কুর্দি বিদ্রোহী সংগঠন কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ শুরু করেছেন। আজ শুক্রবার ইরাকের কুর্দি–অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলে এ অস্ত্র সমর্পণ শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে তুরস্কের বিরুদ্ধে পিকেকের প্রায় চার দশকের সশস্ত্র সংগ্রামের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। এ সংঘাতে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

পিকেকের অস্ত্র সমর্পণ উপলক্ষে সোলাইমানিয়ায় ছোট আকারের আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। ইরাকি ও কুর্দি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এ সময় তুরস্কের কয়েকজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। চলতি গ্রীষ্মজুড়ে নিরস্ত্রীকরণের এ প্রতীকী আনুষ্ঠানিকতা চলবে।

গতকাল ২০ থেকে ৩০ জন পিকেকে সদস্য তাঁদের অস্ত্র ধ্বংস করেন। কারও হাতে অস্ত্র সমর্পণ করার পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট বড় পাত্রে অস্ত্রগুলো রেখে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ধ্বংস করা অস্ত্রের মধ্যে একে-৪৭ মতো অস্ত্র ছিল।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের দেশের পায়ে পরানো রক্তাক্ত শিকল সম্পূর্ণরূপে ছিঁড়ে ফেলা ও ছুড়ে ফেলার মুহূর্ত।’ এ পদক্ষেপের ফলে পুরো অঞ্চল উপকৃত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে পিকেকের প্রতিষ্ঠাতা কারাবন্দী আবদুল্লাহ ওজালান তাঁর সংগঠনের সদস্যদের প্রতি অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান। সংগঠনটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা এবং তুরস্কের সরকারের সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিনের সংঘাতের ইতি টানারও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

অস্ত্র সমর্পণ করার পর সেগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। শুক্রবার উত্তর ইরাকের সোলাইমানিয়ায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত রস ক র

এছাড়াও পড়ুন:

একটি দল ভাবছে, চাঁদাবাজির স্বাধীনতা পেয়েছে তারা 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা জনগণের স্বাধীনতা চেয়েছি; কিন্তু একটি দল মনে করছে তারা লুটপাট, দখলদারিত্ব আর চাঁদাবাজির স্বাধীনতা পেয়েছে। এক সময় ব্যবসায়ীরা রাজনীতির ছত্রছায়ায় মাফিয়ায় পরিণত হয়েছিল। এখন সেই মাফিয়া চক্রকেই আবার সামনে আনা হচ্ছে। আমরা এই দখলদার ও দুর্নীতিবাজ রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।

‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র ১১তম দিনে গতকাল শুক্রবার রাতে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। সুন্দরবনের গুরুত্ব তুলে ধরে নাহিদ বলেন, সুন্দরবন আমাদের প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে সব সময় রক্ষা করছে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করেছে। সুন্দরবনকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।

ছাত্র-জনতা ও শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যায় ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের পরও জাতীয় নাগরিক পার্টি মাঠে রয়েছে, আগামীতেও থাকবে। ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে এক সময় যেমনি রাজপথে নেমেছিল জনগণ, তেমনি এখনও প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রয়োজনে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আবারও রাজপথে নামব।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, এখনও প্রকাশ্যে মানুষ খুন হচ্ছে। এই কি সেই জুলাই, যার স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম?

দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ব্যবসায়ীরা আগে শেখ হাসিনার সিরিয়াল ধরত, এখন ধরছে লন্ডনের সিরিয়াল। বিএনপি সেই ব্যবসায়ীদের থেঁতলে দিয়েছে। মানুষ আর এই ধোঁকাবাজি মানবে না।

এর আগে বিকেলে যশোর ঈদগাহ মোড়ে পথসভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, একটি রাজনৈতিক দল দাবি করে, তাদের নাকি কোটি কোটি মানুষের দল। এই কোটি কোটি মানুষ আমাদের দেখাবেন না। আমরা ফ্যাসিবাদের আমলে দেখেছি কত মানুষ ছিল আপনাদের। সেই মানুষেরা কত আন্দোলন গড়ে তুলেছিল! আমাদের ডাকে আবাবিল পাখির মতো সব মানুষ রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের কোটি মানুষ দেখাবেন না, ওসব আমরা দেখেছি। ইনসাফ, ন্যায় থাকলে একজন মানুষও লাখো মানুষের সমান হয়ে উঠতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন একসঙ্গে চাই। বিচার আর সংস্কার ছাড়া বাংলার জনগণ নির্বাচন মেনে নেবে না। যারা বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চায়, তারাই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখ।
আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যেকবার আন্দোলন হয়, জীবন দেয় ছাত্ররা, রক্ত দেয় ছাত্ররা আর কিছু রাজনৈতিক দল ফায়দা লোটে। এসব রাজনৈতিক দল ভেবেছিল, আন্দোলনের পর আমরা ঘরে ফিরে যাব। কিন্তু বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, বাংলাদেশকে যে সংস্কার করার স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেটা না করে আমরা ঘরে ফিরব না।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলি, আর মন খারাপ করে একটি দল। আমরা নির্বাচন কমিশনের দ্বিচারিতার কথা বলি; কিন্তু মন খারাপ করে একটি দল। আমরা 
সংস্কারের পক্ষে কথা বললে গোস্সা করে একটি দল। যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী দলে আছেন তারা গোস্‌সা হবেন না।

এর আগে দুপুরে যশোর শহরের একটি হোটেলে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে এনসিপি যশোর জেলা শাখা। সভায় বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রমুখ। সভায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ চার পরিবারের সদস্য ও আহত ১৫ জন অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ