আসামি না পেয়ে মেয়ে-জামাইকে ডিবি কার্যালয়ে ১১ ঘণ্টা
Published: 13th, January 2025 GMT
খেলাপি ঋণের মামলায় পাট ব্যবসায়ীকে না পেয়ে তাঁর মেয়ে, জামাই ও ব্যবস্থাপককে ১১ ঘণ্টা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখে পুলিশ। এ সময় গোয়েন্দারা সাদা পোশাকে ছিল। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এটা আইন ও মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
নগরীর নিতাইগঞ্জ এলাকার শারমিন জুট বেলার্সের মালিক আবদুল আলী। তাঁর আইনজীবী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন জানান, আবদুল আলী নানা কারণে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কমার্স ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখায় ঋণখেলাপি হন। আদালত থেকে তাঁকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা রয়েছে। তাই তিনি পালিয়ে রয়েছেন। অন্য সম্পত্তি বেচে দেনা শোধের চেষ্টা করছেন। ঋণের বিপরীতে সম্পত্তি বন্ধক রয়েছে ব্যাংকের কাছে। তাঁর বাড়ি নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের জিমখানা এলাকায় সিটি করপোরেশনের উল্টো দিকে। পুলিশ একাধিকবার এই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে পায়নি। না পেয়ে ডিবি সোমবার ভোর ৫টায় ঢাকার বাড্ডায় তাঁর মেয়েজামাই এ টি এম পারভেজ সাজ্জাদের বাসায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে শারমিন আক্তার, তাঁর স্বামী এ টি এম পারভেজ সাজ্জাদ ও নগরীর দেওভোগের বাসা থেকে শারমিন জুট মিলের ব্যবস্থাপক জামান আহমেদকে আটক করা হয়। তাদের নগরীর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থিত ডিবি দপ্তরে আটক রাখা হয়। বিকেল ৪টায় তাদের মুচলেকা রেখে ছাড়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো পরোয়ানা নেই। পুলিশ সাদা পোশাকে কোথাও অভিযান চালাতে পারবে না বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ঢাকা দক্ষিণের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন। বাবার অপরাধে মেয়ে, জামাই ও ব্যবস্থাপককে আটক করে আনা যায় না।’
ঘটনার ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘আবদুল আলী মোটা অঙ্কের ঋণখেলাপি। তাঁকে ধরার জন্য ওপর মহলের চাপ রয়েছে। তাই তাঁর ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে এই তিনজনকে আনা হয়েছিল। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি কি জামায়াতকে চাপে রাখার কৌশলে
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপি নেতারা জামায়াতে ইসলামীকে ছাড় দিচ্ছেন না। গত চার মাসে দল দুটির নেতাকর্মীর মধ্যে অন্তত তিন জায়গায় মারামারি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ার জেরে বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। স্থানীয় নেতারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পাল্টাপাল্টি ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছেন। স্থানীয় লোকজন মনে করেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতকে চাপে রাখতেই বিএনপি এমন কৌশল নিচ্ছে।
আড়াইহাজার উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-২ আসন। এখানে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা। শনিবার নেতাকর্মী নিয়ে তিনি মাহমুদপুর ইউনিয়নের গহরদী এলাকায় যান। সেখানে বাধা দেন স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা। এ বিষয়ে তাঁর পক্ষে আড়াইহাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা জামায়াতের (উত্তর) আমির মনিরুল ইসলাম।
জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, শনিবার বিকেলে গহরদী বাদশা বাড়ি এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা। এ সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহজাহান শিকারির নেতৃত্বে ২০-২৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে পথসভায় বাধা দেন। দুই পক্ষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কি হলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। হামলায় আহত হন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, দলের কর্মী আসাদুল্যাহ, কাউসার মিয়া, আলাউদ্দিন মিয়া, ওসমান গণি, নুরু মিয়া ও আলাউদ্দিন মিয়া। মাহবুবুর রহমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
গত ১৭ মার্চ একই ইউনিয়নের কল্যান্দী মোল্লাপাড়া জামে মসজিদের সামনে জামায়াত আয়োজিত ইফতার মাহফিল বিএনপি কর্মীদের হামলায় পণ্ড হয়ে যায়। তখন জামায়াত নেতা মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করেছিলেন, ইফতারের ৪০ মিনিট আগে মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশারের নেতৃত্বে তাঁর ১০-১৫ জন অনুসারী ইফতার মাহফিলে বাধা দেন। তারা
প্যান্ডেল খুলে নিতে বললে আতঙ্কিত হয়ে জামায়াত কর্মীরা সরে যান।
এ দুই ঘটনার বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাসুম শিকারি বলেন, ‘আড়াইহাজারে জামায়াতের এমন কোনো সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে উঠেনি, তাদের নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ইফতার মাহফিল বা গণসংযোগে বাধা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নিজেরা আলোচনায় আসার জন্য তারা বিএনপিকে দোষারোপ করছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াতের কার্যক্রমে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। এরাই অতীতে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও নিরীহ মানুষদের ওপর হামলা ও নির্যাতন করেছিল। চিহ্নিত এসব আওয়ামী দোসরদের জামায়াতের কর্মসূচিতে দেখে স্থানীয় লোকজনের তোপে পড়ে দলটি। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মন্তব্য করেন।
জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, ৭ ফেব্রুয়ারি দলীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান নারায়ণগঞ্জ আসেন। এ বিষয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের টেকপাড়ায় একটি প্রস্তুতি সভা হয়। সেখান থেকে ফেরার পথে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক মোল্লার নেতৃত্বে তাদের অপদস্থ করা হয়। হামলায় অন্তত সাতজন কর্মী আহত হন। এক পর্যায়ে বিএনপির ওই নেতা এলাকায় সব কর্মসূচি পালনে জামায়াত কর্মীদের নিষেধ করেন।
সর্বশেষ হামলার পর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে শনিবার রাতে এক বিবৃতি দেওয়া হয়। দলের নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির মুহাম্মদ মমিনুল হক সরকার ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ হাফিজুর
রহমানের বিবৃতিতে দলের গণসংযোগে হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে।
এসব বিষয়ে জামায়াত নেতা অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা বলেন, বিনা উস্কানিতে তাদের নেতাকর্মীর ওপর হামলা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ
নেতারা কী অবস্থান নিচ্ছেন, তা দেখছেন তারা। ঘটনাগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহম্মেদের ভাষ্য, ‘দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে জামায়াত নেতাকর্মীর ওপর বিএনপির নেতাকর্মীর হামলার অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক নয়। আমি যতদূর জেনেছি, তাদের দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা অংশ নিচ্ছে। ফলে জামায়াতকে নিয়ে স্থানীয় লোকজনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে জামায়াতের স্থানীয় নেতারা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ছেন।’ তিনি বলেন, এরপরও যদি দলের কোনো নেতাকর্মী জামায়াতের কর্মসূচিতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটান, তাহলে খোঁজখবর নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেবেন।