ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং থ্রেডস অ্যাপের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া তথ্য মোকাবিলায় তথ্য যাচাইকরণের সঙ্গে জড়িত পেশাদার সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে আসছে। তবে সম্প্রতি তৃতীয় পক্ষের (থার্ড পার্টি) ফ্যাক্টচেকিং ব্যবস্থা বন্ধ ও কনটেন্ট মডারেশন নীতি শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ। মেটার নীতিগত এ পরিবর্তন ঘোষণার পরপরই ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, মেটার তথ্য যাচাই নীতির পরিবর্তন আনতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্কের (আইএফসিএন) আওতাধীন ৭১টি প্রতিষ্ঠান মার্ক জাকারবার্গকে খোলা চিঠি পাঠিয়েছে।

চিঠিতে আইএফসিএনের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো মেটার তথ্য যাচাই নীতি পরিবর্তনের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, তথ্য যাচাই হলো প্রমাণভিত্তিক আলোচনা ও যৌথ বাস্তবতা বজায় রাখার মূল ভিত্তি। বিশ্বজুড়ে এর গুরুত্ব অপরিসীম। আর তাই, মেটার নতুন এ উদ্যোগ প্রতিদিন কোটি কোটি ব্যবহারকারীর সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার পথ সংকুচিত করবে। মেটার তহবিলের ওপর নির্ভরশীল ছোট তথ্য যাচাইকরণ সংস্থাগুলোও আর্থিক সংকটে পড়বে।

আরও পড়ুন গুগল সার্চে হঠাৎ ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম মুছে ফেলার উপায় খোঁজার প্রবণতা বাড়ছে কেন১১ জানুয়ারি ২০২৫

বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির ভিন্নতা থাকায় মেটা বর্তমানে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। তবে মেটার নতুন ঘোষণার আওতায় পেশাদার ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর বদলে ক্রাউডসোর্সড মডারেশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। ইলন মাস্কের এক্স (সাবেক টুইটার) এর ‘কমিউনিটি নোটস’ মডেলের অনুরূপ এ ব্যবস্থায় ব্যবহারকারীরাই পোস্টের সত্যতা যাচাইয়ে মতামত দিতে পারবেন। মেটার দাবি, এই পদক্ষেপ তথ্য যাচাইয়ে স্বচ্ছতা ও ব্যবহারকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াবে।

আরও পড়ুন মার্ক জাকারবার্গের করা সবচেয়ে বড় ভুল কোনটি জানেন১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সমালোচকদের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর সাধারণ ব্যবহারকারীদের দিয়ে তথ্য যাচাই করানোর এ উদ্যোগ পেশাদার তথ্য যাচাই করণকারীদের দক্ষতা ও নির্ভুলতার অভাব পূরণ করতে পারবে না। এর ফলে মিথ্যা তথ্য মোকাবিলায় গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। আর তাই পেশাদার তথ্য যাচাইকারী ও ব্যবহারকারীদের মতামতের সমন্বয়ে একটি যৌথ ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ