রাশিয়ার জ্বালানি রাজস্ব আয় হ্রাস করতে এবার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র অনেক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে এবারের মতো এত কঠোর নিষেধাজ্ঞা আর কখনো দেয়নি।

এবার দুই শতাধিক কোম্পানি ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যেমন ব্যবসায়ী আছেন, তেমনি আছেন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি থেকে বিমা কোম্পানি ও শত শত তেলবাহী ট্যাংকার। আরেকটি বিষয় হলো, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম যুক্তরাজ্য সরাসরি রুশ জ্বালানি কোম্পানি গাজপ্রম ও আরও কয়েকটি কোম্পানির ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। খবর বিবিসির

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, রাশিয়ার তেল কোম্পানিগুলোকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে তাদের যুদ্ধের সক্ষমতা কমবে। পুতিনের কাছ থেকে যত রুবল কেড়ে নেওয়া যাবে, ততই তারা দুর্বল হবে।

বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি আইনে রূপান্তরিত করা হবে। এর অর্থ হলো, এসব আইন প্রত্যাহার করতে হলে ট্রাম্প প্রশাসনকে কংগ্রেসের দ্বারস্থ হতে হবে।

এখানেই শেষ নয়, এরপর কারা রাশিয়ার তেল আইনিভাবে কিনতে পারবে, সে বিষয়ে কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে যাচ্ছে তারা। এ ছাড়া মস্কোর যেসব গোপন তেলবাহী ট্যাংকার আছে, যেগুলোর মাধ্যমে তারা সারা বিশ্বে তেল সরবরাহ করে, সেগুলোর ওপরও খড়্গহস্ত হবে ওয়াশিংটন।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নতুন যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে রাশিয়ার তেল পরিবহন ও আর্থিক খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞার গেরো আরও কঠোর হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনে করছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। তিনি যাতে এই যুদ্ধের মতো বাজে কাজ আর করে যেতে না পারেন, সে জন্য তাঁকে অস্বস্তির মধ্যে রাখতে হবে; যদিও রাশিয়া ভিন্নপথে ও ভিন্ন গ্রাহকের কাছে তেল বিক্রি করে অর্থনীতি বেশ চাঙা রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্র যে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার জেরে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম গ্যালনপ্রতি তিন থেকে চার সেন্ট বাড়তে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এসব ব্যবস্থার কারণে রুশ অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে জ্যানেট ইয়েলেন উল্লেখ করেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এসব ব্যবস্থার জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার তেল বিক্রির রাজস্ব আয় হ্রাস করতে দেশটির তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এসব কর্মকাণ্ডের প্রভাব সীমিত। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, মূলত রাশিয়ার তেলের সরবরাহ হ্রাসের লক্ষ্যে এসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তেলের সরবরাহ কমলে বাজারে তার কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় সরবরাহ হ্রাসের এ উদ্যোগ তেমন একটা কাজে আসেনি।

বিশ্লেষকেরা বরং বলছেন, তেলের বাজার এখন আগের চেয়ে ভালো অবস্থায়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিল বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের তেলের উৎপাদন ও রপ্তানি এখন রেকর্ড উচ্চতায়; এ প্রবণতা অব্যাহত আছে। ফলে বাজারে রুশ তেলের সরবরাহ কমলেও তেমন প্রভাব পড়বে না।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ২০ জানুয়ারির পর ট্রাম্প প্রশাসনকে ভেবে দেখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের এসব উদ্যোগের কোনো ফল আদৌ রুশ অর্থনীতিতে পড়বে কি না।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।

মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।

সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়ন

টিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।

উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।

বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’

হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান

অবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’

হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।

জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’

জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।

চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’  

হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • ৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে