অতিমারি করোনার অভিঘাতের পর থেকে সরকারের সব ধরনের ব্যয়ে সাশ্রয়ী নীতি নেওয়া হয়। এ কারণে প্রায় তিন বছর ধরেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তেমন গতি নেই। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বাস্তবায়নাধীন সব প্রকল্প পর্যালোচনা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রকল্প বাদ দেওয়া হচ্ছে। আবার কিছু প্রকল্পের পরিচালক পালিয়ে গেছেন। সরকার পতনের আন্দোলনে অবরোধসহ রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ বন্ধ ছিল। 
এমন বাস্তবতায় জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে এডিপির বাস্তবায়ন এক রকম স্থবির হয়ে পড়ে। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বিভিন্ন  ব্যয় কম হয়েছে ১১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। অবশ্য একক মাসের হিসাবে গত ডিসেম্বরে আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ব্যয় ৯০৬ কোটি টাকা বেশি হয়েছে। 
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এ-সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, গত ছয় মাসে এডিপির বিভিন্ন প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার ২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয়ের এ পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে বাস্তবায়নের হার ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। 

আইএমইডির প্রতিবেদন বলছে, গত ছয় মাসের বাস্তবায়নের হার গত ৫ অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। একক মাসের হিসাবে সমাপ্ত ডিসেম্বরে ব্যয় হয় ১৫ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। গত বছরের একই মাসে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। বাস্তবানের হার ৫ দশমিক ৪২ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। 
চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ১ হাজার ৩২৭টি প্রকল্প, ১৭টি উপপ্রকল্প ও উন্নয়ন সহায়তা থোক হিসাবে ৯টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পের বিপরীতে মূল এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ ১৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রকৃত এডিপির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। 
জানা গেছে, বাস্তবায়নে ধীরগতি, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দেওয়া ইত্যাদি কারণে সংশোধিত এডিপিতে ৪৯ হাজার কোটি টাকা ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। অর্থাৎ এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। 
আইএমইডির  প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ছয় মাসে বিদেশি ঋণ সহায়তা অংশে খরচের খাতা খুলতে পারেনি তিনটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। তারা হচ্ছে– গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং জননিরাপত্তা বিভাগ। এর বাইরে অন্তত ১১টি মন্ত্রণালয় রয়েছে, যাদের গত ছয় মাসে বিদেশি ঋণের উৎসের ব্যয়ের পরিমাণ ৮ শতাংশের মধ্যে সীমিত রয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র র পর ম ণ র একই দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • কমপ্লায়েন্সের অভাবে ধুঁকছে চামড়া খাতের রপ্তানি
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ