ইকবাল হাবিবের সাক্ষাৎকার ও বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের বক্তব্য
Published: 13th, January 2025 GMT
৭ জানুয়ারি প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত ‘পান্থকুঞ্জসহ সব গণপরিসর পুনরুদ্ধারের এখনই সময়: ইকবাল হাবিব’ শীর্ষক সাক্ষাৎকারের বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’।
৭ জানুয়ারি পাঠানো বক্তব্যে গাছ রক্ষা আন্দোলন বলেছে, পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল ধ্বংস করে নির্মিতব্য ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিলের জন্য বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন ২৬ দিন ধরে ২৪ ঘণ্টা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে তাদের পরিচয় শুধু পরিবেশবাদী হিসেবে উপস্থাপন করায় আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন।
বক্তব্যে বলা হয়েছে, আন্দোলনের ২২ দিন ধরে বাপা, গ্রীন ভয়েসসহ অন্যান্য সংগঠন থেকে আমাদের সঙ্গে সংহতি জানানোর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। পরে হঠাৎ ২ জানুয়ারি বাপা ও গ্রীন ভয়েসের নেতৃত্বে দুই শতাধিক লোক আমাদের আন্দোলন স্থানে উপস্থিত হন। ২২ দিন ধরে চলা আন্দোলনে তাঁদের অনুপস্থিতির কারণ ও বাপার সহসভাপতি ইকবাল হাবিবের প্রকল্পসংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে পার্কে অবস্থানরত পাঁচজন আন্দোলনকারীর ওপর বাপার সভাপতির উপস্থিতিতে, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির ও যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে আক্রমণ চালানো হয়, যার প্রমাণ প্রথম আলোর রিপোর্টেই রয়েছে (লিংক )। আমাদের ওপর আক্রমণের এত প্রমাণ থাকার পরও এটিকে পরিবেশবাদীদের বচসা হিসেবে উল্লেখ করাকে আমরা অন্যায় বলে মনে করছি। আমরা চাই, এ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হোক।
বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের বক্তব্যে বলা হয়েছে, ইকবাল হাবিব তাঁর প্রকল্পসংশ্লিষ্টতা নিয়ে নানাবিধ ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন। তিনি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন যে তাঁরা এই প্রকল্পের ‘ইএমপি’ বা ‘এনভায়রনমেন্টাল মিটিগেশন প্ল্যান’ প্রণয়ন করার চেষ্টা করেছেন মাত্র।
কিন্তু তাঁর কোম্পানির ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যায়, তিনি ‘Architectural Acclimatization of the Piers on the Hatirjheel Area with Landscaping and Environmental Beautification for Sonargaon Interchange Alignment of Dhaka Elevated Expressway PPP Project’ শীর্ষক প্রকল্পের টিম লিডার। Landscaping এবং Environmental Beautification–এর নামে পরিবেশ ধ্বংসকারী এই প্রকল্পের জন্য পান্থকুঞ্জ পার্কের ৪৫ প্রজাতির ২ হাজার গাছ কাটা পড়েছে এবং হাতিরঝিল ভরাট করা হয়েছে। পরিবেশবিধ্বংসী এমন কর্মকাণ্ডকে এনভায়রনমেন্টাল মিটিগেশন প্ল্যান হিসেবে উপস্থাপন করার বিরোধিতা জানায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।