বিদায়বেলায় নিজের প্রশাসনের বৈদেশিক নীতির পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘এ চার বছরে আমরা সংকটের মুখোমুখি হয়েছি, আমাদের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। আমি মনে করি, আমরা যে অবস্থায় পরীক্ষা শুরু করেছিলাম, তার চেয়ে শক্তিশালী রূপে বের হয়ে এসেছি।’

গতকাল সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ভাষণে বাইডেন এসব কথা বলেন। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এটিই ছিল বাইডেনের শেষ ভাষণ।

ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘আমরা একটি বাঁকবদলের মুখে দাঁড়িয়ে আছি। শীতলযুদ্ধ–পরবর্তী যুগের অবসান হয়েছে। একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। সামনের মাস ও বছরগুলোতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। তবু এটা স্পষ্ট, আমার প্রশাসন পরবর্তী প্রশাসনকে খুব শক্তিশালী অবস্থানে রেখে যাচ্ছে।’

বাইডেন নিজ প্রশাসনের প্রশংসা করলেও সমালোচকেরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর প্রশাসনকে খুব কমই নম্বর দিয়েছেন, বিশেষ করে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে যাওয়া নিয়ে।

বাইডেন বলেন, তিনি যখন হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেছিলেন, সেই সময়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র এখন বেশি শক্তিশালী এবং শত্রুরা এখন বেশি দুর্বল। তিনি দাবি করেন, ‘আমরা এমন এক আমেরিকাকে রেখে যাচ্ছি, যার বেশি বন্ধু ও শক্তিশালী জোট রয়েছে। শত্রুরা আরও দুর্বল হয়েছে এবং বেশি চাপে রয়েছে। এমন এক আমেরিকা রেখে যাচ্ছি, যা আবার নেতৃত্ব দিচ্ছে, দেশগুলোকে (মিত্রদের) একত্র করছে, এজেন্ডা ঠিক করছে এবং নিজস্ব পরিকল্পনা ও লক্ষ্যের পেছনে অন্যদের জড়ো করছে।’

ট্রাম্প এবারের নির্বাচনী প্রচারের সময় বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির কড়া সমালোচনা করেছিলেন। ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ দিয়ে ডেমোক্র্যাটরা বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দ্রুত দুর্বল করছেন।

কিন্তু সোমবার বাইডেন ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাত, অর্থনীতি ও চীনের বিপরীতে মার্কিন কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে।

রাশিয়া আক্রমণ করার পর ইউক্রেনের জন্য ন্যাটোর সমর্থন জোগাড় করতে তাঁর প্রশাসন যে ভূমিকা রেখেছে, সেটিরও প্রশংসা করেছেন বাইডেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া।

আফগানিস্তানে যুদ্ধ রেখে যাচ্ছি না

২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার নিয়ে যে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তার পক্ষেও সাফাই গেয়েছেন বাইডেন।

বাইডেন নয়, বরং ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে চূড়ান্ত সেনা প্রত্যাহারের সময় ক্ষমতায় ছিলেন বাইডেন।

বাইডেন বলেন, ‘আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি কয়েক হাজার সেনাসদস্যকে আফগানিস্তানে রাখার কোনো কারণ দেখিনি।’ বাইডেন আরও বলেন, তিনিই কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি উত্তরসূরির জন্য কোনো যুদ্ধ রেখে যাচ্ছেন না আফগানিস্তানে।

যুদ্ধাপরাধী স্লোগান

বাইডেন ভাষণে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন নিয়ে যা বলেছেন, সেখানকার পরিস্থিতি তার চেয়েও গুরুতর ও উদ্বেগজনক। তিনি যখন ভাষণ দিতে আসছিলেন, তখন বাইরে বিক্ষোভকারীরা ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

সমালোচকদের অভিযোগ, (গাজা যুদ্ধ শুরুর পর) ইসরায়েলকে ওয়াশিংটনের সামরিক সহায়তা দিয়ে যাওয়া বিদেশের মাটিতে নৃশংসতাকে সমর্থন দেওয়ার শামিল।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৫৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় ইসরায়েল যা করছে, সেটা গণহত্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

গাজা যুদ্ধের প্রথম বছর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে প্রায় ১ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে এবং এখনো তহবিল দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাইডেন গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে যেভাবে নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন ও সহায়তা করে গেছেন, সেটা তাঁর ভাবমূর্তিতে স্থায়ী দাগ ফেলেছে।

ভাষণে বাইডেন তাঁর গাজায় যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন। গত বছর জুনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ওই পরিকল্পনা অনুমোদন পায়। কিন্তু এখনো কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি।

আরও পড়ুনশেষ ২ মাসে কী করবেন বাইডেন১২ নভেম্বর ২০২৪

বাইডেন বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমার দেওয়া একটি প্রস্তাব এখন চুক্তিতে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। অবশেষে তা বাস্তবায়িত হতে চলেছে।’ তিনি এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছেন বলেও জানান। বাইডেন আরও বলেন, শিগগিরই তিনি মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলবেন।

বাইডেন বলেন, ‘অনেক বছর ধরে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি শিখেছি, কখনো, কোনো অবস্থায় আশাহত হতে নেই।’

গাজা পরিস্থিতি নিয়ে বাইডেন বলেন, ‘অনেক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, অনেক সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনি জনগণের শান্তি প্রাপ্য।’ এদিন চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ নিয়েও কথা বলেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মাইক্রোসফটের বদলে গুগলের সার্ভার ব্যবহার করবে চ্যাটজিপিটি, কেন

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের অন্যতম বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মাইক্রোসফট। আর তাই চ্যাটজিপিটি চালুর পর থেকেই মাইক্রোসফটের সার্ভার ব্যবহার করে আসছে ওপেনএআই। তবে এবার মাইক্রোসফটের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমাতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির দৌড়ে গুগল ও ওপেনএআই দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও চ্যাটজিপিটির কার্যক্রম পরিচালনায় গুগলের ক্লাউড অবকাঠামো ও সার্ভার ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে ওপেনএআই।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চ্যাটজিপিটির মতো জেনারেটিভ এআই মডেল পরিচালনার জন্য গত মাসে গুগলের সঙ্গে চুক্তি করেছে ওপেনএআই। চুক্তির আওতায় গুগল তাদের ডেটা সেন্টার ও ক্লাউড সেবায় ‘অতিরিক্ত কম্পিউটিং সক্ষমতা’ দেবে ওপেনএআইকে। যদিও দুই প্রতিষ্ঠান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি ভবিষ্যতের এআই উন্নয়ন ও নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

চ্যাটজিপিটি মূলত মাইক্রোসফটের অ্যাজুর ক্লাউড অবকাঠামোর ওপর নির্ভর করে পরিচালনা করা হয়। তাই ওপেনএআই এত দিন অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সার্ভার ব্যবহার করতে পারেনি। গত জানুয়ারি মাসে এই একচেটিয়া চুক্তির সীমাবদ্ধতা শেষ হওয়ার পর ওপেনএআই নতুন অংশীদার খুঁজতে শুরু করে। তবে চ্যাটজিপিটি পুরোপুরি গুগলের সার্ভার ব্যবহার করবে, না মাইক্রোসফট ও গুগলের সার্ভার যৌথভাবে ব্যবহার করবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চ্যাটজিপিটি বড় ধরনের প্রযুক্তিগত বিভ্রাটের মুখে পড়েছে। আর তাই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট অবকাঠামোর ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে একাধিক ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করলে চ্যাটজিপিটির কার্যক্রম চালু রাখা অনেক সহজ হবে। এতে যেকোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা সিস্টেম সমস্যার ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগও মিলবে।

সূত্র: অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ