বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের শাখা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৯ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে তাঁদের অধিকতর শাস্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে সভাপতি করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মো.

আবদুল কাদির স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানা যায়। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিষয়টি প্রথম আলোকেও নিশ্চিত করেছেন।

অফিস আদেশে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা–সংক্রান্ত বিষয়ে শৃঙ্খলা বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২৩৪তম সিন্ডিকেট বৈঠকের সিদ্ধান্তে ২৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে যাচাইপূর্বক অধিকতর শাস্তির বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান, বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রেজাউল হক, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফারহান হোসেন চৌধুরী, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শিমুল মিয়া, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. হাবিবুর রহমান, বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ রাকিবুজ্জামান, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. লোকমান হোসেন, বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইউসুফ হোসেন।

এ ছাড়া অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রেদোয়ান হোসেন; সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাঈদুল ইসলাম ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তারেক হাসান; নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মো. আসিফুল ইসলাম, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ইলিয়াস সানী ও মো. আকাশ আহমেদ; পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের দুর্জয় সরকার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মো. সিয়াম খাঁ ও সজীব চন্দ্র নাথ এবং ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সৈয়দ মাজ জারদি; বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মনিরুজ্জামান, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মোজাহিদুল হক ও মো. নাফিউজ্জামান এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. ইসমাইল হোসেন; বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শুভ্র রায় শ্যাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মারুফ মিয়া; ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তৈমুর সালেহীন তাউস, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের রওফুন জাহান, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিহাব উদ্দিন ও মোজাহিদুল ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহিষ্কৃত সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্র সেন হত্যা মামলার আসামি। গত বছরের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়ে তাঁরা এখন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

চার সদস্যের তদন্ত কমিটি

এদিকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকতর শাস্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. সাজেদুল করিমকে সভাপতি করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক মোহাম্মদ এছাক মিয়া, প্রক্টর মোখলেসুর রহমান ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম।

ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক মো. এছাক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৪ জুলাই দিবাগত রাতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও হলে অস্ত্রের রাখার দায়ে তাঁদের বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নওগাঁয় স্কুলছাত্র হত্যায় দুজনের মৃত্যুদণ্ড, দুজনের ১০ বছর করে কারাদণ্ড

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় স্কুলছাত্রকে অপহরণ ও হত্যার মামলায় দুজনকে মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–২–এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি রেজাউল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন বদলগাছী উপজেলার খাদাইল গ্রামের মিশু মণ্ডল (২৫) ও পিংকি আক্তার (৩৪)। ১০ বছর কারাদণ্ড পাওয়া দুই আসামি হলেন পূর্ব খাদাইল গ্রামের হুজাইফা ও সাজু আহম্মেদ। ঘটনার সময় তাঁদের বয়স ছিল ১৪ বছর। বর্তমানে তাঁরা ১৮ বছরের বেশি বয়সী। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিত চারজনই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁদের নওগাঁ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, নিহত স্কুলছাত্র নাজমুল হোসেনের বয়স ছিল ১৪ বছর। আসামি পিংকি ছদ্মনামে নাজমুলের সঙ্গে মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর বিকেলে ফোনে ডেকে নাজমুলকে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার কেসের মোড়ে নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছালে মিশু, পিংকি, হুজাইফা ও সাজু মিলে নাজমুলকে একটি বাড়িতে আটকে রাখেন। পরদিন মুঠোফোনে নাজমুলের বাবার কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। টাকা না পেয়ে তাঁরা নাজমুলকে হত্যা করেন। নাজমুলের মরদেহ গোপন করতে মিশু প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে আক্কেলপুর রেলগেটের উত্তর পাশে একটি ডোবার মধ্যে ফেলে দেন। ঘটনার চার দিন পর সেখান থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নাজমুলের বাবা আল আমিন হোসেন ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর বদলগাছী থানায় এ ঘটনায় মামলা করেন। মামলায় মিশু মণ্ডল, তাঁর বাবা আজমল মণ্ডল, একই গ্রামের রিনা পারভীন ও সোহাগ হোসেনের নাম উল্লেখ করে আরও ছয় থেকে সাতজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে মিশু, পিংকি, হুজাইফা ও সাজুকে অভিযুক্ত করে ২০২১ সালের ৮ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। চার আসামিই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলায় ২০ সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। অভিযুক্ত দুই কিশোরের বয়স বর্তমানে ১৮ বছরের বেশি হওয়ায় তাঁদেরও নওগাঁ জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
  • নওগাঁয় স্কুলছাত্র হত্যায় দুজনের মৃত্যুদণ্ড, দুজনের ১০ বছর করে কারাদণ্ড
  • গোবিপ্রবিতে ২ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, প্রক্টর-প্রাধ্যক্ষসহ আহত ১৫
  • মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’, শিক্ষার্থীরা পাবেন ২ ক্যাটাগরিতে
  • হাবিব ও সজীবের জল্লারপাড় লেকে জমজমাট মাদক বানিজ্য
  • রাবি ছাত্রদলের কমিটি: সভাপতি-সম্পাদকসহ অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই
  • আইপিএলে কোহলিকে অধিনায়কত্ব থেকে সরাতে চেয়েছিলেন কারস্টেন
  • ভক্তের কাছ থেকে পাওয়া ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি কী করেছেন সঞ্জয় দত্ত