খারাপ বাজারেও বাড়বাড়ন্ত স্বল্প মূল্যের শেয়ার
Published: 13th, January 2025 GMT
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত, তবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার গেল ২২ ডিসেম্বর ৭ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছিল। ১৫ কর্মদিবস পর গতকাল সোমবার কেনাবেচা হয়েছে ১৫ টাকা ৭০ পয়সায়। এ সময়ে দর বেড়েছে ১২৫ শতাংশ। শুধু দর বাড়ছে বললে ভুল হবে, সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে একদিনে খুলনা প্রিন্টিংয়ের দর যতটুকু বৃদ্ধির সুযোগ ছিল, গতকাল ততটুকু বেড়েছে। যাদের হাতে শেয়ার রয়েছে, তারা এখনই শেয়ার হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না, কারণ আরও মুনাফা পাওয়ার আশা দেখছেন। ফলে বিক্রেতাশূন্য দেখা যাচ্ছে এ শেয়ারের ক্ষেত্রে। মুন্নু ফেব্রিক্স নামের কোম্পানির ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। এ কোম্পানির গত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ১ শতাংশ বা মাত্র ১০ পয়সা করে লভ্যাংশ দিয়েছিল।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তালিকাভুক্ত খুলনা প্রিন্টিং কোম্পানিকে জেড ক্যাটেগরি বা রুগ্ণ কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে। ২০২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জটি কোম্পানিটির কারখানা ও অফিস বন্ধ পেয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত সে অবস্থায় আছে। অবস্থা এমনই যে, কোম্পানির শেয়ারদর কেন বাড়ছে– এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতোও কোম্পানিটিতে কেউ নেই। এ খবরও ওয়েবসাইটে জানিয়েছে ডিএসই।
তার পরও কিছু বিনিয়োগকারী খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার কিনছেন। ফলে এর দরও বাড়ছে। শুধু এই কোম্পানি নয়, কিছুদিন ধরে এমন কিছু শেয়ারের দর বাড়ছে, যার অধিকাংশ পেনি স্টক বা স্বল্প মূল্যের শেয়ার। কারসাজির কারণে বিতর্কিত কয়েকটি শেয়ারও একই ধারায় রয়েছে।
নতুন বছরে এখন পর্যন্ত ৯ কর্মদিবসে ১০ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত দর বেড়েছে ২২ কোম্পানির শেয়ারের। এর মধ্যে পেনি স্টক ৯টি, বিতর্কিত কোম্পানির শেয়ার আরও আছে সাত থেকে আটটি।
পেনি স্টকগুলোর তালিকায় খুলনা প্রিন্টিং ছাড়াও আছে এফএএস ফাইন্যান্স, ইয়াকিন পলিমার, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, জাহীন স্পিনিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, অলটেক্স এবং অলিম্পিক এক্সেসরিজ। এ ছাড়া যেসব বিতর্কিত শেয়ারের দর বেড়েছে, সেগুলোর অন্যতম খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ, আমান ফিড, হামি, ঢাকা ডাইং, মিথুন নিটিং, জিকিউ বলপেন, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন।
শুধু নতুন বছরে দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা শেয়ারগুলোর মধ্যে ৩৬ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়ে খান ব্রাদার্স পিপির শেয়ার ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে। সর্বশেষ ১৮৯ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে এ শেয়ার। এ ছাড়া ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ দর বেড়েছে আমান ফিড, হামি (সাবেক ইমাম বাটন), এফএএস ফাইন্যান্স, ইয়াকিন পলিমার, ঢাকা ডাইং এবং ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের শেয়ার।
পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, নতুন বছরে এখন পর্যন্ত সাত কর্মদিবসে কমপক্ষে ১ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে ২৫৬ কোম্পানির শেয়ার। বিপরীতে ১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ দর বেড়েছে ৭২ শেয়ারের। এই ৭২ শেয়ারের ২৬টিই পেনি স্টক। বাকি ৬৯টির ১ শতাংশ বৃদ্ধি থেকে ১ শতাংশ পর্যন্ত পতন হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেয়ারবাজার যখন নিম্নমুখী ধারায় থাকে, তখন ভালো শেয়ারের ক্রেতা কম থাকে। এ সময় কিছু ব্যক্তি যেসব শেয়ারের ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার কম থাকে বা খুবই কম দামি, সেগুলোর দর বাড়ানোর চেষ্টা করে। তারা কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগাম জেনে এবং তাতে রং চড়িয়ে প্রচার করে, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হন। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন জানান, এটা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বহু বছরের পুরোনো ধারা। যখন ভালো শেয়ারের কদর থাকে না, তখন মন্দ শেয়ারের দাম বাড়ে। তিনি বলেন, কারসাজির একটি গ্রুপ আছে, যারা বাজার মন্দার সময় এ ধরনের শেয়ার নানা প্রক্রিয়ায় বাড়ানোর চেষ্টা করে। পতনের বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থাও শিথিলভাবে বাজার নজরদারি করে। এ সুযোগটাই কারসাজির চক্রগুলো নিয়ে থাকে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।
সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।