হাঁসের সঙ্গে বিন্নিভাত খেয়েছেন কখনো
Published: 14th, January 2025 GMT
নারকেল হাঁসভুনা ও বিন্নি ভাত
উপকরণ
হাঁস ২ কেজি, কাঁচা মরিচ ৫-৬টি, টমেটোর টুকরা ২-৩টি, পেঁয়াজবাটা আধা কাপ, রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, আদাবাটা ২ টেবিল চামচ, বাদামবাটা ১ টেবিল চামচ, পোস্তবাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা জিরাবাটা ১ টেবিল চামচ, ধনেবাটা ২ টেবিল চামচ, লাল শুকনা মরিচের বাটা ২ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া ২ চা-চামচ, গোলমরিচের বাটা ১ চা-চামচ, জোয়ানবাটা আধা চা-চামচ, মেথিবাটা ১ চা-চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ, ছোট এলাচি ৫-৬টি, দারুচিনি ২-৩টি, লবঙ্গ ৫-৬টি, তেজপাতা ৪-৫টি, শর্ষের তেল আধা কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল একটির অর্ধেক (টুকরা করা)।
প্রণালি
হাঁস চামড়াসহ ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। মসলাগুলো শিলপাটায় পিষে নিতে হবে। নারকেল, কাঁচা মরিচ ও টমেটো ছাড়া বাকি উপকরণ একসঙ্গে মাংসের সঙ্গে ভালো করে মেখে নিন। পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। মাঝেমধ্যে নেড়ে দিতে হবে। পানি টেনে ঝোল ঘন হয়ে মাখা মাখা হয়ে এলে কাঁচা মরিচ, টমেটো দিয়ে নামাতে হবে।
বাগারের উপকরণ
সয়াবিন তেল সিকি কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ কয়েকটি।
প্রণালি
অন্য ফ্রাই প্যানে প্রথমে তেল ও ঘি দিয়ে পেঁয়াজ বেরেস্তা করে নিতে হবে। এরপর কাঁচা মরিচ দিন। হাঁসের মাংসে বাগার দিয়ে দিন। আরেকবার নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন।
আরও পড়ুনবিরিয়ানিতে পড়ল হাঁস, বদলে গেল পুরো স্বাদ০৭ জানুয়ারি ২০২৫বিন্নি ভাতের উপকরণ
বিন্নি ধানের চাল ১ কেজি, তেজপাতা পরিমাণমতো, দারুচিনি কয়েকটি, লবণ পরিমাণমতো, কোরানো নারকেল একটি।
প্রণালি
বিন্নি চাল ধুয়ে ৫-৬ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সব উপকরণ মেখে ভাপে (ডাবল বয়লার) রান্না করে গরম হাঁস ভুনার সঙ্গে পরিবেশন করুন।
আরও পড়ুনদেখুন হাঁসের নাগা রোস্টের রেসিপি১০ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চা শ্রমিকদের ক্লান্তি দূর করে ‘পাতিচখা’
চায়ের সবুজ বাগানে গাছ থেকে পাতা কুঁড়ি তোলার কাজ সবচেয়ে বেশি করেন নারী শ্রমিকরা। রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে চায়ের বাগানের টিলায় পাতা কুঁড়ি সংগ্রহ করতে হয় তাদের।
ক্লান্ত দুপুরে নিজ হাতে তৈরি ‘পাতিচখা’ বা কাঁচা চা পাতির ভর্তা খেয়ে দুর্বল স্নায়ুকে আবার সবল করেন তারা। এরপর আবারো শুরু করেন কর্মযজ্ঞ। পড়ন্ত বিকেলে ওজন ধারের কাছে তোলা পাতার হিসাব দিয়ে ঘরে ফেরেন এই নারীরা।
চা সংশ্লিষ্টরা জানান, চায়ের কাঁচা পাতায় রয়েছে ক্যাফেইন নামক উপাদান। হাতের মলায় ক্যাফেইন তৈরি হয়। যা খেলে শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। পাতিচখা বা চা পাতির ভর্তা চা শ্রমিকদের প্রিয় খাবার। দুপুর হলেই তারা গাছের ছায়ায় গোল হয়ে বসে চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে চা পাতার কচি কুঁড়ি দিয়ে হাতের তালুতে ডলে তৈরি করেন পাতিচখা।
আরো পড়ুন:
পিয়াইন নদীতে নিখোঁজ বালু শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার
গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগান গিয়ে শ্রমিকদের পাতিচখা খাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে।
কথা হলে চা শ্রমিকরা জানান, নারী শ্রমিকদের সর্দারনি সবার কাছ থেকে রুটি, পেঁয়াজ, মুড়ি, রসুন, চানাচুর, সিদ্ধ আলুসহ পাতিচখার উপকরণ সংগ্রহ করেন। একটি পাত্রে সব উপকরণ জমা করে সব শেষে চা পাতার কচি কুঁড়ি হাতের তালুতে ডলে সবাই মিলে তৈরি করেন পাতিচখা। সর্দারনি আবার সকলের হাতে হাতে তা বন্টন করেন।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগানের নারী শ্রমিক বাসন্তি মুন্ডার বলেন, “আমরা ক্লান্তি দূর করার জন্য পাতিচখা খাই। এটা আমাদের নিজস্ব খাবার।”
বসন্তি মুন্ডার কাছে বসে থাকা অপর নারী শ্রমিক সুমা কর্মকার বলেন, “ক্লান্ত দুপুরে গাছের শান্ত ছায়ায় বসে আমরা পাতিচখা খেয়ে কাজে যায়। আমরা এ থেকে শক্তি পাই।”
বাগানের শ্রমিক উর্মিলা তাপসী বলেন, “আমাদের দুপুরের নাস্তা পাতিচখা খেলে শক্তি আসে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, চা জনগোষ্ঠীর আদি পেশা হলো কৃষি। কৃষি কাজ করে তাদের জীবন চলত। ১৮৪০ সালের দিকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে চায়ের চাষ বৃদ্ধি পায়। কর্মক্ষেত্র ক্লান্তি দূর করায় চায়ের কদর বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রথম কর্ণফুলী চা বাগানের মাধ্যমে চায়ের চাষাবাদ শুরু হয়। মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকূলে থাকায় সিলেট ও চট্টগ্রামে চা বাগান গড়ে ওঠে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চা গাছ পরিচর্যার জন্য এখানে শ্রমিক আনা হয়। কাজের ক্লান্তি দূর করার জন্য মধ্যাহ্ন বিরতিতে রুটি খাওয়া ছিল তাদের পুরানো প্রথা। মনের খেয়ালে চা-গাছের কচি পাতা হাতের তালুতে ডলে রুটির সঙ্গে খেতে শুরু করেন তারা।
শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে তারা দুপুরে রুটির সঙ্গে চায়ের কচি পাতা খাওয়ার প্রথা শুরু করেন। এর সঙ্গে যোগ হয় চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদান। শ্রমিকদের ভাষায় চাপাতি ভর্তা। এর বর্তমান নাম পাতিচখা।
চা বাগানের শ্রমিকদের সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাগানে কাজ করতে হয়। দুপুরে ঘরে ফেরার সুযোগ নেই তাদের।
কথা হলে করিমপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা জাবেদ খান বলেন, “নারী শ্রমিকরা দুপুরে খাবার জন্য দুইটি রুটি সঙ্গে নিয়ে যান। এর সঙ্গে যোগ হয় চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, চায়ের কচি পাতা রসুন, পেঁয়াজসহ অন্যান্য উপাদান। ভর্তা খাওয়ার প্রথা আদিকাল থেকে চলে আসছে।”
ওই চা বাগানের সাবেক পঞ্চায়েত সভাপতি ৮০ বছর বয়সী কতুব আলী বলেন, “পাতিচখা এটি আদিকাল থেকে চলে আসছে। নাস্তা খাওয়ার পর শরীরে এনার্জি আসে, সেটি খেয়ে আবার কাজে মন দেন শ্রমিকরা।”
ঢাকা/মাসুদ