চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
Published: 11th, July 2025 GMT
ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) শাখা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত ৯ সদস্যের একটি কমিটির তালিকা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে ওই কমিটি গঠনের প্রতিবাদে গতকাল রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি একটি খসড়া কমিটি ছিল। আপাতত সেটি স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির নামে সহিংসতা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সিট বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। তাঁরা চুয়েটে এ ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ও রাজনীতির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে অপরাধের সংস্কৃতি আবার ফিরিয়ে আনতে চান না। ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত দেখতে চান। এখানে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম মেনে নেওয়া হবে না।
শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট চুয়েটের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য রাজনৈতিক সংগঠনে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ করে। এর পরও ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার লঙ্ঘন। তাঁরা ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবি জানান এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া তালিকা অনুযায়ী, ছাত্রদলের ঘোষিত কমিটির সভাপতি তড়িৎকৌশল বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিফ রাশেদ এবং সাধারণ সম্পাদক জৈব চিকিৎসা প্রকৌশল বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তৌফিক হাসান চৌধুরী। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন, সহসভাপতি চন্দন কুমার দাশ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তৌসিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান আল সাবিত ও সাখাওয়াত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব হোসাইন এবং প্রচার সম্পাদক আহমেদ ইনতিসার।
তবে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি খসড়া কমিটি ছিল। আপাতত সেটি স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। রাজনীতি–নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে কমিটি দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। সে জায়গা থেকে আমরা মনে করি যে কেউ যেকোনো সংগঠনের রাজনীতি করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলেই এভাবে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে আবার ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা যাতে তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সবাই একমত: আলী রীয়াজ
দেশে আবার কোনোভাবে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা যাতে তৈরি হতে না পারে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একমত। এ কথা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১১তম দিনের আলোচনার শুরুতে আলী রীয়াজ এ কথা বলেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘আমাদের সবার লক্ষ্য এক। আমরা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের কথা বলছি, যাতে করে ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ করা না হয়, সেটার কথা বলছি। নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষার কথা বলছি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলছি। এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যেন এমন ব্যবস্থা তৈরি করা যায়, যাতে এ দেশে আবার কোনোভাবে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা তৈরি না হয়, সেটি নিশ্চিত করা—এই লক্ষ্যগুলোর ব্যাপারে, উদ্দেশ্যগুলোর ব্যাপারে আমরা সবাই একমত।’
আজকের আলোচনায় প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, জরুরি অবস্থা ঘোষণা বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছিল, তবে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলী রীয়াজ বলেন, এই আলোচনা তাঁদের জাতীয় সনদ তৈরির ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। অনেকগুলো বিষয়ে একমত হওয়া গেছে। পাশাপাশি দরকার হলো, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য মৌলিক বিষয়গুলোতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। কারণ, এখানে যাঁরা আছেন, তাঁদের সবারই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক। সেগুলো বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে তাঁদের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে যতটুকু সম্ভব, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা প্রধান লক্ষ্য বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জুলাই মাসের মধ্যেই যেন আমরা এ কাজ সম্পন্ন করতে পারি।’
যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি, সেগুলো নিয়ে আবার আলোচনার মাধ্যমে একটা মীমাংসার জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘এটাই আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এর বাইরে আমাদের কারও কোনো উদ্দেশ্য নেই।’
যে বিষয়গুলোতে আগে আলোচনায় অনেক দূর পর্যন্ত অগ্রসর হওয়া গেছে, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চান বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি।