বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীরা যখন অবৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্বাস করেন
Published: 12th, January 2025 GMT
বিখ্যাত অনেক বিজ্ঞানীর মধ্যে নানা ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন দুনিয়া কাঁপানো বিজ্ঞানী। ফটোইলেকট্রিক প্রভাবের ওপর তাঁর কাজের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি প্রতারণা করছেন, এমন ভাবনা মাঝেমধ্যেই তাঁর মনে উঁকি দিত। পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর দুর্দান্ত অর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়কে ইম্পোস্টার সিনড্রোম বলা যায়। অনেক সময় কোনো কাজে সফল ব্যক্তিরা অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে দুর্বলভাবে, বিষয়টিকে মনস্তত্ত্বের ভাষায় ইম্পোস্টার সিনড্রোম বলে।
বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মতো অনেক নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীর মধ্যে ভ্রান্ত বিশ্বাস দেখা যায়। বিষয়টিকে ‘নোবেল রোগ’ নামেও ডাকা হয়। আবার কখনো কখনো নোবেলাইটিস নামকরণ করা হয়। অতিপ্রাকৃত, অস্পষ্ট ও অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি তাঁদের আগ্রহের বিষয়টিকে এমন নামে ডাকা হয়।
অনেক নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর মধ্যে ভুয়া তথ্য বা নকল বৈজ্ঞানিক বিশ্বাসের প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। দুইবার নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী পিয়েরি কুরি রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। চৌম্বকত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন-উত্তর অতিপ্রাকৃত শক্তির মাধ্যমে জানার সুযোগ আছে বলে তাঁর বিশ্বাস ছিল। অন্যদিকে ইলেকট্রনের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী জোসেফ থমসনের আগ্রহ ছিল মানসিক শক্তি বা সাইকির প্রতি। তিনি ৩৪ বছর ধরে সোসাইটি ফর সাইকিক্যাল রিসার্চের সদস্য ছিলেন।
১৯১৩ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল জয় করেন চার্লস রিচেট। তিনি ইক্টোপ্লাজম শব্দ প্রচলন করেন। অতিপ্রাকৃতিক ঘটনায় যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁরা এই শব্দের সঙ্গে পরিচিত। কোনো বস্তু বা ব্যক্তি থেকে আধ্যাত্মিক শক্তি বেরিয়ে আসতে এই কৌশল ব্যবহার করা হয়। এমন বিশ্বাসী কেউ চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পাবেন, তা কেউ কল্পনা করতে পারেন?
রিচার্ড স্মালি ১৯৯৬ সালে কার্বনের তৃতীয় রূপ আবিষ্কার করার জন্য রসায়নে পুরস্কার জিতেছিলেন। তিনি বিবর্তনের বিরুদ্ধে যুক্তি দেন। ক্যারি মুলিস ১৯৯৩ সালে রসায়নে নোবেল জয় করেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও এইডসে এইচআইভি ভাইরাসের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের অনেকেই সাধারণ মানুষের মতোই বিভিন্ন নকল ও ছদ্ম বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস এবং ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাসী। নকল বৈজ্ঞানিক বিশ্বাসের প্রতি অনেক বিজ্ঞানীর আগ্রহ দেখা যায়। পুরস্কার বিজয়ীদের পর্যালোচনায় গবেষকেরা জানান, বিজয়ীদের মধ্যে নানা ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক বিভ্রান্তি, ত্রুটি বা পক্ষপাত রয়েছে। নার্সিসিজম বা অন্যান্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনেক পুরস্কার বিজয়ীর মধ্যে দেখা যায়। এখনকার বিজ্ঞানীরা নন, বহু বছর আগের বিজ্ঞানী যেমন আইজ্যাক নিউটনের মধ্যে এমন আচরণ দেখা যায়। নিউটনের মধ্যে রসায়ন প্রেম ও অদ্ভুত সব ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল।
সূত্র: আইএফএল সায়েন্স
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।
ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।
১৫ দফা প্রস্তাবনা
সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।