত অন্যতম। পথে পথে এবং স্থানীয়ভাবে চাঁদাবাজি হতো, সেগুলো বন্ধের সময় এসেছে। তাই সবাইকে একসঙ্গে কথা বলতে হবে। কেননা ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে এক সরকার ছিল, এখন নতুন এক বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন কাজ করছে। আমরা চাই সব বৈষম্য দূর হোক।’

স্থলবন্দরে যাতে শ্রম আইন লঙ্ঘন না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে বৈঠকে সচিব এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘শ্রমিকেরা যাতে তাঁদের ন্যায্য অধিকার পান, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এই স্থলবন্দরে কোনো ধরনের ট্রেড ইউনিয়ন নেই। শ্রমিকদের সুবিধার জন্য দ্রুত ট্রেড ইউনিয়ন করায় গুরুত্ব দেন। বিশেষ করে, এখানে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় হতাহতের শিকার হন শ্রমিকেরা। আমরা তাঁদের (শ্রমিকদের) সহায়তা করতে চাই। সে ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। সেগুলো ফলো করতে হবে। তবে বন্দরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রথমে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাঁদের সবার একটা ডেটাবেজ করতে চাই।’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে মো.

সবুর হোসেন, যুগ্ম সচিব মাসুকুর রহমান, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন, স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী, ম্যানেজার সৈয়দ মো. আনোয়ার হোসেন, স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন, আমদানি-রপ্তানিকারক এনামুল হাসান, শ্রমিকনেতা আলী আজগর মাঝি প্রমুখ।

জানতে চাইলে শ্রমিকনেতা (মাঝি) আলী আজগর বলেন, ‘স্থলবন্দরে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যসেবাসহ দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।’

টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ব্যবসায়ী এনামুল হাসান। তিনি জানান, রাখাইনের মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মি দখল নেওয়ার পর টেকনাফ বন্দরে পণ্যবাহী ট্রলার আসা বন্ধ রয়েছে। আরাকান আর্মির প্রতিবন্ধকতার কারণে মিয়ানমার থেকে ট্রলার আসতে পারছে না। যার কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসানের পাশাপাশি সরকারও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের উচিত দ্রুত এটি সমাধান করা।

টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে বছরখানেক ধরে পণ্য আসা কমে গেছে। এর মধ্যে কয়েক মাস ধরে পণ্যবাহী ট্রলার আসা বন্ধ রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ